ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রক্তাক্ত সিডনি বাতিল সফর ও ফিরে দেখা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৪ অক্টোবর ২০১৫

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রক্তাক্ত সিডনি বাতিল সফর ও ফিরে দেখা

অফিস থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। যদিও ঘড়ির কাঁটায় ইভিনিং, বাইরে বেরিয়ে তা বোঝার উপায় নেই। সামার আসন্ন সিডনিতে। এখন রোদ ঝলমলে দিনের সূর্য অস্ত যাবে রাত সাতটা-আটটায়। ঘরে ঢুকেই শুনি প্যারাম্যাটা এলাকায় শূটিং-এ দু’জনের প্রাণহানি ঘটেছে। টিভিতে খবর দেখে চমকে ওঠার প্রথম কারণ ছিল জায়গাটা। এই সেদিনও ওই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরতাম। গত মাসেও চাকরি বদলানোর আগের দিন ওই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরেছি। মূলত সুনসান জায়গা। পুলিশের দফতরটিও ওখানে। আশ্চর্যজনকভাবে পুলিশ দফতরের সামনেই খুন হয়ে গেল দু’জন মানুষ। এসব দেশে এমন ঘটনা আকছার ঘটে না। এ তো আর আমাদের দেশ নয়। আমাদের মতো জীবন সস্তা নয় অতটা। আইনশৃঙ্খলা আর নিয়মের বলে বলীয়ান সমাজে ও দেশে এমন ঘটনা অনভিপ্রেত। কিন্তু ঘটতেই পারে। আর ঘটল এমন এক সময়ে, যখন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল নিরাপত্তার অভাবে বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে। একেই কি বলে নিয়তি? না সময়ের উত্তর? আমরা কোন দেশ বা সমাজে এমন ঘটনা প্রত্যাশা করি না। বিশেষত একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হিসেবে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই তা চাই না। কিন্তু ঘটনা কি সব সময় আইনের হাতে থাকে? নাকি পুলিশ বা সরকার চাইলেই তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে? আজ এই দুর্ঘটনার জন্য কি ভারতের আসন্ন সফর বাতিল করা উচিত? বিশেষত যে জায়গায় ঘটনাটা ঘটেছে তার অনতিদূরেই ভারতীয়দের আড্ডা। মিনি ইন্ডিয়া বানিয়ে রাখা জায়গাটির পাশে এত বড় দুর্ঘটনার পরও এমন কোন কুপ্রস্তাব বা নিষেধাজ্ঞার কথা উঠবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ আর রাজনীতি ভঙ্গুর বলেই কি তার প্রতি এই নির্দয় মনোভাব? একথা বলি না যে, ঢাকা আর সিডনির পরিবেশ এক। বরং আকাশ জমিন তফাত। কিন্তু ঘটনা-দুর্ঘটনার চেহারা যখন এক তখন দু’দেশের বেলায় দু’রকমের আচরণ কি একযাত্রায় পৃথক ফল নয়? এই ডবল স্ট্যান্ডার্ডই আমাদের মূল প্রতিবাদের জায়গা। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের আসর আছে, এটা হয়ত অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশ কি বয়কট ডিজার্ভ করে? যেখানে এদেশে নারী প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা নারী, বিএনপি নেতাও যে দেশে নারী সে দেশকে সামনে এগোতে দেয়ার দায়িত্ব কি করে এড়ায় সভ্য মানুষেরা? কি করে তারা জঙ্গীবাদের অজুহাতে শুদ্ধ হতে চাওয়া একটি জাতিকে পেছনে ফেলে রাখতে চায়? যারা বলে বিশ্বে তারা গণতন্ত্র চায়, যারা চায় আমাদের মতো দেশের মানুষ সংস্কার-উগ্রতা আর ঝামেলামুক্ত থাকুক, তারা কি করে অজুহাত খাড়া করে সফর বাতিল করল? আমার মতো মানুষের মাথায় তা ঢোকে না। সিডনির এই দুর্ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ার সামাজিক পরিবেশে ভীতির সঞ্চার হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে জীবন থেমে থাকবে না। একটা মাত্র তফাত দেখি, আমাদের দেশে ঘটনার বিচার হয় না। বিচার হলেও শাস্তি হয় না। রাজনীতি তা হতে দেয় না। এসব দেশে বিচার ও প্রতিবিধান নিশ্চিত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশকে কোণঠাসা বা ভয়ের মুখে রেখে নিজেদের গৌরব বা অহঙ্কার বাড়ানো যাবে। যাবে না যে তার একটা প্রমাণ আজই দেখলাম আমরা। অনভিপ্রেত এই দুর্ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী জানা যায়নি এখনও। তবে এ ঘটনা চোখ খুলে দিলেই আমরা খুশি হব। সব দেশে সব সমাজে সব জাতিতে দুষ্টচক্র আছে। অপরাধপ্রবণ মানুষ আছে। তারা যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে। সেজন্য পুরো জাতি বা দেশকে কোণঠাসা করাটা অন্যায়। সেটা কি দেখলাম না আমরা আজ?
×