ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

জীবনের শেষ শিক্ষাসফর

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৪ অক্টোবর ২০১৫

জীবনের শেষ শিক্ষাসফর

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের লেভেল-৫, সেমিস্টার-১ এর শিক্ষার্থীরা সাতদিন হারিয়েছিলাম সিলেটের চা বাগান, জাফলং, মাধবকু-ের ঝরনা, বান্দরবানের উঁচু উঁচু পাহাড় আর কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে। হ্যাঁ, আমাদের শিক্ষা জীবনের শেষ শিক্ষা সফরের কথা বলছি। তারিখটা ৩০ আগস্ট, রাত আটটা; আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন সংলগ্ন কে আর মার্কেটে অপেক্ষা করছি। একটু পরই অনুষদের সবাই দুটি গাড়িতে করে রওনা হব। টানা সাতদিন গাড়ি ভ্রমণ, নানান জায়গার নানান খাবার, নতুন নতুন পরিবেশ, নতুন নতুন মানুষ এসব নানমুখী দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয়নি অনেকেরই। তারপরও আমরা সবাই হাসিমুখেই যাচ্ছি- কারণ এতদিন সুন্দর সুন্দর যেসব জায়গার কথা শুধু শুনে এসেছি সেগুলো স্বচোক্ষে, স্বশরীরে দেখতে যাচ্ছি। আমরা ছিলাম ৫৬ জন, সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক ড. সামছুল আলম ভূঞা, ড. মোছলেহ উদ্দিন আহাম্মদ এবং মো. বদরুজ্জামান সরকার। প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সরাসরি সিলেট। সিলেটে পৌঁছে কোন এক হোটেলে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে প্রকৃতিকন্যা হিসেবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং এ। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তেরর ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ে গহীন অরণ্য ও শুনশান নীরবতার কারণে এলাকাটি আমাদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। প্রকৃতিকন্যা ছাড়াও জাফলং বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট, সৌন্দর্যের রানী- এসব নামেও ব্যাপক পরিচিত। পরদিন বাংলাদেশের বৃহত্তম একমাত্র প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মাধবকু- ইকোপার্ক। সুবিশাল পর্বত গিড়ি, শ্যামল সবুজ বনরাজি বেষ্টিত ইকোপার্কে প্রবীণ, নবীন, নারী-পুরুষদের উচ্ছ্বাস অট্টহাসি আর পাহাড়ি ঝরনার প্রবাহিত জলরাশির কল কল শব্দ স্বর্গীয় ইমেজের সৃষ্টি করে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বন্য বানর ও কীটপতঙ্গের অচেনা সুর লহরী শিল্পী, সাহিত্যিক, গবেষক ও ভ্রমণ পিপাসুদের মনে এন দেয় এক অনাবিল আনন্দ। সুউচ্চ পাহাড় শৃঙ্গ থেকে শুভ্র জলরাশি অবিরাম দ্রুত গতিতে গড়িয়ে পড়ছে। পানি পতনের স্যাঁ স্যাঁ শব্দ অর্ধ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সিলেটে ঘোরাঘুরি শেষ করে ১ সেপ্টেম্বর বন্দরনগরী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা। রাত ৩টায় ক্লান্তি চোখে নিয়ে চট্টগ্রামের যুব উন্নয়ন ভবনে থাকি আমরা। পরদিন ২ সেপ্টেম্বর, খুব ভোরে বান্দরবানের উদ্দেশে যাত্রা করি আমরা। বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, স্বর্ণমন্দির, চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি ঘুরে সাঙ্গু হোটেলে থাকি আমরা। আর এসব ঘুরেছি আমরা সেখানকার বিশেষ যানবাহন চান্দের গাড়িতে উঠে। এরপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত দেখতে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা করি আমরা। সেখানে সাগরে ঢেউয়ের তালে খেলা করে, আর ইনানী বিচে সূর্য ডুবতে দেখে আরও একদিন কাটিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে ফিরে আসি আমরা। টানা সাতদিন শুধু গাড়ির শব্দ, ক্ষুধার কষ্ট আর ঘুমের সমস্যা আমাদের অনেকটাই ক্লান্ত করে ফেলেছিল। কিন্তু সফরের শেষদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসার পথেও থেমে থাকেনি আজহার, মিনার, নাহিদ, মুন্নী, পাপ্পু, রোমান, লিখি, নিপা, রাকিব, তপন, জয়া, জান্নাত, তৌহিদ, শর্মী। পথভরে এদের নাচ-গান ক্লান্তিকেও হার মানিয়েছিল। ভালই ছিলাম সাতদিন। নিঃসন্দেহে এই দিনগুলো আমাদের সকলের হৃদয়ের ফ্রেমে ছবি হয়ে বাঁধানো থাকবে সারাটা জীবন। কয়েক বছর পরই সবাই চাকরি আর নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে কিন্তু শত ব্যস্ততার মাঝেও সবাইকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাতদিন হাতছানি দিয়ে পিছু ডাকবে। আশিফুল ইসলাম মারুফ
×