ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝাউবনের পাতা থানকুনি

বয়স যতই হোক যৌবন থাকবে অটুট, বাড়বে ত্বকের জেল্লা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ অক্টোবর ২০১৫

বয়স যতই হোক যৌবন থাকবে অটুট, বাড়বে ত্বকের জেল্লা

সমুদ্র হক বয়স যতই বাড়ুক যৌবন ঠিকই থাকবে। শারীরিক গঠন দেখে বয়স অনুমান করা যাবে না। ত্বকের জেল্লা বাড়বে, ভাঁজ থাকবে না। ঔজ্জ্বল্য একেবারে ঝকঝকে রইবে। এভাবে বয়স চুরি করে তারুণ্যের মতো দেখাবে ঠিকই তবে নিয়ম মেনে স্ট্যামিনা ঠিক না রাখলে এবং কাজ না করলে কেউ সুন্দর গাধাও বলতে পারে। মানুষের যৌবন ধরে রাখার জন্য কোন ওষুধের দরকার নেই। ত্বক টান করে রাখার জন্য কোন প্লাস্টিক ও কসমেটিক সার্জারির চিকিৎসকের কাছে যাওয়ারও দরকার নেই। যা প্রয়োজন তা সকলের নাগালের মধ্যেই আছে। শুধু চিনে নেয়া। আশপাশে কোন জঙ্গলে ও ঝোঁপঝাড়ের দিকে খেয়াল করলেই মিলবে সবুজ এক ধরনের পাতা। ঝাউবন থেকে ছিঁড়ে আনলে বিনে পয়সাতেই মেলে। হাটবাজারে কিনতে পাওয়া যায়। ঝাউবনের এই পাতার নাম থানকুনি। প্রবীণরা থানকুনি পাতার কথা শুনলে এখনও লাফিয়ে উঠে জানতে চান কোথায় আছে। এমন একটি ঔষধি পাতার ছোট বৃক্ষ আয়তনে অবহেলায় হারিয়েই যাচ্ছে। থানকুনি পাতার কদর না জানায় অনেককে কম বয়সে বয়স্কদের মতো দেখায়। পথ চলতে কোন কারণে তাদের ‘আঙ্কেল বা আন্টি’ ডাক শুনতে হয়। কোন তরুণকে যদি কেউ এমন করে ডাকে তাহলে তার মেজাজ কতটা তিরিক্ষে হয়ে ওঠে তা বয়স্ক ভোক্তারা জানেন। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রাকিবুল ইসলাম। বয়স প্রায় ৪২। শারারিক গঠনে মনে হবে ৬০ ছুঁয়েছে। বাজারের দোকানি, রিকশা চালক, শপিং মলে, আধুনিক বিপণি কেন্দ্রে কেউ তাকে আঙ্কেল ডাকলে দাঁত কটমটিয়ে তাকান। রেগে লাভ নেই। তার ত্বকে জেল্লা নেই। লাবণ্য নেই। মাথায় চুল উঠে কিছুটা জায়গা অনাবাদী হয়েছে। অনেকটা টাক পড়লেও চিরুনি অথবা হেয়ার ব্রাশ সঙ্গে থাকে। জমি চাষের মতো মাথায় চিরুনি চাষ দিয়ে তারুণ্য দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন। আবার উল্টোটিও আছে। অনেক বয়স্ক ব্যক্তিকে তরুণ দেখায় বা তারুণ্যের মতো দেখায়। এরা খুবই স্মার্ট। পোশাক পরে তরুণদের ফলো করে। তবে উদ্ভট পোশাক নয়, মার্জিতের মধ্যে আধুনিকতা। এদের চলাফেরা এমন যে ভাই ডাকা যায় না, আঙ্কেলও না। কেতাদুরস্ত অবস্থা দেখে এবং মুখপানে চেয়ে তাদের স্যার অথবা ভাই সম্বোধন করে। বয়স্কা তরুণীদেরও একই অবস্থা। মনে হবে কলেজের অনার্স ক্লাস অথবা বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষার্থী। তারা যে কত বছর ধরে সরকারী বা বেসরকারী চাকরি করছেন তা বোঝাই যায় না। পথে ঘাটে চলতে কেউ খালা বা খালাম্মা ডাকার সাহস পায় না। বেশি বয়সেও তারা ‘আপা’ ডাকটি ধরে রেখেছেন। পথেঘাটে এমন অবস্থা দেখে যে তরুণরা হিংসায় জ্বলে মরে তারাও এই অবস্থায় যেতে পারে। ভারতের প্লাস্টিক ও কসমেটিক সার্জারির এবং স্কিন বিশেষজ্ঞ কয়েকজন চিকিৎসক গবেষণা করে দেখেছেন ঝাউবনের একটি পাতা যা রান্নায় শাক হিসাবেও ব্যবহৃত হয় তা মানব শরীরের ত্বকে বড় প্রভাব ফেলে। যার নাম থানকুনি পাতা। অনেক গুণাগুণ। বগুড়ার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক রেজাউল হক বাবু জানালেন, বিদেশে এই থানকুনি পাতা নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। সফলতাও এসেছে। প্রবীণ ব্যক্তি, প্রায় ৯০ বছর বয়সী সাবেক তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল বারী বললেন, যৌবনের দিনগুলোতে খাদ্য তালিকায় সেই যে থানকুনি পাতার চর্চরি ও পাতার রস খেয়েছেন তা বয়সকালেও অব্যাহত রাখেন। তবে বর্তমানে থানকুনি পাতা সহজে মেলে না। বর্তমান প্রজন্মেও অনেকে হয়তো তা চেনেও না। গ্রামে পথের ধারে জঙ্গলে, জলাশয়ের ধারে, বিল ও পুকুর পাড়ে থানকুনি পাতার গাছ জন্মে। যারা চেনে তারা কেটে নেয়। চিকিৎসক ও গবেষকগণের মতে, তৃণলতা জাতীয় থানকুনি উদ্ভিদে ব্যাকোসাইড ‘এ’ এবং ব্যাকোসাইড ‘এ-আই’ নামে এক ধরনের ভেষজ যৌগ আছে যা মস্তিস্কের কোষ গঠনে সহায়তা করে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে স্মৃতিশক্তি ধরে রাখে। সবচেয়ে বড় কাজটি করে লিভারে। অর্থাৎ পেটের যাবতীয় অসুখ দূর করে এবং সকল কার্যক্রমকে সচল রেখে ত্বককে সতেজ রাখে। থানকুনি পাতার রস মৃতকোষগুলোতে পুনর্গঠন করে ত্বককে মসৃণ করে এর জেল্লা বাড়িয়ে দেয়। চর্মরোগ পালাই পালাই করে। পেট ভাল থাকা না থাকার ওপর নির্ভর করে মাথার চুল ধরে রাখা। পেট ভাল থাকলে মাথার চুলও সহজে ঝরে পড়ে না। কথায় বলে পেট ভাল থাকলে মনও ফুরফুরে থাকে। থানকুনি পাতা চেহারার লাবণ্য এমনভাবে ধরে রাখে যে বয়স বাড়লেও যৌবন অক্ষুণœ বা অটুট থাকে। একজন বয়স্ক ব্যক্তি বললেন, চেহারায় লাবণ্য এলে মন ভাল হয়ে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়। এই পাতা শাক হিসেবে অল্প সিদ্ধ বা রান্না করে খাওয়া যায়। পাতা রস করেও পান করা যায়। চেহারায় লাবণ্য ফুটিয়ে তুলে যৌবনকে ধরে রাখার থানকুনি পাতা আপনার কাছেই আছে। খুঁজে নিন।
×