ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নদী দূষণ রোধের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ৪ অক্টোবর ২০১৫

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নদী দূষণ রোধের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষের অবহেলা ও নিষ্ঠুরতায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের বহু নদীই আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। মারা গেছে অসংখ্য প্রিয় নদ-নদী। প্রতিদিন শত শত টন শিল্প-কারখানার তরল রাসায়নিক বর্জ্য মিশে যাচ্ছে নদীর পানিতে। দূষিত হচ্ছে প্রাণের নদ-নদী। এমনকি বহু জলজ প্রাণীও হুমকির মুখে। ক্রমাগত দূষণ ও দখলে নদী সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হচ্ছে দিন দিন। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় সচেতনতা সৃষ্টিসহ দখল হয়ে যাওয়া নদী উদ্ধারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে কেবল সম্মিলিতভাবেই নদী দূষণ প্রতিরোধ সম্ভব। শনিবার বিশ্ব নদী দিবস ২০১৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), রিভারাইন পিপলসহ ৪০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ‘নদীর জন্য পদযাত্রা’ পূর্বক এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় প্রকৌশলী ম. ইনামুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- ডাঃ মোঃ আবদুল মতিন, হাসনাত কাইয়ুম, শরীফ জামিল, সুদীপ্ত শর্মা, সুমন শামস, জোনাকী, জিল্লুর রহমান, হাসান ইউসুফ, মনোয়ার হোসেন রনি প্রমুখ। সমাবেশটি বাহাদুর শাহ্ পার্কের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের অবহেলা ও নিষ্ঠুরতায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের বহু নদীই আজ ইতিহাসের সাক্ষী। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবে দেখা সেসব প্রিয় নদী। গত এক শ’ বছরে মারা গেছে অসংখ্য নদ-নদী। প্রতিদিন শত শত টন শিল্প-কারখানার তরল রাসায়নিক বর্জ্য মিশে যাচ্ছে নদীর পানিতে। প্রতিনিয়তই কোন না কোনভাবে নদী দূষিত হচ্ছে। দূষণের ফলে জলজ বাসস্থানও প্রাণীর জন্য হয়ে উঠছে বিপন্ন। আর এভাবেই ক্রমাগত দূষণ ও দখলে নদী হচ্ছে সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর। বক্তারা আরও বলেন, বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে সচেতনতা তৈরির যে প্রচেষ্টা চলছে, তা সফল হতে পারে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে। আমরা নদীমাতৃক বাংলাদেশের জনগণ, নদীর সঙ্গে আমাদের প্রাণের সম্পর্ক। তাই প্রাণকে বাঁচাতে হলে নদী রক্ষার বিকল্প নেই। দেশ ও জনগণের স্বার্থে সম্মিলিতভাবে নদী দূষণ প্রতিরোধ করতেই হবে। পরিবেশবাদীরা আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃতি-পরিবেশ-নদী-অর্থনীতি ও ভবিষ্যত উন্নয়নের স্বার্থে নদীর পাড় যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর পাড় নদীকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে নদীবিষয়ক চেতনাগত ভ্রান্তিবিলাস থেকে নিজেদের মুক্ত করে নদীবান্ধব নীতি ও কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কেননা নদ-নদী ও জলাশয়ই পরিবেশ ও অস্তিত্ব রক্ষার মূল কবজ। এ সময় তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও সকল স্তরে সরকারী প্রশাসন, বিশেষজ্ঞ, পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ, প্রশাসক এমনকি সাধারণ জনগণের ঐতিহ্যগতভাবে নদী ও পানি বিষয়ে তাদের জীবন চর্চা ও চিন্তা-চেতনায় একটি ভ্রান্তিবিলাসের শিকার হয়ে আছে। এ ভ্রান্তি হচ্ছে নদীকে যথেচ্ছ ব্যবহার, এ ভ্রান্তিবিলাস থেকে বের হয়ে প্রাণের নদী রক্ষার বিকল্প নেই- তা কোনক্রমেই ভুলে যাওয়া যায় না। পদযাত্রাটি সমাবেশ শেষে বাহদুর শাহ্ পার্ক থেকে শুরু হয়ে সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে গিয়ে শেষ হয়। অনুষ্ঠিত পদযাত্রায় অংশ নেন- আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণী-পেশার সচেতন মানুষ। প্রসঙ্গত, দেশে গতবছর থেকে বিশ্ব নদী দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘নদী রাখব দূষণমুক্ত’।
×