ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গান ও সাধুসঙ্ঘে নিখিল বঙ্গ বাউল সঙ্গীত সম্মিলনীর সমাপ্তি

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৫ অক্টোবর ২০১৫

গান ও সাধুসঙ্ঘে নিখিল বঙ্গ বাউল সঙ্গীত সম্মিলনীর সমাপ্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাউল শিল্পীদের গান আর সাধুসঙ্ঘের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথম নিখিলবঙ্গ বাউলসঙ্গীত সম্মিলনী। ‘দেখ দেখ মনরায়, হয়েছে উদয়, কী আনন্দময় সাধুর সাধবাজারে’ সেøাগানে শুক্রবার থেকে শুরু হয় এ সম্মেলন। ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৫তম তিরোধানবার্ষিকী সম্মেলনের আয়োজন করে লালন বিশ্বসংঘ। পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বাউলদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী বাউল-সাধকদের মিলনমেলার সমাপনী দিন ছিল রবিবার। শেষ দিনেও স্নিগ্ধ রূপ নেয় সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রীশ্রী আনন্দময়ী আশ্রম প্রাঙ্গণ। মঞ্চের পেছনে শামিয়ানা ঢাকা আঙিনায় দেখা মিলেছে পরমাত্মার সন্ধানে নিবেদিত বাউলদের ভক্তিরসের সাধুসঙ্ঘ। আর মঞ্চে একতারা, দোতারা, ডুগডুগি, খঞ্জনি, মন্দিরা, হারমোনিয়াম ও করতালের বাজনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভেসে বেরিয়েছে দুই বাংলার বাউলদের আধ্যাত্মবাদী গান। সম্মিলনীর সমাপনী আয়োজনে বাংলাদেশের ১২ জন ও ভারতের ১২ জনসহ মোট ২৪ বাউলশিল্পীকে প্রদান করা হয় সম্মাননা সনদপত্র। তাদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন সাবেক সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। শরতের শেষ বিকেলে লালন বিশ্বসংঘের নির্বাহী পরিচালক আবদেল মাননানের শুভেচ্ছা বক্তব্যে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর শুরু হয় আধ্যাত্মবাদী চেতনাদায়ী সঙ্গীতাসর। প্রথমেই মঞ্চে আসেন দুই বাংলার বাউলশিল্পীরা। লোকজ বাদ্যযন্ত্রের সুরেলা শব্দধ্বনি ছড়িয়ে পরিবেশন করেন উদ্বোধনী সঙ্গীত। অনেক কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। দেহভঙ্গির সঙ্গে স্বরের মেলবন্ধনে গীত হয়Ñ এলাহি আলামিন গো আল্লাহ/বাদশাহী আলমপনা তুমি/তুমি ডুবায়ে ভাসাইতে পারো/ভাসায়ে কিনার দাও কারে/রাখো মারো হাত তোমারও/তাইতো তোমায় ডাকি আমি...। সমবেত গানের পর একক কণ্ঠের গানে গানে উন্মুক্ত উদ্যানজুড়ে বয়ে যায় তাল, লয় ও বাণীর ব্যঞ্জনাময় সুমধুর সুরধ্বনি। চুয়াডাঙ্গার বাউল ফকির আবুল হোসেন গেয়ে শোনানÑ আশার সিন্ধু তীরে বসে আছি হে সদয়...। এ গানের শেষে ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যার গাঢ় অন্ধকার। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় শ্রোতার সংখ্যা। সাঁইজির পরম ভাবের মায়ায় পূর্ণতা পায় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। সেই শ্রোতাকুলের উষ্ণতায় শিল্পী পরিবেশন করেন বিনা বীজের আজগুবি গাছ চাঁদ ধরেছে তাই...। শ্রোতাকে ব্যাকুল করা সুরে ঝিনাইদহের জহুরা বাউল গেয়ে শোনানÑ ‘পার করো দয়াল আমার কেশে ধরে’ ও ‘কবে সাধুর চরণধূলি লাগবে গায়’ গান দুটি। মেহেরপুরের হারুন ফকির পরিবেশন করেন ‘দাসের পানে একবার চাও হে দয়াময়’ ও ‘আল্লাহ বলে ডাক রে মনপাখি।’ চুয়াডাঙ্গার বাউল তারাচাঁদ শাহ গেয়ে শোনানÑ ‘এমন সৌভাগ্য আমার কবে হবে’ ও ‘মনের নেংটি এঁটে কর ফকিরী।’ চুয়াডাঙ্গার আরেক বাউল ওয়ালিউর রহমানের কণ্ঠে গীত হয় ‘মনের মনে হয় না একদিনে’ গানটি। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বীরেন দাস বাউল গেয়ে শোনানÑ ‘রাসুল রাসুল বলে ডাকি’ গানটি। ওপার বাংলার মুর্শিদাবাদের আরেক বাউল সোমেন বিশ্বাস পরিবেশন করেন ‘দেখেশুনে আমার জ্ঞান হলো না’। প্রসঙ্গত, লালন সাঁইজির তিরোধানবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা, শেরপুর ও কুষ্টিয়ায় নয় দিনব্যাপী এই সাধুসঙ্ঘের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকার পর আয়োজন হবে শেরপুর ও কুষ্টিয়ায়। সেতার-সরোদ কর্মশালার দ্বিতীয় দিন ॥ প-িত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও প-িত কুশল দাসের পরিচালনায় শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘সঙ্গীত অবয়ব’ শীর্ষক সেতার-সরোদ কর্মশালা দ্বিতীয় দিন ছিল রবিবার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে এই দুই সঙ্গীতজ্ঞের কাছে সেতার ও সরোদের নানা বিষয়ে হাতেকলমে শিখতে দেখা গেল শিক্ষার্থীদের। প-িত কুশল দাস সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে সন্ধ্যা থেকেই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের সেতার বাজানোর নানা বিষয় সম্পর্কে তালিম দেন। স্বর, ঠাট, রাগ-রাগিনী, নানা বিষয়ে হাতেকলমে শেখান। একই সময়ে আরেকটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের সরোদ বাজানোর নানা কৌশল শেখান প-িত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। কচি-কাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আজ ॥ ঐতিহ্যবাহী শিশু-কিশোর সংগঠন কচি-কাঁচার মেলার ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সেগুনবাগিচার ‘কচি-কাঁচা মিলনায়তনে’ আনন্দানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার। সভাপতিত্ব করবেন মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
×