ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেখ জামাল ধানম-ির অংশগ্রহণ না করার নেপথ্যে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৫ অক্টোবর ২০১৫

শেখ জামাল ধানম-ির অংশগ্রহণ না করার নেপথ্যে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে উপেক্ষিত লীগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি ও রানার্সআপ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। তবে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবকে লিখিত আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেখ রাসেল কেসিকে তালিকাতেই রাখা হয়নি। প্রতিযোগিতার আয়োজক চট্টগ্রাম আবাহনী। আয়োজকদের পক্ষ থেকে শেখ জামালকে দেয়া পত্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল টুর্নামেন্ট কমিটির কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে। মূলত এখানেই বিপত্তি। প্রাইজমানি এখানে কোন বড় বিষয় নয়। নিজেদের অংশগ্রহণ না করার বিষয়টা খোলাসা করতে গিয়ে শেখ জামাল ধানম-ির সভাপতি, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক মনজুর কাদের বলেন, প্রাইজমানি নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। এ কারণে আমরা অংশ নিচ্ছি না, বিষয়টা অবান্তর। শেখ জামাল ধানম-ি দেশে তো বটেই দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ক্লাবগুলোর একটি। এ ধরনের টিম মাঠে নামাতে চাইলে যথাযথ সম্মান দিতে হবে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। স্রেফ একটা চিঠি দিয়েই খালাস। আমরা ফুটপাথের টিম নই, যে খেলাতে চাইলে শুধু একটি চিঠিই যথেষ্ট। আয়োজকদের উচিত ছিল আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা। টুর্নামেন্টটা কার নামে? এই নামের ওজন কী হওয়া উচিত? সম্ভবত এই ধারণা আয়োজকদের নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শহীদ শেখ কামাল। শেখ জামাল মেজ আর শেখ রাসেল ছোটÑ এটা সবার জানা। শেখ কামালের নামে দেশে আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ আয়োজন করা হচ্ছে অথচ শেখ জামাল ও শেখ রাসেলকে বাদ দিয়ে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় ক্লাব এ দু’টি। বিশেষ করে লীগ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হিসেবে। মনজুর কাদেরের সংযোজন, ‘হু ইজ দ্যাট শাকিল’? আমি তাকে চিনি না। তার সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। আমার মতো সংগঠককে এই শাকিলের সঙ্গে আলোচনা, যোগাযোগ করে খেলতে হবে? তারপরও আমরা খেলব কী খেলব না এই সিদ্ধান্ত আয়োজকদের জানাইনি অথচ মিডিয়ায় দেখলাম, আমরা নাকি প্রাইজমানি কম থাকায় অংশ নিচ্ছি না। ফলে আমাদের বাদ দিয়েই সব ঠিকঠাক করে ফেলা হয়েছে। কমিটিতে থাকা বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বা সহ-সভাপতি তাবিথ আউলাল গংরা কেন যোগাযোগ করেননি আমার সঙ্গে? আমাকে না পেলে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হেলাল বা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নুর সঙ্গে কেন তারা কথা বলেননি? প্রশ্ন মনজুর কাদেরের। শেখ কামালের নামে টুর্নামেন্ট। তাঁর নামের দিকে তাকালে আমরা বুঝব এই আসরের মর্যাদা, গুরুত্ব কতটুকু হওয়া উচিত। আমি মনে করি, এটা মা’র চেয়ে মাসির দরদ বেশিÑ এই প্রবাদের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এই টুর্নামেন্টে লীগ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল থাকবে না, এটা হাস্যকর। মনজুর কাদের বললেন, শেখ জামাল ধানম-ি ও শেখ রাসেল কেসিকে বাদ দিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বেমানান। আমি মনে করি শেখ কামালের নাম বিক্রি করে আখের গোছানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে, নামকওয়াস্তের বিদেশী দল এনে। আয়োজকরা আমার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলে, আমি নিজেই এক লাখ ডলার যোগাড় করে দিতাম প্রাইজমানি হিসেবে। তিনি উদাহরণ টানলেন, দেশে এক কোটি টাকা প্রাইজমানি দিয়ে বাফুফে সুপার কাপ আয়োজন করছে। আর শেখ কামালের নামে টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি মাত্র ২৫ হাজার ডলার। শেখ কামালের নাম জড়িয়ে এই তামাশার কোন মানে হয় না। দেশের দুই ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান ও ঢাকা আবাহনী খেলছে। তাদের জামাই আদর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লীগে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান পেলেও। তবে এ নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই। মোহামেডান-আবাহনী ডিজার্ভ করে। তাই বলে শেখ জামাল ধানম-ি ও শেখ রাসেলকে উপেক্ষা করা মেনে নেয়া যায় না। শেখ জামাল শুধু দেশে নয়, বিদেশেও চমক দেখিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। নেপালের পোখরা কাপে, ভুটানের কিংস কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ভারতের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আইএফএ শিল্ডে রানার্সআপ। সম্প্রতি কিরগিজস্তানে এএফসি ক্লাব কাপের গ্রুপ পর্বের খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি আমরা। আয়োজকরদেও বোঝা উচিত ছিল এমন ওজনদার টিমকে রাখলে টুর্নামেন্টের জৌলুস থাকত অন্যরকম। মনজুর কাদের জানালেন, লীগ শেষে কোচ ফুটবলারদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দলের নাইজিরিয়ান কোচ যোশেফ আফুসির মাসিক বেতন সাত হাজার ডলার। দলের বিদেশী ফুটবলার ল্যান্ডিং, মুসা, এমেকা, ওয়েডসনের বেতন আট হাজার ডলার করে। আর্জেন্টাইন ট্রেনার কোলম্যানের বেতন চার হাজার ডলার। টুর্নামেন্ট খেলার জন্য তাদের দলে ফিরিয়ে আনতে বিমান ভাড়াসহ খরচ হতো প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থানীয় খেলোয়াড় তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে শেখ কামাল টুর্নামেন্ট খেলতে গেলে আমাদের প্রায় ৭০/৭৫ লাখ টাকা খরচ হতো। তারপরও আমরা খেলতাম। কারণ একটাইÑ টুর্নামেন্টটা শহীদ শেখ কামালের নামে বিধায়। কিন্তু দায়সারা আমন্ত্রণে আমরা রীতিমতো হতাশ। আলোচনা করলে টাকার ব্যবস্থা আমরা করে দিতাম আয়োজকদের। এতে ল্যথারজিক বিদেশী দলের পরিবর্তে নামীদামী, বড় ক্লাবকে খেলানো যেত। উল্লেখ্য, আগামী ২০-৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে খেলা। এতে অংশগ্রহণ চূড়ান্ত করা হয়েছে বাংলাদেশের ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড এবং চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। ৫টি বিদেশী দল হচ্ছে, আফগানিস্তানের শাহিন আসমায়ি, ভারতের ইস্টবেঙ্গল, কলকাতা মোহামেডান, শ্রীলঙ্কার সলিড এসসি ও ভুটানের থিম্পু এফসি। দলগুলোকে অংশগ্রহণ ফি প্রদান করা না হলেও যাতায়াত ও আবাসন খরচ বহন করবে আয়োজকরা। চ্যাম্পিয়ন দল ২৫ হাজার ডলার ও রানার্সআপ দলকে দশ হাজার ডলার প্রাইজমানি দেয়া হবে। তবে আলোচনার সরস খোরাক যুগিয়েছে, টুর্নামেন্টে নেই প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড এবং রানার্সআপ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, যা এদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। আসন্ন টুর্নামেন্টে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। মনজুর কাদেরের মতো একই অভিযোগ করেছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সভাপতি, খ্যাতিমান ক্রীড়া সংগঠক নূরুল আলম চৌধুরী। ফুটবল অন্তঃপ্রাণ সংগঠক হিসেবে রয়েছে যার সুখ্যাতি। আয়োজক কর্তৃপক্ষ শেখ জামালকে দায়সারাভাবে হলেও অন্তত একটি চিঠি দিয়েছে অথচ শেখ রাসেলকে তাও দেয়া হয়নি। ফলে এটা স্পষ্ট, আয়োজকরা শেখ রাসেল ক্লাবকে পুরোপুরিই অগ্রাহ্য-অবহেলা করেছে।’ নুরুল আলমের অভিমত। তিনি আরও যোগ করেন, ‘আবাহনী-মোহামেডানকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই। দু’টিই দেশের জনপ্রিয় ক্লাব। স্থানীয় হিসেবে চট্টগ্রাম আবাহনী খেলতেই পারে। কিন্তু লীগ রানার্সআপ হিসেবে আমাদের আমন্ত্রণই জানানো হলো না, কোন যোগাযোগ-আলোচনাই করা হলো না কেন তা আমার বোধগম্য নয়।
×