ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ নুরুজ্জামান

সানিয়া-মালিক জুটির সুসময়

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৭ অক্টোবর ২০১৫

সানিয়া-মালিক জুটির সুসময়

ঘরে-বাইরে সুসময় যাচ্ছে সানিয়া মির্জা ও শোয়েব মালিক জুটির। প্রমীলা টেনিসের দ্বৈতে সানিয়ার সাফল্যের গ্রাফটা কয়েক বছর ধরেই উর্ধমুখী। অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর পাকিস্তান জাতীয় দলে ফিরে ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন অলরাউন্ডার মালিক। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত স্বামী-স্ত্রী জুটির রসায়নটা আসলেই জমে উঠেছে। মালিক যেমন প্রকাশ্যে শিকার করেছেন, সানিয়ার সাফল্যই তাকে অনুপ্রাণিত করছে! অন্যদিকে স্বামীর সাফল্যে আবার ‘টুইট’ করে আনন্দ প্রকাশ করছেন ভারতীয় ‘টেনিস-কুইন’। ক’দিন আগে শ্রীলঙ্কা সফরে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর নেচে-গেয়ে পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম মাতিয়ে তুলেছিলেন সানিয়া-মালিক। দু’জনই তাদের টুইটার-ফেসবুকে সেই দৃশ্যের ভিডিও ‘আপলোড’ করেছিলেন। শত ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় পেলে দুবাইয়ের নিজস্ব ফ্ল্যাটে মিট করছেন তারা। সত্যি অসাধারণ সময়ই পার করছেন সানিয়া-মালিক। তারকা খ্যাতিতে সানিয়া মির্জা যে শোয়েব মালিকের চেয়ে যোজন এগিয়ে এ নিয়ে খুব একটা বিতর্ক নেই। সানিয়াকে বলা হয় গোটা ভারতীয় টেনিসের ‘আইকন’। যাকে সামনে রেখে কোর্টে নামে হাজারো কিশোরী, হাজারো তরুণী। এবার সানিয়াকে প্রেরণা মানছেন স্বামী মালিক। ক’দিন আগে টেনিসের মর্যাদার আসর ইউএস ওপেনে প্রমীলা দ্বৈতের শিরোপা জেতেন ইন্ডিয়ান-টেনিসকুইন। যেটিকে মালিক তার নিজের জন্য নব-প্রেরণা বলে মানছেন। এমন কি কোর্টে স্ত্রীর এ সাফল্যে ক্রিকেট মাঠে ভাল করতে এটিকে ‘বাড়তি চাপ’ বলেও স্বীকার করেছেন পাক-অলরাউন্ডার! ‘আমি খুবই গর্বিত, আনন্দে আপ্লুত। সানিয়া ভারতের মেয়ে। সেরা হওয়ার জন্য যে শতভাগ খিদে নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করে। আবার ও যেহেতু আমার স্ত্রী, তাই পাকিস্তানেরও গর্ব। সানিয়ার ইউএস ওপেনের সাফল্য আমাকে জিম্বাবুইয়ে সফরে অনুপ্রেরণা যোগাবে। একই সঙ্গে ক্রিকেটে আরও ভাল করার জন্য এটা আমাকে কিছুটা চাপেও রাখবে!’ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন ৩৩ বছর বয়সী মালিক। প্রসঙ্গত, ইউএস ওপেনে সুইস তারকা মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটি বেঁধে চার্লসটন খেতাব জয় করেন সানিয়া। টানা দ্বিতীবার এমন সাফল্য আর কোন ভারতীয়র নেই। ২৮ বছরের হায়দরাবাদী কন্যা প্রথম ভারতীয় প্রমীলা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ ওপেন দ্বৈতের শিরোপা বগলদাবা করেন। হিঙ্গিসকে নিয়ে জেতা সানিয়ার এটি টানা দ্বিতীয় গ্র্যান্ডসø্যাম। এ বছরই এপ্রিলে প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে প্রমীলা ডাবলসে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থান দখল করে ইতিহাস গড়েন দেশটির ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত এই তারকা। ২০১০ সালে সানিয়াকে বিয়ে করেন শোয়েব। রাজনৈতিক ও ভৌগালিকভাবে বিশ্বের অন্যতম শত্রুদেশের দুই অঙ্গনের দুই খেলোয়াড়ের পরিণয় তখন গোটা দুনিয়ায় আলোড়ন তৈরি করে। দক্ষিণ এশিয়ার এই তারকা দম্পত্তির তুলনা করা হয় ব্রিটিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম ও তার স্ত্রী পপগায়িকা ভিক্টোরিয়া জুটির সঙ্গে, অনেকে যাদের আদর করে ‘পশ এ্যান্ড বেকস’ বলে থাকেন। তবে ঝামেলাও কম হয়নি। শুরু থেকেই এ বিয়ের বিরোধিতা করে ভারতীয় কট্টর হিন্দু সংগঠন শিবসেনা। কিছুদিন আগে ভারত সরকার সানিয়াকে এক সম্মাননা পুরস্কার দিলে নতুন করে ফুসলে ওঠে ওই সংগঠনটি। তারা সানিয়াকে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেন, এমন কি হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। তবে এনডিটিভিতে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আবেগজড়িত কণ্ঠে জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার অঙ্গীকার করেন সানিয়া। করেও যাচ্ছেন তাই। মালিকের গল্পটা ভিন্ন। ফর্মহীনতায় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। খেলা হয়নি গত বিশ্বকাপে। অনেকে ভেবেছিলেন ক্যারিয়ার শেষ সাবেক অধিনায়কের। কিন্তু দুর্দান্ত প্রতাপে ফিরে এসেছেন। এরই মধ্যে রঙিন পোশাকের ওয়ানডে ও টি২০তে জায়গা করে নিয়েছেন। আগামী মাসে আরব আমিরাতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে পূর্ণদৈর্ঘের সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। তার আগে এ মাস থেকে জিম্বাবুইয়ে সফর (দুই টি২০ ও তিন ওয়ানডে)। সেখানেও যথারীতি দুর্বার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ওয়ানডে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন মালিক। আরও ভাল করতে সানিয়ার সাফল্য তাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে উল্লেখ করেন মালিক ‘মেয়ে হয়েও সানিয়ার এত বড় সাফল্য আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। অনেকে জিম্বাবুইয়েকে ছোট করে দেখছেন। কিন্তু আমি তা মনে করি না। ঘরের মাটিতে ওরা ভয়ঙ্কর দল। আমাদের তাই সেরাটা দিতে হবে।’ বলছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ২-১এ সিরিজ জয়ে নিজে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এ বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে মহিলাদের টেনিসের ডাবলস র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠেন সানিয়া। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এ কীর্তি গড়েন তিনি। সার্কেল কাপ-জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই স্বপ্নপূরণ হয়? বহু পরিশ্রমের ফসল। কিন্তু, একই সঙ্গে যেন বদলে গিয়েছে পৃথিবী? ঘোর কাটেনি? সানিয়া জানিয়েছেন, ‘আমি প্রচণ্ড খুশি। এক নম্বরে পৌঁছানো আমার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নপূরণ হলো অবশেষে?’ অভিনন্দনের বন্যা? শুভেচ্ছার সুনামি? সানিয়াকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটিবেঁধে উইম্বলডনের মহিলা দ্বৈতের শিরোপা জেতেন ভারতের টেনিস-সুন্দরী। ইউএস ওপেনেও দুজনের হাতে শোভা পায় গৌরবময় শিরোপা। মহিলা দ্বৈতের ফাইনালে কেসি ডেলাকুয়া ও ইয়ারোস্তভা শেদোভা পাত্তাই পাননি। মাত্র ৭০ মিনিটে ম্যাচটা ৬-৩, ৬-৩ গেমে জিতে সানিয়া-হিঙ্গিস মেতে ওঠেন গ্র্যান্ডসø্যামের উল্লাসে। উইম্বলডন আর ইউএস ওপেন ছাড়াও এ বছর ইন্ডিয়ান ওয়েলস, মায়ামি আর চার্লসটনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা জিতেছেন সানিয়া-হিঙ্গিস। মহিলা দ্বৈতে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান এখন এই দুজনের অধিকারে। ২০১৫ সালকে নিয়ে তাই একটু বেশিই উচ্ছ্বসিত সানিয়া, ‘আমাদের জন্য বছরটা দারুণ কাটছে। শুধু উইম্বলডন জিতলেই বছরটাকে দুর্দান্ত বলা যেত। অথচ আমরা ইউএস ওপেনও জিতে নিলাম। আমরা দুজনে একটা নিখুঁত দলে পরিণত হয়েছি। সেটা আবার কথাটা প্রমাণ হলো।’০
×