ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আক্রান্ত পাঁচ

বগুড়ায় নলকূপে ভয়াবহ আর্সেনিক

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৭ অক্টোবর ২০১৫

বগুড়ায় নলকূপে ভয়াবহ আর্সেনিক

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার গাবতলি উপজেলার এক গ্রামে টিউবওয়েলের পানিতে ভয়াবহ মাত্রার আর্সেনিক পাওয়া গেছে। পুরো গ্রামজুড়েই লোকজন এখন আর্সেনিক আতঙ্কে ভুগছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের পরীক্ষায় উপজেলার চকমরিয়া নামে ওই গ্রামের ৮০ ভাগ টিউবওয়েলের পানিতেই মাত্রারিক্ত আর্সেনিক মিলেছে। ইতোমধ্যে সেখানে একই পরিবারের ৫ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন- মাবিয়া বেগম (৪৫), ইব্রাহিম (৫৫) ও মাসুদ (২৫)। এছাড়া ওই পরিবারের আরও ২ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত বলে সংশ্লিষ্টারা জানিয়েছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে মহিষাবান ইউনিয়নের চকমরিয়া গ্রামের ইব্রাহিমের স্ত্রী মাবিয়া ঈদের আগে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতলে চিকিৎসা নিতে আসলে আর্সেনিকের বিষয়টি শনাক্ত হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বগুড়ার পক্ষ থেকে প্রথম দফায় সেখানে ৬টি টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করে সবক’টিতেই ভয়াবহ মাত্রার আর্সেনিক পাওয়া যায়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লুৎফুন্নাহার জানান, যেখানে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা ৫০ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন) বা প্রতি লিটারে দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম। সেখানে প্রথম দফার পরীক্ষায় আর্সেনিক পাওয়া যায় ৩ শ’ থেকে ১ হাজারেরও বেশিমাত্রার (পিবিবি) আর্সেনিক। মঙ্গলবার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের একটি টিম চক মরিয়া গ্রামে দ্বিতীয় দফায় টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করতে যায়। এ সময় সেখানে শত শত উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত মানুষ তাদের টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষার জন্য বোতলভর্তি পানি নিয়ে আসেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিফতরের টিম মোট ৯৬টি টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করেন। উপ-সহকারী প্রকৌশলী লুৎফুন্নাহার জানান, এসব টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করে ৭১টিতেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষায় ১শ’ থেকে ৫শ’ পিপিবি মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া যায়। ওই গ্রামের প্রায় আড়াই শ’ হস্তচালিত টিউবওয়েল রয়েছে। পুরো গ্রামের সব টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গাবতলি উপজেলা। ইতোপূর্বে ২০০৩ সালে গাবতলির ১১টি ইউনিয়নের কিছু এলাকাসহ বগুড়া সদরের ২টি ইউনিয়েনের ২টি গ্রাম আর্সেনিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নত হয়েছিল। তবে তখন চকমরিয়া গ্রামের মতো এত ভয়াবহ মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া যায়নি। পানিতে আর্সেনিক শনাক্তের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর যে কীট ব্যবহার করে তাতে ১ হাজার পিবিবি পর্যন্ত শনাক্ত হয়। চকমরিয়া গ্রামে ১ হাজার পিপিবি মাত্রা অতিক্রম করে বলে পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান। আর্সেনিক শনাক্তকরণ টিউবওয়েলগুলো লাল দাগ ও আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল সবুজ রং দেয়া হয়েছে। পানি পানের ক্ষেত্রে চকমরিয়া গ্রামের লোকজনকে সচেতন হওয়ার পরমর্শ দেয়া হয়েছে। বগুড়ার সিভিল সার্জন অর্ধেন্দু দেব জানিয়েছেন, তারা গ্রামটি পরিদর্শন করে আর্সেনিক আক্রান্ত ৩ জন রোগীর খোঁজ পেয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের পুরো গাবতলি উপজেলা পর্যবেক্ষণ ও বিস্তারিত খোঁজ নেয়াসহ লোকজনকে সচেতন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
×