ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ

সিরিয়ায় রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৭ অক্টোবর ২০১৫

সিরিয়ায় রাশিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হুঁশিয়ারি ও সিরিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতির কাদাজলে আটকে পড়ার সতর্কতা সত্ত্বেও রাশিয়া বাশারবিরোধী জোট ও আইএস ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করেছে। বিমান হামলার পাশাপাশি দেশটির স্থল অভিযানেরও পরিকল্পনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অন্যতম মিত্র ইরান ও এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র চীন দেশটির এ অভিযানে অংশ নেবে। ইতোমধ্যে সমাজতান্ত্রিক চীন আগামী সপ্তাহের মধ্যেই হাজারেরও বেশি সামরিক উপদেষ্টা সিরিয়ায় পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়ার বিমান হামলার ফলে সিরিয়ায় দীর্ঘদিন চলা রিয়াদ-তেহরানের দ্বন্দ্ব এখন মস্কো ও ওয়াশিংটনের ছায়া যুদ্ধে রূপ নিল। সিরিয়া পরিণত হলো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির প্রায় এক সর্বব্যাপী যুদ্ধে। যে সংঘাতের এক পক্ষ রাশিয়া, চীন ও ইরান এবং অপরপক্ষ মার্কিন জোটের ইউরোপীয় ও আরব মিত্র জোটের ৬০টি রাষ্ট্র। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে সিরিয়া বিষয়ে ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবুও আশঙ্কা থেকেই যায়, বাশার-আল-আসাদ কি অস্ট্রীয় হাঙ্গেরী যুবরাজ ফার্ডিনান্দের মতো কোন বিশ্বযুদ্ধের অনুঘটক হিসেবে ব্যবহৃত হবেন, বিগত পঁচিশ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রত্যেক শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক হলো ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের মুখ্য সময়। তবে এ শতাব্দীর পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। ২০০১ সালে মার্কিন মুলুকে টুইন-টাওয়ারে হামলার পর হতে বিশ্বজুড়েই এমন যুদ্ধ পরিস্থিতি। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নামের ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসন এমন ঘোলাটে পরিস্থিতির জন্ম দেয়। বিশেষত ইরাক আক্রমণ। ইরাকের সুন্নি শাসক সাদ্দাম পতনের পর মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে চলতে থাকে সৌদি-ইরানের প্রভাব বিস্তারের নির্লজ্জ দৌরাত্ম্য। আরব বসন্ত এমন প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে। ২০১১ সালের এ গণআন্দোলন উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশকিছু রাষ্ট্রের স্বৈরশাসকের পতন ঘটায়। যার রসদ জোগায়- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্র রাষ্ট্র। সিরিয়া ও লিবিয়া এ মরুঝড়ের সবচেয়ে বিপর্যস্ত রাষ্ট্র। এ দুই দেশে গৃহবিবাদের সুযোগে জন্ম লাভ করে উগ্রপন্থী জঙ্গী গোষ্ঠী। লিবিয়ায় খুব দ্রুত গাদ্দাফীর পতন ঘটলেও সিরিয়ার আসাদ সরকার ইরানের শিয়া শাসকদের মদদে ক্ষমতায় রয়ে যায়। আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা ও সরানোর দৌরাত্ম্যে জড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক শক্তিগুলো। শিয়া শাসক আসাদকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে মরিয়া হয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি রাষ্ট্রসমূহ। তাদের একটাই লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের প্রভাব রোধ করা। শিয়া ও সুন্নি শাসকদের এ দ্বন্দ্ব সিরিয়া ছাড়িয়ে প্রতিবেশী ইরাক ও লেবালনে ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহীদের ব্যানারে জন্মলাভ করে উগ্রপন্থী জঙ্গী গোষ্ঠী আইএস। যার প্রত্যক্ষ মদদদাতা সৌদি আরব, তুরস্ক, ইউএই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। আঞ্চলিক শক্তি ইরানের পাশাপাশি রাশিয়া বিদ্রোহের প্রথম দিন থেকেই সিরিয়ার পাশে ছিল। বাশার আল আসাদের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের খবর যখন প্রকাশ পায় এবং বিশ্বজনমত আসাদের বিপক্ষে যায়, তখন পুতিন তার পাশে এসে দাঁড়ান। সেই যাত্রায় পশ্চিমা শাসকদের রোষানল থেকে আসাদ রক্ষা পেলেও আইএস, আল নুসরা, ফ্রি সিরিয়ান আর্মি, হিযবুল্লাহ, ওয়াইপিজেসহ অসংখ্য গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে ধ্বংসের দোরগোড়ায় পৌঁছে সিরিয়া। রাজধানী দামেস্ক ছাড়া অধিকাংশ অঞ্চল এখন আসাদের হাতছাড়া। এমন কাদা জলের পরিস্থিতিতে আসাদকে টিকিয়ে রাখা ও আইএস দমনে কতটুকু সফল হবেন পুতিন, তাই এখন দেখার বিষয়। যদিও পশ্চিমা মিডিয়ার অভিযোগ আইএস নয়, বরং আসাদবিরোধীদের ধ্বংস করাই পুতিনের একমাত্র লক্ষ্য। এসব সংঘাতের পাশাপাশি তুর্কি-কুর্দি দ্বন্দ্বও এ অঞ্চলে নতুন মাত্রা যোগ করবে। সিরিয়া পরিণত হবে মানব ইতিহাসের দীর্ঘতম এক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে।
×