ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবার নিয়ে বিপাকে মুক্তিযোদ্ধা কন্যা

চাকরির আশায় বিদেশ গিয়ে প্রতারিত

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৮ অক্টোবর ২০১৫

চাকরির আশায় বিদেশ গিয়ে প্রতারিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৭ অক্টোবর ॥ চাকরির আশায় বিদেশ গিয়ে প্রতারিত হয়ে খালি হাতে দেশে ফিরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রুমা আক্তার এখন দিশেহারা। উল্টো নিজেসহ বাবা আব্দুর রহিম মৃধার গোটা পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। নিজের কর্মসংস্থান এবং বাবা-মায়ের সংসারের অভাব-অনটন দূর করতে পড়শি মঞ্জু ওরফে মজনু মৃধার আত্মীয় ওমান প্রবাসী কইতুরি বেগমের সহায়তায় তিন লাখ টাকার বিনিময়ে সুদূর ওমানে গিয়েছিলেন। কথা ছিল, ২০ হাজার টাকার মাসিক বেতন দেয়ার। কিন্তু চাকরি তো দূরের কথা উল্টো অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন করা হয়। অনেক কষ্টে চার মাস পর বাড়ি ফিরে আসেন রুমা। কিন্তু তাকে বিদেশ পাঠানোর নামে নেয়া টাকা ফেরত দেয়নি মঞ্জু মৃধাসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। কোন উপায় না পেয়ে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রুমা একটি মামলা করেছেন। যেখানে মঞ্জু মৃধা, লিটন মৃধা, কইতুরি বেগম ও তার দুই মেয়েকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বিবরণে জানা গেছে, চম্পাপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামে বাড়ি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম মৃধার। তার তিন সন্তানের মধ্যে রুমা মেজ। সবার ছোট ছেলে মেহেদী বিএর শিক্ষার্থী। বড় মেয়ে রেশমা স্বামী-সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার করছেন। বিয়ের পরে পারিবারিক অশান্তির কারণে স্বামীর সঙ্গে রুমার বনাবনি হয়নি। এক পর্যায়ে সংসার ভেঙে যায়। ফিরে আসে বাবার সংসারে। অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতার আশায় পড়শি এবং আত্মীয় মঞ্জু মৃধা আশ^াস দেয় বিদেশ পাঠানোর। মঞ্জু মৃধার নিকট আত্মীয় বিধবা কইতুরি বেগম দীর্ঘদিন ওমানে থাকছে এ কারণে রুমাও কর্মের সন্ধানে বিদেশ যেতে রাজি হন। মেয়ের সুখ এবং নিজের সংসারের আর্থিক সমৃদ্ধির আশায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম জমিজমা বন্ধক রেখে তিন লাখ দেন মঞ্জু মৃধার কাছে। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ ওমানে পাঠানো হয় রুমাকে। যাওয়ার পর থেকে রুমাকে বিভিন্ন অপকর্মে জড়ানোর চেষ্টা চালানো হয়। এতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর শারীরিক নির্যাতন নেমে আসে। বাবাকে তার সর্বনাশের কথা বললে রুমাকে দেশে ফেরত আনার জন্য মঞ্জু মৃধাকে চাপ দেয়। অনেক দেন-দরবারের পরে এ বছরের ২৬ জুলাই রুমাকে দেশে ফেরত আনা হয়। কিন্তু টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায় মঞ্জু মৃধা। বাধ্য হয়ে রুমা ৩০ জুলাই আদালতে মামলা করেন। বিজ্ঞ আদালত চম্পাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রিন্টু তালুকদারকে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। রুমার বাবার দাবি মামলা করায় গোটা পরিবারকে এখন হুমকি দেয়া হচ্ছে। ছেলেকে মারধরের ভয় দেখানো হচ্ছে। চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার জানান, আদালতের নির্দেশ মতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অভিযুক্ত মঞ্জু মৃধা জানান, রহিম মৃধা তাদের তিন লাখ টাকা দেয়নি। উল্টো আমার ভায়রা ঝি কইতুরিকে অনুরোধ করে রুমাকে বিদেশ পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টি চেয়ারম্যান সাহেব তদন্ত করে ফয়সালা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও তার দাবি। হুমকি-ধমকির অভিযোগ মিথ্যা।
×