ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয়বহুল ডিগ্রী ॥ প্রাইভেট ভার্সিটিতে খরচ ৪ গুণ বেশি, তবে পাবলিকে শুভঙ্করের ফাঁকি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ অক্টোবর ২০১৫

ব্যয়বহুল ডিগ্রী ॥ প্রাইভেট ভার্সিটিতে খরচ ৪ গুণ বেশি, তবে পাবলিকে শুভঙ্করের ফাঁকি

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বিষয়ের নাম ‘হেলথ সায়েন্স।’ কেউ কেউ বলেন, ‘পাবলিক হেলথ।’ এই মুহূর্তে বেশ চাহিদাসম্পন্ন বিষয়টিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করতে একজন শিক্ষার্থীকে ব্যয় করতে হয় আড়াই লাখ টাকা। অথচ কোন কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ১০ মাসের একটি কোর্স পড়ানোর নামে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। কেবল এই একটি বিষয়েই নয়, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচের বিশাল ব্যবধান স্পষ্ট এখন প্রায় সকল বিষয়েই। এই ব্যবধান প্রাইভেটে পাবলিক অপেক্ষা গড়ে চারগুণ বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি। তবে বাস্তবতা হলো, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ালেখার মোট খরচ আসলে কম নয়। এখানে শিক্ষার্থীর প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যয় বহন করছে রাষ্ট্র। ফলে খরচ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হলেও তার ভার বহন করতে হয় না ব্যক্তিকে। পড়ালেখায় শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের ব্যয় নিয়ে জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র। একই সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে মানহীন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা বাণিজ্যের নানা তথ্য। মানহীন ও নামসর্বস্ব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন কাড়িকাড়ি অর্থ নেয়ার অভিযোগ যেমন এসেছে তেমনি বেরিয়ে এসেছে কিছু ভাল মানের প্রতিষ্ঠানের তথ্যও। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান কার্যক্রম নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্ত্রাস ও সেশনজট কমানো আর বিদেশমুখী প্রবণতা রোধের স্বপ্ন নিয়ে ১৯৯২ সালে দেশে যাত্রা শুরু হয়েছিল শিক্ষার নতুন এক ধারা যার নাম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৯ বছর পরেও অধিকাংশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের সওদাগরি মানসিকতার বলি হচ্ছে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ভাল করার চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত সফল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০ থেকে ১১টির বেশি নয়। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আয় বাড়াতে পারছে না। ফলে সরকারী অর্থের ওপরই বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্ভর করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানেও না তার পড়ালেখার খরচ কত? ৮৩ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মান ভাল মাত্র ১০টির সন্ত্রাস ও সেশনজট কমানো আর বিদেশমুখী প্রবণতা রোধের স্বপ্ন নিয়ে ১৯৯২ সালে দেশে যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় শত সমালোচনা ও বিতর্ককে কাটিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান চলে এসেছে সফলতার তালিকায়। শিক্ষা ব্যয়ের পরিমাণ নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও যেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়াও নিশ্চিত হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা। সরকারের নিয়ম নীতি মেনে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার স্বার্থে যেখানে বন্ধ হয়েছে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের ভার্তির সুযোগ। কিন্তু মানসম্মত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কত? কতটি আসলে শিক্ষা দিচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ভাল করার চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত সফল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০টির বেশি নয়। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েরই আজো নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন এমন ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, কিন্তু হতাশাজনক হলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১০টি মান ভাল। বাকিগুলোর মান ‘মোটামুটি’, অনেকগুলোর মান ‘খুব খারাপ। এমন চিত্রই উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক জরিপের তথ্যে। কমিশনের তথ অনুযায়ী ঢাকাসহ সারাদেশে ৮৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোঃ মহব্বত খান বলেছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব একই মানের নয়। শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা, শিক্ষকের মান, অবকাঠামো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র সবদিক থেকে পার্থক্য রয়েছে। কমিশনের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ৮৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টির মান মোটামুটি। তার মধ্যে দশটি ভাল মানের। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করার অভিযোগ তারা পেয়েছেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে অলিগলিতে ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এগুলোর মান খুব খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ক্ষেত্রে একক কোন কাঠামো নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ব্যয়কে ভিত্তি করে টিউশন ফি নির্ধারণ করে থাকে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ ৮৩টি মধ্যে ৭২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসই নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোকানের মতো ভাড়া করা ফ্লোরে চলছে শিক্ষাদান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বার বার স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার তাগিদ দিলেও কাজ হচ্ছে না। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় খ-কালীন শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল। আইনে বলা আছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিজে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে তার অধীনে কার্যক্রম চালাবে। বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না। এটাকে সেবা খাত হিসেবে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। মঞ্জুরি কমিশনের সদস্যরাই বলছেন, তারা নিয়মিত মনিটর এবং জরিপ করে থাকেন। তবে কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি সেবাখাত হিসেবে চলছে না। ভাল মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ট্রাস্টি বোর্ডের একটি বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য ট্রাস্টিরা ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। অথচ আইন অনুযায়ী টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। মঞ্জুরি কমিশনের এক কর্মকর্তা বলছিলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারকে জিম্মি করে ফেলেছে। তারা কোনো নির্দেশনাই মানছে না। শুধু কালক্ষেপণ করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই তারা আদালতে যায়। আদালতের আদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালায়। ফলে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণায়ের কোন কিছুই করার থাকে না। আবার অধিকাংশ মানহীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করার জন্য সরকার সমর্থন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। মৌলবাদী কর্মকা-ের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতপন্থী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও করছে একই কাজ। সরকার সমর্থক কিছু অসাধূ প্রভাবশালী ও টাকার লোভে গিলছে জামায়াতীতের অফার। এসব কারণে মানহীন বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সরকারী এ্যাকশন দৃশ্যমান হয় না। ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের বিরুদ্ধে সরকার বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সর্বশেষ কুইন্স ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় দুটি সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু আদালতের আদেশ নিয়ে তারা ফের শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২৫ বিশ্ববিদ্যালয় আইন অমান্য করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এদের তিনটি আদালতে স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছে, ১৭টি চলছে মামলা করে। মান প্রশ্নবিদ্ধ, তবু একেকটি বিষয়ে পড়ার খরচ পাবলিকের কয়েকগুণ দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৩৭টি, বিপরীতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যায় আছে ৮৩টি। এ দুই ধারার প্রতিষ্ঠানে প্রায় প্রতিটি বিষয়েই পড়ালেখার খরচে রয়েছে বিস্তর তফাত। এই তফাতের চিত্রের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে দিতে হয় কত টাকা? বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও অন্যান্য সরকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স করতে শিক্ষার্থীদের মোট ব্যয় চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। এর মধ্যে অনার্সের ব্যয় তিন থেকে চার লাখ। ঢাকাসহ সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয় অনার্স ও মাস্টার্স করতে। বিপরীতে একটি ভাল মানের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করতে প্রয়োজন ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রায় চারগুন বেশি। এর মধ্যে অনার্স ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। তবে দেশের প্রথম সারির হাতেগোনা ৫ থেকে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয়ের পার্থক্য অনেক। অনেক প্রতিষ্ঠানে চার লাখ টাকায়ও অনার্স সম্পন্ন করা যায়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। ট্রিপল ই বা ইলেক্ট্রিক এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বুয়েট বা অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয় চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ৪ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর্কিটেকচার বিষয়ে পড়ার আগ্রহ অনেকেরই। তবে বিষয়ে যাদের পড়ার আগ্রহ বেশি তাদের প্রথম পছন্দের স্থান বুয়েট, ঢাকাসহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে ডিগ্রী অর্জনে শিক্ষার্থীর ব্যয় আড়াই থেকে ৪ লাখ টাকা। তবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ থেকে ১২ লাখ। সাধারণ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ থেকে ৫ লাখ। ফার্মেসিতে অনার্স ও মাস্টার্স করতে ঢাকাসহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সোয়া আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয় ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা। তবে চার লাখ টাকায়ও পড়ার সুযোগ আছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। ইংলিশে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর ব্যয় সোয়া দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। বিবিএ, এমবিএ নেই দেশের এমন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান কোচিং সেন্টারের মতো একটি বা দুটি কক্ষে কার্যক্রম চালাচ্ছে তারাও বিবিএ, এমবিএ শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে প্রাইভেটে খরচেরও আছে তফাত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেগুলার পড়তে বিবিএতে তিন লাখ। এমবিওতে প্রায় এক লাখ। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ও সান্ধ্য পড়ালেখায় ব্যায় প্রায় ১০ লাখ। অনেকটা প্রাইভেটভাবেই এই কার্যক্রমটি চলছে ঢাকা, রাজশাহীসহ হাতেগোনা কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ১০ থেকে ১২ লাখ লাখ। এমবিএতে ২ থেকে আড়াই লাখ। হেলথ সাইন্স, পাবলিক হেলথ, ফুড এ্যান্ড নিউট্রেশন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি অনার্স করতে ব্যয় হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারী কলেজগুলোতে এ বিষয়ে বিএসসি সম্পন্ন করতে ব্যয় হয় অন্তত ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। অন্যদিকে অধিকাংশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ নেই। যেখানে আছে সেখানে ব্যয় ১০ থকে ১৩ লাখ টাকা। মাত্র ১০ মাসের একটি কোর্সে পড়িয়েও ১৩ লাখ টাকা নেয়ার নজির আছে। পাবলিক ও প্রাইভেটে পড়ালেখার এমনই খরচের বিস্তর তফাৎ আছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মাইক্রোবায়োলজি, ফিজিক্স, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিকস এ্যান্ড কমিউনিকেশন, মার্কেটিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন টেকনোলজি, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন, বায়ো-কেমেস্ট্রিস, টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়েও। একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আসছে ॥ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণহীন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এতদিন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চললেও এবার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রমকে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ফিসহ সকল খরচ নিয়মিত খতিয়ে দেখবে কমিশন। কেবল তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে কী পড়ানো হচ্ছে, কিভাবে পড়ানো হচ্ছে, এমনকি সনদপত্র দেয়ার সকল প্রক্রিয়াকে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার নামে করা অপকর্মে ক্ষুব্ধ মন্ত্রণালয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষার প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা ছাড়াই কোনমতে ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়ে সনদপত্র দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করে করে ইচ্ছে মতো লাখ লাখ টাকা আদায় করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সরকারের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অনেক পরিচিত ও স্বনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের আড়ালে চলা বাণিজ্য। ক্যাম্পাস, শিক্ষক, লাইব্রেরী নেই। তবুও ভাড়া করা বাড়ির অংশ বিশেষে ইংরেজী ভাষায় চটকদার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চলছে সার্টিফিকেট বিক্রির রমরমা ব্যবসা। লোকদেখানো ভর্তি পরীক্ষা, কাড়ি কাড়ি টাকা বেতন-ভাতার ফিরিস্তি। ক্লাস না করিয়ে কোর্স শেষ। খেয়াল খুশিমতো পরীক্ষা গ্রহণ। যত টাকা তত পাস ভিত্তিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন আর ডিগ্রি দান। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তি হলো, ‘তারা সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন নিয়েছে’, কেউ বলে ‘তাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে’ আবার কেউ বলে, ‘তারা ইউজিসির অনুমোদন নিয়েছে তাই তাদের সকল কর্মকা-ই বৈধ’-এমন সব অদ্ভুত যুক্তি দাঁড় করিয়ে নামে বেনামে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা চলছে দেশজুরে। কেবল সাধারণ মানুষই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি এমনকি খোদ ইউজিসিরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিমত হলো, কোন ধরনের যোগ্যতা না থাকলেও শক্ত আইনী ক্ষমতার অভাব এবং এর সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যুক্ত থাকায় ইউজিসি এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না। অযোগ্য হওয়ায় সরকার নিষিদ্ধ করলেও এরা চলে য়ায় আদালতে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ হলো, ভর্তির সময়ে অর্ধশতাধিক সুযোগ সুবিধার কথা বলে গণহারে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিশ্চিত না করেই হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এখানে আয়-ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা না থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করে করে ইচ্ছে মতো লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। ভর্তির সময় আকর্ষণীয় প্রসপেক্টাসে ফিয়ের যে তালিকা থাকে তা বাস্তবায়ন হয় না কখনই। জানা গেছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের বেহাল দশার কথা চিন্তা করেই নিয়ন্ত্রণহীন একাডেমিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণের আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এ লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করবে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। শিক্ষার এই বেহাল দশা দ্রুত কাটাতে চায় কমিশন। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পড়ানো হয়? কিভাবে পড়ানো হয়? সনদ কীভাবে দেয়া হচ্ছে তার সব কিছুই আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃত খরচ বহুগুণ, তবে বহন করছে রাষ্ট্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃশ্যত শিক্ষার্থীদের অর্থ ব্যয় কম দেখা গেলেও মোট ব্যয় অনেক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মোট শিক্ষা ব্যয়ের ৯০ ভাগ পর্যন্ত বহন করে রাষ্ট্র। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা বিজ্ঞান, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ব¦বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের ব্যয় বেশি। একজন শিক্ষার্থীর বার্ষিক মাথাপিছু ব্যয় দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা। চার বছরের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকার ব্যয় করে প্রায় ১০ লাখ টাকা। ফলে ব্যয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই বেশি হয়। তবে তা বহন করে রাষ্ট্র। চলতি অর্থবছরেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য দুই হাজার ১৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার বাজেট বরাদ্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আলাদা আলাদাভাবে বাজেট বরাদ্দ করে। শিক্ষা খাতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপ্রতুলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও দেশের পাবলিক শিক্ষা খাতে উচ্চ শিক্ষাস্তরের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ব্যয়ই বহন করছে রাষ্ট্র। এই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর বার্ষিক মাথাপিছু ব্যয় সর্বাধিক দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৮ টাকা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ ২৮ হাজার ৬৪৮ টাকা। দেশের উচ্চশিক্ষা তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক প্রতিবেদনে উচ্চ শিক্ষার ব্যয় ও তাতে রাষ্ট্রীয় অবদানের বিষয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে। কমিশন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আয় বাড়াতে পারছে না। ফলে সরকারী অর্থের উপরই বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্ভর করতে হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা অর্জনে একজন শিক্ষার্থীর মোট শিক্ষা খরচের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ অর্থ সরকার অর্থাৎ জনগণের টাকায় বহন করা হচ্ছে। এই অবস্থায় শিক্ষার উচ্চ মান ধরে রাখতে হলে রাষ্ট্রের বরাদ্দের বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব আয় বাড়ানো জরুরী। জানা গেছে, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এ সময় দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা দুই লাখের মতো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তি ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি, ক্যাম্পাস সহিংসতা এবং সেশনজটের কারণে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ও হচ্ছে। বিশেষ করে চার বছরের স্নাতক শেষ করতে ছয় বছর ও এক বছরের স্নাতকোত্তর শেষ করতে শিক্ষার্থীদের দুই থেকে আড়াই বছর লাগছে। শিক্ষা জীবন শেষ করতে বাড়তি সময়ের কারণেও রাষ্ট্রকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। প্রতিবেদনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক মাথাপিছু ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে দেখা গেছে ঢাকা, রাজশাহী, বাংলাদেশ প্রকৌশল, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, ইসলামী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খুলনা, উন্মুক্ত, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শেরেবাংলা কৃষি, চট্টগ্রাম প্রকৌশল, খুলনা প্রকৌশল, ঢাকা প্রকৌশল, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জগন্নাথ, কুমিল্লা, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ভেটেরেনারি, সিলেট কৃষি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বেগম রোকেয়া, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু গড় ব্যয় বিগত বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ কৃষি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি, রাজশাহী প্রকৌশল, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু গড় ব্যয় গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দুই হাজারেরও বেশি কলেজে ২০ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। কমিশন থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন রাজস্ব বরাদ্দ দেয়া হয় না। নিজেদের আয় থেকেই ব্যয় করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষার্থী প্রতি বার্ষিক মাথাপিছু গড় ব্যয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় লাখ টাকারও বেশি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ ২৮ হাজার ৬৪৮ টাকা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৮ টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ ২৩ হাজার ২০৩ টাকা। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লাখ, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক লাখ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় এক লাখ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সোয়া এক লাখ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সোয়া এক লাখ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লাখ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লাখ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সোয়া এক লাখ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লাখ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এ দেড় লাখ টাকা রাষ্ট্র সরাসরি প্রতিবছর শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় করে। এর বাইরে প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর আবাসিক এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ, একাডেমির পানি, বিদ্যুতসহ অন্যান্য ব্যয় আছে। যার পরিমাণ অনেক বেশি হলেও সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষার্থীর শিক্ষার পেছনে সরাসরি রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের প্রতিবেদনটি নিয়ে কাজ করেছেন ইউজিসির এমন কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের শিক্ষায় সরকারী বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন আছে তা সত্যি। তবে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে রাষ্ট্রের অবদান অনেক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যয় শিক্ষার্থী প্রতিবছর করছে তার অধিকাংশই বহন করছে রাষ্ট্র। তবে শিক্ষা ব্যয় বাড়ার সঙ্গে তার মিলিয়ে রাষ্ট্র বরাদ্দ করতে পারছে না। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সহযোগিতা করা জরুরী। এদিকে জনগণের টাকায় উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করলেও শিক্ষা লাভের পর জনগণের জন্য সেই শিক্ষার্থীর ভাবনা কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদসহ অনেকেই। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবীর বলছিলেন, একজন চিকিৎসক, প্রকৌশল, কৃষিবিদ বানাতে পারিবারিক খরচের চেয়ে রাষ্ট্র বেশি খরচ করছে। তারা সমাজকে কতটুকু দিচ্ছে তা হিসাব করা প্রয়োজন। নবীন প্রজন্মকে বুঝতে হবে তারা দেশের সাধারণ মানুষের টাকায় লেখাপড়া করেছে। তারা দেশ বা সমাজের উন্নয়ন নয়, নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লে হবে না। এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, আসলে উচ্চ শিক্ষাদান ততটাই হওয়া দরকার যতটুকু রাষ্ট্রের প্রয়োজন। না হয় কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে যদি বেকার বানানো হয় তাহলে সেটা হবে অর্থের অপচয়।
×