ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এভাবে বাংলাদেশকে আর অস্থিতিশীল করা যাবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ অক্টোবর ২০১৫

এভাবে বাংলাদেশকে আর অস্থিতিশীল করা যাবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ॥ দুই বিদেশীকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ধরনের ‘ঘটনা ঘটিয়ে’ বাংলাদেশকে আর ‘অস্থিতিশীল’ করা যাবে না। বুধবার মিরপুর সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ কর্মকর্তাদের পরিবারকে ফ্ল্যাট হস্তান্তর ও ‘শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের কূটনীতিক পাড়ায় সিজার তাভেলা নামের এক ইতালীয় এনজিওকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় রংপুরের এক গ্রামে একই কায়দায় খুন হন জাপানী নাগরিক কোনিও হোসি। এ দুই ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্জন যখন বিদেশে প্রশংসিত হয়, তখনই ‘এমন ঘটনা ঘটানো হয়’ যাতে বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট হয়’। ‘তবে এটুকু আমি আপনাদের আশ্বাস দিতে পারি, আজকে বাংলাদেশের অবস্থা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে পারবে না।’ তাভেলা হত্যায় পুলিশ এখনও কাউকে ধরতে না পারলেও কোনিও হত্যায় জড়িত সন্দেহে রংপুরের এক বিএনপি নেতাসহ দুজন গ্রেফতার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রংপুরে যিনি মারা গেছেন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, নামাজ পড়তেন। অথচ তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছি এবং এর তদন্ত করে দোষী যারা, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা নিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, এ ঘটনাগুলো দেখে মনে হয়, এটা কোন দুর্ঘটনা না। পরিকল্পিতভাবে কোন না কোন মহল এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কূটনীতিক, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে পিলখানা বিদ্রোহ ও বিদেশে শান্তি মিশনে নিহত কয়েকজনসহ সশস্ত্র বাহিনীর ৬৮ জন কর্মকর্তার পরিবারের মধ্যে মিরপুর ডিওএইচএসের ৭৪টি ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করেন। এছাড়া মিরপুর সেনানিবাসে ‘সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ’-এর নবনির্মিত একাডেমিক ভবন ‘শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স’-এর উদ্বোধন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। তা যদি করতে না হতো তাহলে আরও অনেক বেশি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল। দুর্যোগ মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ করে সেনাবাহিনী দ্রুততম সময়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত হয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা বরাবরই প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী যাতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের নীতিনির্ধারণীতে বলিষ্ঠ অংশীদার হতে পারে সেজন্য সরকার কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে শান্তি মিশনের আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেখানে আরও বেশি নারী শান্তিরক্ষী সংযুক্ত করার কথা উঠেছে। ‘আমি তাদের কথা দিয়ে এসেছি, শান্তি মিশনে যত নারী সদস্য দরকার আমরা দিতে পারব। কাজেই এ প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভাল।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচীর কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ‘জ্ঞানভিত্তিক সুশৃঙ্খল ও পেশাদার’ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মস স্কুলসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সশস্ত্র বাহিনীর নিহত কর্মকর্তাদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বজন হারানোর ব্যথা আমি বুঝি।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।
×