ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানুষের সৃষ্ট বিপর্যয় ঠেকাল প্রকৃতি

তিন যুগ পর করতোয়ার উত্তাল স্রোতধারায় নৌকাবাইচ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৮ অক্টোবর ২০১৫

তিন যুগ পর করতোয়ার উত্তাল স্রোতধারায় নৌকাবাইচ

সমুদ্র হক ॥ তিন যুগ পর করতোয়া নদীর পানি টইটুম্বুর হওয়ায় দুই তীরের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। অতি আনন্দের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে নৌকাবাইচের আয়োজন করে। নদী তীরের বগুড়া সদরের শাখারিয়ার মানুষের উচ্ছাসের কথা- ৩৫ বছর পর জোয়ার এসে করতোয়া নদীতে নৌকাবাইচ হল। করতোয়ার এমন উত্তালের ধারায় যমুনার আরেক শাখা নদী বাঙ্গালীর তীরেও বাইচের নৌকার ঢোলক কাসর বেজেছে। মানুষের সৃষ্ট বিপর্যয়ে মরা গাঙে পরিণত হওয়া করতোয়াকে নিয়ে যত ভাবনা ছিল প্রকৃতিই তার অনেকটা সমাধান করে দিয়েছে। গেল শতকে ৮০’র দশকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের চকরহিমপুর এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে নদীর স্রোতের ধারা উপেক্ষা করে রেগুলেটর (জলকপাট) নির্মাণ করা হয়। শুধু একটি অঞ্চলকে বন্যার থাবা থেকে কথিত রক্ষা করতে আপন বেগে চলা নদীর প্রবাহকে রুদ্ধ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই পরিবেশের বিপর্যয় শুরু হয়ে যায়। গোবিন্দগঞ্জ থেকে বগুড়া হয়ে ভাটিতে অনেক দূর পর্যন্ত নদী শুকিয়ে যেতে থাকে। বগুড়া শহরের ধার ঘেঁষে বয়ে যাওয়া উত্তাল করতোয়াকে আর চেনাই যায় না। মরা গাঙে পরিণত তো হয়েছেই ডোবা না খাল তাও বোঝা যায় না। নদীকে হত্যা করতে দুবৃত্তের কোদাল পড়ে। নদী ভূমি দখল করে অবকাঠামো নির্মাণ। বালি উত্তোলন করে ভূগর্ভে ভ্যাকুয়ম সৃষ্টি হয়ে ভূকম্পকের বৃত্তের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। আবর্জনা ফেলে দূষণ করা হয়। এভাবে নদীর টুঁটি চেপে ধরায় প্রকৃতিও প্রতিশোধের সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। বাঁধ দিয়ে নদীর গতি হয়তো ঠেকানো যায়, সাগরের টান থেকে ফেরানো যায় না। নদী সাগর পানের পথ খুঁজে নিতে এবারের বন্যায় গোবিন্দগঞ্জের কাছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের বাঁধ ভেঙ্গে দিলে বহু বছর পর প্রান ফিরে পায় করতোয়া। ঢলের পানিতে ভরে ওঠে মৃতপ্রায় করতোয়া, অনেকটা ফিরে পায় যৌবন। মনে হবে করতোয়া নিজেই লাইভ সাপোর্ট সরিয়ে দিয়ে বয়ে যায়। সদরের শাখাািরয়াসহ আশেপাশের দশ গাঁয়ের তরুণ নৌকাবাইচের আয়োজন করে। কয়েকটি নৌকা অংশ নেয়। হাজারো মানুষ দুই তীরে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেয়। মুরুব্বিরা বলতে থাকেন আর যেন কখনও ভুল পদক্ষেপ নিয়ে করতোয়ার গতিকে রুদ্ধ করা না হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিকেলে সোনাতলার রানীরপাড়া গ্রামে নবীন আনোয়ার কমরেড সংঘের উদ্যোগে বাঙ্গালী নদীতে ১২ টি নৌকা অংশ নেয়বাইচে। সদরে শাখারিয়া ও সোনাতলায় চরমধুপুর বিজয়ী হয়। রানীরপাড়া গ্রামে বিজয়ী ও বিজিতের মধ্যে পুরস্কার দেন বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নান। স্রোতধারা ধরে রেখে দুবৃত্তের থাবা থেকে নদী রক্ষার দাবি জানায় এলাকার মানুষ।
×