ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিকলে বাঁধা জীবন!

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৮ অক্টোবর ২০১৫

শিকলে বাঁধা জীবন!

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ৭ অক্টোবর ॥ বাউফলে শিকলে বাঁধা পড়ে গেছে লিজা (১৮) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রীর জীবন। গত তিন মাস ধরে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে। লিজার বাবা মৃত ইউনুস হাওলাদার। উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের খাসেরহাওলা গ্রামের তালীমুদ্দিন নুরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসার কাছে তার বাড়ি। লিজার বড় বোন সেলিনা বেগম জানান, একই ইউনিয়নের মহেসেন উদ্দিন ফাজিল মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণীতে পড়ালেখা অবস্থায় ওই মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয় লিজার। এরপর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে চলে এ সম্পর্ক। ২০১৩ সালের দিকে ওই ছেলেটি আলিম পাস করে মাদ্রাসা থেকে চলে যাওয়ার পর লিজার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি। এর পর থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে লিজা। এ অবস্থায়ও পড়ালেখা চালিয়ে যায়। লিজা ২০১৪ সালে ফাজিল (বিএ) প্রথম বর্ষে ওঠার পর পারিবারিকভাবে ওই ছেলের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়। তখন ছেলেটি নগদ দুই লাখ টাকা দাবি করায় বিয়ে আর হয়নি। এ ঘটনার পর লিজা আবারও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বরিশালে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেয়া হলেও কোন উন্নতি হয়নি। বরং ঘর থেকে বের হয়ে অন্যত্র চলে যায়। ভাংচুর করে, পুকুরে ঝাঁপ দেয়। লোকজনের পরামর্শে লিজাকে বগা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক কবিরাজকে দেখিয়ে চিকিৎসা নিলেও কোন উন্নতি হয়নি বরং আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর বাধ্য হয়ে গত তিনমাস আগ থেকে লিজার পায়ে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এভাবে শিকল পরা অবস্থায় কাটছে লিজার দিন রাত। কখনও ঘরের খুঁটির সঙ্গে আবার কখনও ঘরের বাইরে গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে লিজাকে বেঁধে রাখা হয়। লিজার বড় ভাই বাবুল হাওলাদার জানান, জীবিকার তাগিদে তারা দুই ভাই ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করেন। বাড়িতে মা, এক বোন আর ভাইয়ের স্ত্রী থাকেন। বোনের (লিজা) এ অবস্থা দেখে তাদের ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতার কারণে উন্নত কোন চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
×