ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার এমপি লিটনের বিরুদ্ধে লুটপাট, ভাংচুরের অভিযোগে মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৯ অক্টোবর ২০১৫

এবার এমপি লিটনের বিরুদ্ধে লুটপাট, ভাংচুরের অভিযোগে মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ৮ অক্টোবর ॥ দরিদ্র অসহায় শিশুকে পিস্তলের গুলি ছুড়ে আহত করার ঘটনায় সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সংসদ সদস্যপদ বাতিল, অবিলম্বে তাকে গ্রেফতারের দাবির পাশাপাশি এখন পক্ষেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সোচ্চার হতে শুরু করেছে। শিশুকে গুলি করে আহত করার বিষয়টি নিয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া থাকলেও তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপরতা নাই তবে সুন্দরগঞ্জের সামগ্রিক অবস্থা থমথমে। এদিকে এমপি লিটনের পক্ষ সমর্থন করে সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগ বুধবার রাতে এক জরুরী সভায় জামায়াত-শিবির চক্রের অপতৎপরতা প্রতিরোধসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে এমপি লিটনসহ আরও ১০ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় হামলা, লুটপাট ও ভাংচুরের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টার সময় সাংসদ লিটন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি ছুড়ে আহত করে। পরে তিনি সকাল ৮টার দিকে সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামে যান। সেখানে মৃত মোহাম্মদ আলী ম-লের ছেলে ভটভটি চালক হাফিজার ম-লের বসতবাড়িতে দলবল নিয়ে আকস্মিকভাবে হামলা চালান। তারা বসতবাড়ি ভাংচুরসহ জিনিসপত্র লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটায়। এতে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে হাফিজার ম-ল বাদী হয়ে গত ৬ অক্টোবর সাংসদ লিটনসহ ১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ গোপনে তদন্ত চালিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে এটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করে। পরে বুধবার রাতে মামলার বিষয়টি পুলিশ সূত্রে প্রকাশ করা হয়। এ ব্যাপারে মামলার বাদী হাফিজার রহমান জানান, তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে গত রবিবার আমার বাড়িতে ভাংচুর চালায় এমপি লিটন ও তার লোকজন। ঘটনার সময় এমপি লিটন নিজেই উপস্থিত থেকে সেখানে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েন। এরপর লিটনের লোকজন আমার বাড়ির ঘরের টিন ও মালামাল এমপির মালিকানাধীন হিমাগারে নিয়ে যায়। এরপর মোবাইলফোনে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় এমপির হিমাগার থেকে টিন ও বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করে হাফিজার রহমানকে ফেরত দেন। স্থানীয় লোকজন জানান, এমপি লিটনের আক্রোশের শিকার হয়ে হাফিজার রহমানের পরিবারটি এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই মিল্টন জানান, তিনি এমপির লিটনের হিমাগার থেকে হাফিজার রহমানের বাড়ির টিন ও আসবাবপত্র উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন। এর বেশি আর কিছু তিনি জানেন না। মামলা নিয়ে এই রাখঢাক করার বিষয়টি সম্পর্কে জানা গেছে, অভিযোগটি থানায় দায়ের হওয়ার পর এমপি লিটনের লোকজন তার পক্ষ থেকে থানায় যাতে মামলাটি না হয় সে ব্যাপারে জোর তৎপরতা চালানো হয়। কিন্তু এমপি লিটনের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় অবস্থানের কারণে পুলিশ শেষ পর্যন্ত তদন্ত করে মামলাটি গ্রহণ করে এবং সাংবাদিকদের অবহিত করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এমপি লিটনের অবিলম্বে গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এমপির পদ থেকে অপসারণ এবং দ্রুত বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিচারের দাবিতে একটি রঙ্গিন ও দামী কাগজে ছাপানো সুন্দরগঞ্জ এলাকাবাসীর পক্ষে একটি পোস্টার গোটা সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকার সর্বত্র লাগানো হয়। এদিকে এমপি লিটনের লোকজন এবং কতিপয় আওয়ামী লীগ সমর্থক দলবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ইতোমধ্যে কিছু পোস্টার ছিঁড়েও ফেলেছে। সৌরভের বাবা-মা চরম আর্থিক সঙ্কটে ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে ৪র্থ শ্রেণী পড়ুয়া ১০ বছরের শাহাদাত হোসেন সৌরভ। চোখে মুখে হতাশার ছাপ। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে পুলিশ হবে। কিন্তু সম্প্রতি এমপি লিটনের ছোড়া গুলিতে তার দু’পায়ে ক্ষত হলে প্রশ্ন জেগেছে মনে এখন সে হাঁটাচলা করতে আর পুলিশ হতে পারবে কী না! গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এমপি লিটনের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্র শাহাদাত হোসেন সৌরভ ও তার পরিবারের সদস্যদের চোখে মুখে এখন শুধুই আতঙ্ক আর হতাশার ছাপ। দরিদ্রতার কারণে অসুস্থকালে ছেলের মুখে ভাল-মন্দ কিছু তুলে দেবেন সে আর্থিক সঙ্গতিও তাদের নেই। এ অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় সবমিলেই ভাল নেই তারা। সৌরভের মা সেলিনা বেগম জানান, আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হবে কী না তা নিয়ে সন্ধিহান তিনি। চিকিৎসকরা ভাল হবে বললেও দুশ্চিন্তার শেষ নেই মায়ের মনে। অন্যদিকে ফেরিওয়ালা বাবা সুজা মিয়া জানান, এমপির লোকজন তাদের বাড়ি গোপালচরণ এলাকায় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে যে, তারা নাকি আমাদের তিন চার লাখ টাকা দিয়ে গেছে। অথচ আমরা ৫ টাকাও নেইনি। এ অবস্থায় বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। তিনি জানান, ৭ দিন থেকে ব্যবসা বন্ধ থাকায় বর্তমানে তার টাকা পয়সা সব ফুরিয়ে যাওয়ায় চরম আর্থিক সঙ্কটে রয়েছেন তিনি। তিনি জানান, এ পর্যন্ত শুধুমাত্র সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং রংপুরের ভিন্ন জগতের মালিক তাকে ১০ হাজার টাকা করে সাহায্য করেছে। আর এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। চিকিৎসকরা জানিয়েছের এখনও তাকে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ থাকতে হবে। কিন্তু এখানে আরও এতদিন থাকার সামর্থ্য তাদের নেই। এ অবস্থায় চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। হাসাপতালের চিকিৎসক, শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বাবলু কুমার সাহা জানান, তার আরও চিকিৎসা প্রয়োজন। তাকে আরও দু’সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হবে। উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর শুক্রবার ভোরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ব্র্যাক মোড়ে ব্যায়াম করার সময় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় সৌরভ।
×