সুর-ঈশ্বর
মাহফুজ রিপন
হঠাৎ গুলির শব্দ। উড়ে গেল একুশটি জালালী কবুতর। দোহারকষ্টে আগুনের ঘুম ভাঙ্গে। কামাখ্যার গারদ ভেঙ্গে হেয়ালি সময়, জড়ো হয় প্রতিশোধের নেশায়। পায়রার হাহাকারে আকাশ ভারি হয়- জাদুকরের সুখের ঘুম তখনও ভাঙ্গে না। নদীরা নাম কিত্তন করে, দক্ষিণা দেবী পদ্মাসনে বসে। বাতাসে ওড়ে কষ্টের পালক। রাত আসে রাত চলে যায়, হারিয়ে যায় ত্রিকাল। অন্তিম যাত্রালোকে- জাদুঘুম বিদায় নেয়। ফিরে আসে কপোত জাদুর ডানায়। হাজার বছর নির্জন শূন্যতায়- আবারও গুলির শব্দ শোনা যায়! সুর ও ঈশ্বরের ডাকে বৃষ্টি নামে- মিলিয়ে যায় শোক ফিরে আসে প্রেম।
বৃষ্টি কি আসলেই প্রেমিকের গান?
চৈতী আহমেদ
জীবন যাপনে আমি যতবার প্রেমে পড়েছি সেই ডালিম কুমারেরা প্রত্যেকে এসেছিলো আষাঢ় মাসে সাজঘরের দুয়ারে, হলদে রঙ ব্যাঙডাকা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে, চোখ বলতে তাদের যা ছিলো, মেঘের কোলাজ! মানকচু পাতার আড়াল দিয়ে তারা যখন এই ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলো তখন জলের ঝাঁড়বাতির ঘুঙুরে বাজছিলো এক অভিনব ঐন্দ্রজালিক পাখোয়াজ! ত্বকের গভীরে জাগরে যে আজ অজগর; নিঃশ্বাসে তার গুন গুন সেই অতীত গানের গণিত, এমন আকালের দিনে আমি তালুতে তৃষ্ণা রেখে বৃষ্টির কাছে পাতি হাত, যারা এ গান বোঝে না তারা কি প্রেমিক নাকি বাগীশ্বর দিহান!
দৃশ্যটাকে কিভাবে সাজালে, সবাই বলবে সুন্দর
জাহিদ হায়দার
তুমি আসবে উত্তর দিক থেকে, তুমি দক্ষিণ।
মুখোমুখি হতেই ভালোবাসার সহজ চোখে
দু’জন তাকাবে দু’জনের দিকে।
গভীর আবেদন চাই।
না, এই দৃশ্য বহু ব্যবহৃত, চলবে না।
নতুন কিছু করো।
ঠিক আছে, তুমি আসবে পশ্চিম দিক থেকে।
তোমার পেছনে ঝড়ো হাওয়ায় উড়ছে লাল মেঘ।
তুমি উত্তর, তোমার পেছনে অনেক দূরে
নীলের ভেতর একটি ধাবমান ড্রোন।
খেয়াল করো এবার ভেঙে ফেলা হলো দিকের ধারণা।
না, হলো না সুন্দর।
ঠিক আছে, দু’জন যখন কাছাকাছি হবে
মাঝখান দিয়ে চলে যেতে পারে বৃষ্টিভেজা একটি লাল গাড়ি।
অথবা গুলি ছুড়তে ছুড়তে দৌড়ে যাচ্ছে এক তরুণ।
না, এসব চলবে না।
তা হলে মাঝখান দিয়ে যেতে পারে শবযাত্রা।
না, এটা খুববেশি নেগেটিভ। অনেক হয়েছে। হচ্ছে।
তা হলে, তোমরা দু’জন একটি বৃত্তের দু’পাশ ধ’রে হাঁটতে থাকবে,
বাড়াবে না গতি। তুমি সামনে দেখছো শুধু বৃত্তরেখা।
পেছনে ফেরাবে না মুখ। ওর পিঠ দেখছো তুমি।
কখন মুখোমুখি হবে জানো না দু’জন।
তুমি চলার কষ্টে বসে পড়বে একসময়,
তুমি ক্লান্ত হতে হতে একসময় পৌঁছে যাবে ওর কাছে।
না, না, এই দৃশ্য শুরু হতেই সবাই বুঝে যাবে
একসময় মেয়েটি অথবা ছেলেটি দাঁড়িয়ে পড়বে বৃত্তরেখায়।
তা হলে, দু’জন পরস্পরকে
দেখার দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকো। নড়বে না।
মাঝখান দিয়ে রাতদিন চলতে থাকুক মাথা নিচু করা মানুষ।
তাদের চোখ আর পায়ের তলের মাটি ফুড়ে
উড়বে, উড়তেই থাকবে লালনীলকালো অজস্র বেলুন।
হ্যাঁ, এবার কেউ কেউ বলতে পারে, দৃশ্যটা নতুন, সুন্দর।
০৫.০৯.২০১৫
তোমার অপেক্ষায়
নূরুল ইসলাম নয়ন
আজ হাজার বছর পরে তুমি এসেছো
এই মন্দিরে
জানি পূজা করবে, কিন্তু কতদিন
থেকেছিলে উপোস, খুবই জানতে ইচ্ছে করে।
হৃদয় কুটিরে তুমি আসবে জেনে জোনাকিরা আলো ছড়িয়েছে
আমার চারিপাশে।
মেঘলা আকাশ আঁধার কেটে সূর্য হেসেছে
রঙ্গিন চোখে।
পাখিরাও গুন গুন করে গাইছে গান ফুলগুলো ফুটে উঠে
ছড়িয়েছে ঘ্রাণ।
মরা রক্তজবা ঝরে গিয়ে আজ ফুটেছে লাল গোলাপ।
শুধু তোমাকে স্বাগত জানাবে বলে পুরো পৃথিবীই হয়েছে নীরব।
চাষাবাদের গল্প
জাফরুল আহসান
আগাছায় ভরা আকর্ষিত এ জমিন তোমার
অনাহারী সব কীটপতঙ্গে করেছে সাবাড়
অনাবাদী জমি চাষাবাদ বুঝি বড় প্রয়োজন
তাই বলে তুমি আমাকেই কেন কর আমন্ত্রণ।
আমি তো আনাড়ি, অনার্য এক বন্য এ দেহ
তুমি ছাড়া আর একথা জানে না ভিন্ন কেহ
তবুও আমাকে মাটির ঢেলাটি ভাঙতে কি বলো
এই অবেলায় আর নয় সখি অনেক তো হলো।
সেই কোনদিন চাষাবাদ ছিল ভুলে গেছি কবে
তোমার জমিন আমাকেই চাষ করে দিতে হবে!
নিষ্প্রভ তারা
জিনাত রশীদ
এখানে এসে আমি থেমে আছি
এখানে যতি, দাড়ি নেই
ওপরে আকাশ নেই
পদচিহ্ন আছে পথিক নেই
এখানে অযুত স্বপ্ন আছে ঘর সংসার সব আছে
এখানে অতিক্রান্ত সময়ের ব্যর্থতার দগ্ধতা আছে
সময়ের স্রোত বুকে বেঁধে বেঁচে থাকা আছে
এখানে লালিত ঘুমের ঘরে নিষ্প্রভ তারা একা থাকে
এখানেই এসে আমি থেমে আছি।
শীর্ষ সংবাদ: