ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইডেনের কলঙ্ক প্রশাসনের লজ্জা ।। আট ঘণ্টা বৃষ্টি না হওয়াতেও মাঠ শুকানো যায়নি

প্রকাশিত: ২২:০৮, ৯ অক্টোবর ২০১৫

ইডেনের কলঙ্ক প্রশাসনের লজ্জা ।। আট ঘণ্টা বৃষ্টি না হওয়াতেও মাঠ শুকানো যায়নি

অনলাইন ডেস্ক॥ ক্রিকেটে বহুদিন প্রচলিত একটা প্রবাদ আছে, সিডনি টেস্টের তৃতীয় দিন ভিক্টর ট্রাম্পারের আত্মা না কি সিডনি মাঠে খেলা দেখতে আসে। তাই যদি হয়, বৃহস্পতিবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় টি-টোয়েন্টি দেখতে জগমোহন ডালমিয়ার আত্মাও নিশ্চয়ই ইডেনে হাজির ছিল। ভঙ্গুর যে অবস্থা থেকে ডালমিয়া সিএবিকে টেনে তুলেছিলেন এ দিনের পর মনে হল তার সংস্থা আবার পুরনো অবস্থানেই ফিরে গিয়েছে। সুনীল গাওস্করের অবসরের পর প্রথম টেস্ট ম্যাচে ভারত ৭৫ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল। তখন অনেকে বলেছিলেন, গাওস্কর চলে যেতে টিমের এই অবস্থা। এ দিন ডালমিয়াকে কেন্দ্র করেই একই কথা হচ্ছিল। তিনি নেই তাই সিএবির এই দুর্দশা। স্থানীয় ক্রিকেট মহলে অবশ্য অনেকে মনে করেন সিএবির এই অবস্থা ডালমিয়ার শেষ দিকেও ছিল। তিনি তা প্রতিকারের জন্য কিছুই করেননি। বৃহস্পতিবারের ম্যাচ একটা ভয়ঙ্কর প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিল যে আইসিসির রেফারি ক্রিস ব্রড যদি ইডেনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেন সে ক্ষেত্রে এপ্রিলে ইডেনে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফাইনাল আদৌ হবে তো! আইসিসি প্রশ্ন তুলবে না তো যারা অক্টোবরের মাত্র দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ম্যাচ করতে পারেনা তারা এপ্রিলের কালবৈশাখি হানা সামলাবে কী করে! এ দিন দুপুর দেড়টায় বৃষ্টি শেষ হয়। আর খেলা পরিত্যক্ত হয় রাত সাড়ে ন’টায়। মাঝে আট ঘণ্টা বৃষ্টি না হওয়াতেও মাঠ শুকানো যায়নি। একটা বলও না খেলে। প্রশাসনিক অদক্ষতার এ রকম নিদর্শন ইডেনের ইতিহাসে কম দেখা গিয়েছে। কটকে আগের ম্যাচের চূড়ান্ত প্রশাসনিক ব্যর্থতার পর এ বার নতুন লজ্জা উপহার দিল ইডেন। ইডেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পিচ প্রস্তুতকারক প্রবীর মুখোপাধ্যায়। অভিযোগ, দুপুরে তাঁকে নাকি বার বার মাঠ ঢাকার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ফোনে একাধিক বার অনুরোধ করার পরেও তিনি মাঠ ঢাকতে যাননি। সিএবির অভ্যন্তরে দাবি উঠেছে, আজই রাতে তাঁকে বরখাস্ত করার। ইডেনের এই লজ্জার গ্লানি অবশ্য কমবে না। যে ভাবে ৪৫ হাজার দর্শককে প্রবঞ্চিত করে ম্যাচ বাতিল করা হল, ডালমিয়ার দীর্ঘ প্রশাসনিক জীবনে এ রকম ব্যর্থতার নিদর্শন নেই। সিএবি কর্তারা এ দিন ডালমিয়ার ঘরে ফুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন। তাঁর উপর একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয়। তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কিন্তু সেই নীরবতার সম্পূর্ণ তাল কেটে যায় সুপার সপারের কর্কশ আওয়াজ আর শিসের শব্দে। যা শুনে ডালমিয়ার আত্মা নিশ্চয়ই ইডেন ছেড়ে চলে গিয়েছে। ম্যাচ বাতিলের কথা রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ বিসিসিআই টুইট করে জানালেও, সিএবি কর্তারা তখনও দর্শকদের এ কথা জানাতে পারেননি। দর্শকরা তাই বিভ্রান্ত হয়ে গ্যালারিতেই বসে থাকেন। বেশ বোঝা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএবির যে নতুন প্রশাসনিক টিম তৈরি করে দিয়েছেন তাঁদের আরও বেশি সতর্ক এবং পরিশ্রমী হয়ে কাজ করতে হবে। বৃহস্পতিবারের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ডালমিয়ার সিএবি এখন অপেশাদারে ঠাসা একটি সংস্থা। ম্যাচ পরিত্যক্ত হতে না হতেই নতুন নাটকের শুরু। ইডেন ছাড়ার সময় উত্তেজিত ভাবে প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলে গেলেন, “যে ভাবে আমার সঙ্গে অসহযোগিতা করা হল। এর পর আমার ডেড বডিও ই়ডেনে ঢুকবে না।” অর্থাত্ তিনি হয়ত স্বেচ্ছা বরখাস্ত হয়ে গেলেন। আজকের ম্যাচটা ছিল ডালমিয়াকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের। এ ট্রিবিউট টু ডালমিয়া। আদতে সেটা গিয়ে দাঁড়াল ডালমিয়াকে লজ্জাজ্ঞাপন। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×