ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

লোকজ ঐতিহ্যে উদ্দীপ্ত আবদুস শাকুরের চিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১০ অক্টোবর ২০১৫

লোকজ ঐতিহ্যে উদ্দীপ্ত আবদুস শাকুরের চিত্র প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্যানভাসজুড়ে বয়ে গেছে রঙের মিছিল। বর্ণাঢ্য জমিনের চারপাশ ছেয়ে আছে বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা সবুজ পত্রপল্লবে। গাছের উপর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে বাহারি পাখির ঝাঁক। আর ঝাঁকালো সেই গাছের মাঝ থেকে উঁকি দিয়েছে পল্লীবধূর মুখখানি। কপালে তার গোল লালটিপ। সিঁথিতে টানা সিঁদুর। লিপস্টিকের রঙে রক্তি ঠোঁটের উপর নাকে চেপে বসেছে নথ। গলায় ঝুলছে নকশাদার হার। লীলাবতী শিরোনামের এই ছবিটি এখন ঝুলছে ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে। বাংলার ঐতিহ্য-কৃষ্টি ও মৈমনসিংহ গীতিকার আশ্রয়ে চিত্রিত এমন অনেক নয়নজুড়ানো চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনালয়টির দেয়ালজুড়ে। এখানে চলছে ঐতিহ্য ও শেকড়সন্ধানী খ্যাতিমান শিল্পী আবদুস শাকুর শাহর প্রদর্শনী। লোকজ ঐতিহ্যে উদ্দীপ্ত এ প্রদর্শনীর শিরোনাম মিউজ অব মিথস বা পুরাণ কাহিনীর অনুপ্রেরণায়। শুক্রবার শরতের সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। যৌথভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কবি সৈয়দ শামসুল হক এবং ঢাকার ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি ওবের। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আবদুস শাকুর শাহ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার আগে গ্যালারিতে কথা হয় আবদুস শাকুর শাহর সঙ্গে। প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, আমি সব সময়ই সহজ ও সাবলীলভাবে দেশের লোকজ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ছবি আঁকি। আর চিত্রকর্ম সৃজনে স্বদেশের ঐতিহ্য ও মৈমনসিংহ গীতিকা প্রেরণার মূল উৎস। গ্রামভিত্তিক সমাজের গভীরতা ও সেখানকার মানুষের সহজ-সরল জীবন হয়ে ওঠে আমার ছবির বিষয়। অন্যদিকে মৈমনসিংহ গীতিকার প্রেমের আখ্যানগুলো ভীষণভাবে টানে আমাকে। সে বিষয়গুলোও ধরা দেয় চিত্রপটে। সব মিলিয়ে আমি আমার ছবিতে ঐতিহ্যের পথ ধরে উপস্থাপন করতে চাই বাংলাদেশকে। বাঙালী জাতিসত্তার স্বরূপসন্ধানী এই শিল্পীর এ্যাক্রিলিক, ড্রয়িং, জলরং ও কোলাজ মাধ্যমের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। ২০১১ থেকে এ বছর পর্যন্ত আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে রয়েছে শিল্পীর নিরীক্ষাধর্মিতার ছাপ। মৈমনসিংহ গীতিকা নিয়ে দীর্ঘসময় কাজের পর তিনি এ প্রদর্শনীর অনেক ছবিতে দেশের নানা ঐতিহাসিক ও লোকজ ফর্মের আধুনিক উপস্থাপন এবং মৌলিক ধারণার অবতারণা করেছেন। পাশাপাশি কাগজ দিয়ে করা ছোট আকৃতির নানা কোলাজ এবং কিছু চিত্রকর্ম সৃজন করেছেন, যার মাধ্যমে শিল্পী এ দেশের লোকজ সংস্কৃতির প্রতি তার পুরনো ভাললাগাকে নতুনমাত্রায় আবিষ্কারের পথে ধাবিত হয়েছেন। শিল্পীর চিত্রভাষা যেন হাজার বছরের গ্রামীণ জনপদের নানা অদেখা আর অশ্রুত আলেখ্যের কথায় প্রাঞ্জল। আবদুস শাকুরের শিল্পচর্চায় বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি, গ্রামীণ জীবনধারা, প্রাচীন কাব্য অনুপ্রেরণার ভূমিকায় আছে অনেকটা সময় ধরেই। ভারতের বরোদার এম এস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন শিল্প-শিক্ষক কে জি সুব্রামানিয়ামের উৎসাহে আবদুস শাকুর শিল্পী যামিনী রায়, কামরুল হাসান ও কাইয়ুম চৌধুরীদের দীর্ঘ চর্চিত লোকজ চিত্রকলার চিরায়ত ধারাকেই আরও পরিপক্ব করেছেন। টেরাকোটা, নকশিকাঁথা এবং পটচিত্রের মতো লোকজ সংস্কৃতি থেকে নেয়া নানা মোটিফের ব্যবহারের উঠে এসেছে তার কাজে। সেই সঙ্গে দেশজ নানা প্রাচীন গল্প এবং গীতিকাব্য থেকে আহরিত অংশবিশেষের লিপিকলা এবং সেসব কাব্যের নানা মানব ও প্রাণী চরিত্রের দেহাবয়বকে উপস্থাপন করেছেন স্বতন্ত্র শৈলীতে উজ্জ্বল অঙ্কনরীতিতে। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ৪৮টি চিত্রকর্ম। তিন সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে আগামী ২৯ অক্টোবর। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। মিতালী মুখার্জীর সঙ্গীতসন্ধ্যায় মুগ্ধ শ্রোতা ॥ ‘আমি সুরের পিয়াসী গানের খেয়াতে ভাসি/ও সাগর তোমারই ডাকে বারে বারে ছুটে আসি’Ñ এই গানের শিল্পী মিতালী মুখার্জী যেন বাংলাদেশের ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হন এ দেশের শ্রোতাদের সামনে। শুক্রবার ভারতের জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজন করে সিটি ব্যাংক বাংলাদেশ। তাতে এ শিল্পীকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১০ সাল থেকে গানের শিল্পীদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা দিয়ে আসছে সিটি ব্যাংক বাংলাদেশ। এ বছর এ সম্মাননা পান মিতালী মুখার্জী। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লুু হোটেলের ওয়াটার গার্ডেন উৎসব হল এ উপলক্ষে সাজানো হয় শৈল্পিকভাবে। শিল্পীর গান শুনতে উপস্থিত হন শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত ও রাজনীতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা। সঙ্গীতসন্ধ্যার প্রথম পর্বে ছিল সম্মাননা প্রদান। বাংলা গানে বিশেষ অবদানের জন্য মিতালী মুখার্জীর হাতে তুলে দেয়া হয় সম্মাননা স্মারক। এতে শিল্পীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। চিত্রশিল্পী গোলাম ফারুক বাবুর আঁকা মিতালী মুখার্জীর পোর্টেট শিল্পীকে তুলে দেন চলচ্চিত্রকার ও লেখক আমজাদ হোসেন। অর্থমূল্যের চেক তুলে দেন সিটি ব্যাংক এনএ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিটি কান্ট্রি অফিসার রাশেদ মাকসুদ। সম্মাননা পেয়ে শিল্পী মিতালী মুখার্জী অভিভূত ও আপ্লুত। নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ দেশেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা। এ দেশেই গান দিয়ে আমার যাত্রা শুরু। বাংলাদেশী দর্শকের জন্য আজকের আমি। বিশ্বজুড়ে এই বাঙালীদেরই তো আমি গান শুনিয়ে এলাম সারাজীবন। হিন্দী গানও আমি করেছি। কিন্তু বাংলা গানের শিল্পী হিসেবেই আমায় বিশ্ব চিনেছে। পরে মিতালী মুখার্জীর গান ও বেড়ে ওঠার স্মৃতিচারণ করেন চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, প্রথম তার গান শুনেই মুগ্ধ হয়েছিলাম, আমার ওই মুগ্ধতার রেশ এখনও কাটেনি। ‘দুই পয়সার আলতা’ চলচ্চিত্রে যখন তার গান নির্বাচন করি, তখন অনেকের কাছে তিনি অপরিচিত। পরে গান গেয়েই তিনি বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে পেয়েছেন খ্যাতি এবং ভালবাসা। অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা শেষে নিজের জনপ্রিয় এবং শ্রোতাদের পছন্দের গান শোনান এই শিল্পী। শুরুতেই কণ্ঠে তুলে নেন হারানো দিনের গান। কিন্নরী কণ্ঠে সুর তুলে গেয়ে শোনানÑ ‘হারানো দিনের মতো হারিয়ে গেছ তুমি’ গানটি। গানটি শেষ না হতে হতেই তুমুল করতালিতে অভিবাদন জানান উপস্থিত শ্রোতারা। এরপর পরিবেশন করেন জনপ্রিয় গান ‘যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে’। গানের সুরে, শিল্পীর কণ্ঠমাধুর্যে সুর ধরেন উপস্থিত শ্রোতারাও। এরপর তিনি একে একে গেয়ে শোনান ‘কেন আশা বেঁধে রাখি’, ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’সহ তাঁর ৭টি জনপ্রিয় গান। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে মিতালী মুখার্জীর গাওয়া ৫টি গান গেয়ে শোনান বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী কণা। গান-কবিতায় চে গুয়েভারা স্মরণ ॥ ‘আজ আমার পরাজয়ের অর্থ এই নয় যে, কোনদিন বিজয় অর্জন করা যাবে না’Ñ এভাবেই আমৃত্যু বিপ্লবের কথা বলেছেন আর্নেস্টো চে গুয়েভারা। শুক্রবার স্মরণ করা হলো শ্রেণীহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের এই বিশ্বখ্যাত বিপ্লবীকে। তার ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। শরতের বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে কথায়, গান ও কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় চে গুয়েভারাকে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য হায়দার আকবর খান রনো ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর। অনুষ্ঠানের শুরুতে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা পরিবেশন করেনÑ ‘এই সমাধি তলে’ এবং ‘ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না’ শিরোনামের দুটি গান। আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, আমৃত্যু বিপ্লবী চে। দেশে দেশে বিপ্লব করেছেন তিনি। আজকে আমাদের দেশের তরুণদের টি-শার্ট, ব্যাগে চে-এর ছবি দেখি। চে আসলে মরেও অমর হয়ে আছেন। তিনি তরুণ মনকে উদ্দীপ্ত করে চলেছেন সব সময়। চে পৃথিবী বদলের যে স্বপ্ন দেখতেন তার পুরোটা না হলেও পৃথিবী কিন্তু বদলাচ্ছে এবং বদলাবে। হায়দার আকবর খান রনো বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে গেছি আমি। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেখেছি কার্ল মার্কস, লেনিনকে অনেকে না চিনলেও সমাজতন্ত্র এবং বিপ্লবের কথা বললে অনেকেই চে গুয়েভারার কথা বলেন। তাকে অনেকেই চেনেন। যদিও চে কে এখন কর্পোরেটরা পুঁজি করেছে; তবুও চে হচ্ছে বিপ্লবের প্রতিশব্দ। বীরত্ব ও সংগ্রামের প্রতীক। তবে আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে চে-এর বিপ্লবের অন্যতম বিষয় ছিল আন্তজার্তিকতাবাদ। আলোচনা শেষে শুরু হয় চে-কে নিবেদিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। কবিতার দোলায়িত ছন্দে একক কণ্ঠে আবৃত্তি করেন বাক্শিল্পী রফিকুল ইসলাম, মাহিদুল ইসলাম, ইকবাল খোরশেদ, রেজীনা ওয়ালী লীনা ও অনন্যা লাবণী পুতুল। গণসঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী, ক্রান্তি, বহ্নিশিখা, স্ব-ভূমি, আনন্দন, জাগরণ ও ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। স্বননের ৩০ বছর পূর্তিতে আশরাফুল আলমকে সম্মাননা ॥ আবৃত্তি সংগঠন স্বনন আবৃত্তি চর্চার ৩০ বছর পূর্তি উৎসব উদ্্যাপন করে শুক্রবার। ‘নিভৃতে নয়, কোলাহলে’ শীর্ষক এ উৎসবে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় নিবেদিতপ্রাণ আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলমকে। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত উৎসবে অংশ নেন দেশের প্রথিতযশা শিল্পী, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদগণ। বেলা ৩টায় নাট্যশালার বহিরাঙ্গনে মুক্ত আকাশে বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে সূচনা হয় উৎসবের। এসময় চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকের শব্দে। এরপর ঢাক ও ঢোলের তালে তালে অতিথি ও স্বননের সদস্যরা প্রদীপ প্রজ্বলন করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসানের পরিচালনায় এ পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বননের প্রতিষ্ঠাতা রূপা চক্রবর্তী। এরপরই শুরু হয় সম্মাননা পর্ব। আবৃত্তি শিল্পে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আশরাফুল আলমকে আজীবন সম্মাননা পদকে ভূষিত করা হয়। শিল্পীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করেন স্বননের সভাপতি ডা. চক্রেশ চক্রবর্তী। তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন নাজমুল আহসান। এরপর শিল্পীকে সম্মাননা স্মারক ও পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী। আয়োজনে ৩০ বছর পূর্তিতে স্বননকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান নাট্যজন, শিক্ষাবিদ, সঙ্গীতশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পী ও আবৃত্তি দলের নেতারা। সম্মাননা পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সূচনা হয় আবৃত্তি পরিবেশনার। এ পর্বে স্বনন উপস্থাপন করে ‘নিভৃতে নয়, কোলাহল’ শীর্ষক প্রযোজনা। এছাড়াও আবৃত্তি পরিবেশনায় আরও অংশ নেয় ১১টি দল। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কবিতার দোলায়িত ছন্দে আবৃত্তি পরিবেশন করেন কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, মুক্তবাক, স্বরশ্রুতি, স্বরচিত্র, বৈকুণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমি, সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র, মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ও ঢাকা স্বরকল্পনের আবৃত্তি শিল্পীরা। এম নুরুল কাদের পুরস্কার পেলেন ৫ শিশুসাহিত্যিক ॥ শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৪ পেলেন ৫ প্রতিশ্রুতিশীল লেখক। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকরা হলেনÑ সৈয়দ নাজাত হোসেন, হালিম আজাদ, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, আহমেদ রিয়াজ ও বিপ্লব চক্রবর্তী। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা পান পদ্মা রহমান। একই সময়ে এম নুরুল কাদের ফাউন্ডেশন আয়োজিত দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, বইপড়া ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৯৭ জনের শিশুকিশোরের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে শুক্রবার বিকেলে মনোজ্ঞ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিজয়ী লেখকদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। প্রতিটি পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে পনেরো হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। আয়োজক সংগঠন নুরুল কাদের ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন রোকেয়া কাদেরের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদান করেনÑ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা হোসেইন, এম নুরুল কাদেরের সন্তান ওমর কাদের খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একাত্তরে পাবনার ডিসি থাকাকালে নুরুল কাদের পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন, তিনিই বাংলাদেশ সরকারের নামে সেখানে প্রশাসন চালু করেন এবং ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পাবনাকে মুক্ত রাখেন। মুজিবনগর সরকারের মধ্যে নিয়োজিত তিনি ছিলেন প্রথম ব্যক্তি। এম নুরুল কাদেরকে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর দেশের অর্থনীতিক মুক্তির লক্ষ্যে ব্যাক টুক ব্যাক এলসির মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে ইতিহাসে স্থান করে নিতে সক্ষম হন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মোস্তফা হোসেইনের গ্রন্থনা ও পরিকল্পনায় এম নুরুল কাদের ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর দেশাত্মবোধক গানের আবহে শিশুকিশোররা একক ও বৃন্দনৃত্য পরিবেশন করে। খেলাঘরের শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ॥ বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারির চতুর্থতলার লবিতে অনুষ্ঠিত আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও আবুল বারক্্ আলভী। বক্তব্য রাখেনÑ বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মাসুক হেলাল, কিরীটি রঞ্জন বিশ^াস, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিম-লীর সদস্য নুরুর রহমান সেলিম, আব্দুল মতিন ভূইয়া, হান্নান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ্ পলাশ, সহসাধারণ সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম বাবু, সম্পাদক অশোকেশ রায়, এ আলী আহম্মদ নান্তু, সদস্য ফখরুল ইসলাম, মাইনুল ইসলাম মুনির এবং শামীম আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার। প্রতিযোগিতায় পদ্মা বিভাগে প্লে গ্রুপ-১ম শ্রেণী, মেঘনা বিভাগে ২য়-৪র্থ শ্রেণী, যমুনা বিভাগে ৫ম-৭ম শ্রেণী এবং ব্রহ্মপুত্র বিভাগে ৮ম-১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ৫০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। শাহনূর মামুনের জলছবির চিত্রপ্রদর্শনী ॥ জলরঙের আশ্রয়ে ছবি এঁকেছেন তরুণ চিত্রশিল্পী শাহনূর মামুন। শিল্পীর রং-তুলির ছোঁয়ায় উপস্থাপিত হয়েছে ফেলে আসা জীবনের স্মৃতির ভুবন। সেই স্মৃতির রেশ ধরে শিল্পীর শৈশবে দেখা বহ্মপুত্র নদের সৌন্দর্য উদ্ভাসিত হয়েছে চিত্রপটে। একই সঙ্গে শাহনূরের ক্যানভাসে সৃজিত হয়েছে চলমান জীবনের ঘটনাপ্রবাহ। সেসব চিত্রকর্মে প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটেছে যাপিত জীবনের। আর এমন কিছু ছবি নিয়ে রাজধানীর উত্তরার গ্যালারি কায়ায় শুক্রবার থেকে শুরু হলো শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শিরোনাম নস্টালজিয়া এ্যান্ড দ্য ফলোয়িং লাইফ। সন্ধ্যায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কবি ও সাহিত্যিক আনিসুল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী অধ্যাপক জামাল আহমেদ। জলরঙের আঁকা শিল্পীর নির্বাচিত ৪৬টি চিত্রকর্ম ঠাঁই পাবে প্রদর্শনীতে। ১২ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ২০ অক্টোবর। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×