ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাশিয়ার সহায়তায় ॥ সিরীয় সেনা অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১০ অক্টোবর ২০১৫

রাশিয়ার সহায়তায় ॥ সিরীয় সেনা অভিযান

নতুন করে রুশ বিমান হামলা এবং যুদ্ধজাহাজ থেকে ছোড়া ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সহায়তায় সিরীয় সেনাবাহিনী এবং হিজবুল্লাহসহ তাদের মিত্র মিলিশিয়ারা বৃহস্পতিবার বিদ্রোহী বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারী বাহিনী দেশের পশ্চিমাঞ্চলের হারানো ভূখ- পুনর্দখলের অভিযান বিস্তৃত করেছে। এই ঝটিকা হামলা পশ্চিমের এলাকাগুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে, যেখানে এ বছরের প্রথম দিকে বিদ্রোহীদের অগ্রাভিযান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন ভিত্তি উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য হুমকির সৃষ্টি করে। একইদিন মধ্য এবং উত্তর-পশ্চিমে সিরিয়ায় সিরীয় সৈন্য ও বিদ্রোহীদের মধ্যে প্রচ- সংঘর্ষ হয়। একজন শীর্ষ জেনারেল রুশ বিমান হামলার সাহায্যপুষ্ট এই সংঘর্ষকে একটি ব্যাপক ভিত্তিক যুদ্ধাভিযানের অংশ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, দৃশ্যত এর লক্ষ্য হলো উপকূলীয় এলাকায় সরকারের শক্ত ঘাঁটির কাছাকাছি অবস্থানগুলোকে মুক্ত করা। এদিকে, ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ ব্রাসেলসে জোটের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের একটি বৈঠকের পর বলেন, সিরিয়ায় রাশিয়ার জড়িত হয়ে পড়া ‘গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে’। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়া সিরিয়ায় বিমান হামলা শুরু করে এবং বুধবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ফলে হামলা তীব্রতর রূপ নেয়। রাশিয়া বলেছে, আইএস জঙ্গীরা এবং আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোই তাদের বিমান হামলার লক্ষ্য। তবে পাশ্চাত্য গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থনে এমনকি মধ্যপন্থী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে হস্তক্ষেপ করার জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশটি দ্বিতীয় দিনের মতো কাস্পিয়ান সাগরের জাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং সেগুলো অস্ত্র কারখানা, অস্ত্র গুদাম, কম্যান্ড কেন্দ্র এবং প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলোর ওপর আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের বিশ্বাস সিরিয়ার ভূখ-কে লক্ষ্য করে ছোড়া ৪টি রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে ইরানে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্র সিরিয়ায় তাদের লক্ষ্যের ওপরই আঘাত আনে। হোয়াইট হাউস এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্ত হয়েছে কিনা তিনি এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারছেন না। কিরবি আরও বলেন, খবরটি একটি সঠিক কার্যপদ্ধতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার দিকেও অঙ্গুলি নির্দেশ করে, যাতে সিরিয়ায় আইএস জঙ্গীদের লক্ষ্যবস্তু করা মার্কিন বিমানগুলো সংঘর্ষ পরিহার করতে পারে। বৃহস্পতিবার মস্কো বলেছে, তাদের বিমানবাহিনী হোমস, হামা ও রাকা। প্রদেশে ২৭টি আইএস লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত এনেছে। কিরবি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি টেলিফোনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ পর্যন্ত আঘাত করা অধিকাংশ লক্ষ্যবস্তু আইএসের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ভূমিতে সিরীয় সরকারের প্রতি অনুগত বাহিনী দেশের পশ্চিমে গাব সমতল এলাকায় আকাশ থেকে রুশ যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষণের পাশাপাশি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের অব্যাহত প্রচ- হামলা চালিয়েছে বলে ব্রিটিশ ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফল হিউম্যান রাউটস এবং সেখানকার একজন বিদ্রোহী জানায়। ওই এলাকার আজনাদ আল-শাম বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একজন যোদ্ধা, যিনি আবু আল-বারআ আল-হামাবী নাম ব্যবহার করেনÑ তিনি বলেন, ‘সরকারী বাহিনী অগ্রাভিযানের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তবে এখন পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে।’ ইনটারনেট সংযোগে তিনি বলেন, রুশ জঙ্গী বিমানগুলো বৃহস্পতিবার প্রত্যুষ থেকে ওই এলাকায় এ পর্যন্ত তাদের প্রচ-তম হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা বুধবার পাল্টা হামলা চালিয়ে কয়েকটি সিরীয় ট্যাংককে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি পাল্টা হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, আমরা গতকালের (বুধবার) মতো উত্তর হামা’র গ্রামীণ এলাকায় ধ্বংযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি ঘটাব। অবজারভেটরি বলেছে, বিদ্রোহীরা পশ্চিম সিরিয়ার হামা প্রদেশে একটি হেলিকপ্টারকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। তবে সেটি সিরীয় না রুশ ছিল তা পরিষ্কার নয়। সিরিয়া বলেছে, তারা রণক্ষেত্রে প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে। ২০১১ তে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং এ পর্যন্ত তাতে আড়াই লাখেরও মতো লোক নিহত হয়েছে। ৪০ লাখ লোক বিদেশে শরণার্থী হয়েছে এবং বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে গৃহযুদ্ধে টেনে এনেছে। সিরীয় সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ লে. জেনারেল আলী আবদুল্লাহ আইয়ুব বলেছেন, রুশ বিমান হামলায় আইএসসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লড়াইয়ের সক্ষমতা কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সিরীয় সেনাবাহিনী অভিযান জোরদার করেছে। তাঁকে উদ্ধৃত করে সিএনএন জানায়, ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূল এবং সন্ত্রাসবাদের কবলে গড়া বিভিন্ন শহর ও এলাকাকে মুক্ত করাই এ অভিযানের লক্ষ্য।’ Ñইয়াহু নিউজ এপি ও সিএনএন।
×