ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জ্বালানি সঙ্কট কেটে যাবে ॥ সেমিনারে আশার কথা শোনালেন প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুত কেন্দ্রের নতুন হাব হচ্ছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১১ অক্টোবর ২০১৫

বিদ্যুত কেন্দ্রের নতুন হাব হচ্ছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামের জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে বিশদ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল ও কয়লা আমদানির জন্য বন্দর নির্মাণ ছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের নতুন হাব নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব পরিকল্পনা যথাসময়ে বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের জ্বালানি সঙ্কট কেটে যাবে। চট্টগ্রামের জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে করণীয় নির্ধারণে রাজধানীতে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিশদ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। তবে বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যায়ে সাময়িকভাবে চট্টগ্রামের জ্বালানি সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। চট্টগ্রামের জ্বালানি সঙ্কট দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। সাগরবক্ষের একমাত্র গ্যাস ক্ষেত্র সাঙ্গু পরিত্যক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রামের গৃহস্থালি, শিল্প, বাণিজ্যে জ্বালানি সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বলা হচ্ছে, দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। আর চট্টগ্রামে দৈনিক ঘাটতি ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ দেশের গ্যাস ঘাটতির প্রায় অর্ধেক মোকাবেলা করছে চট্টগ্রাম। গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রামের সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আর সারকারখানা চালু হলে আবাসিক শিল্প এবং পরিবহনে ছড়িয়ে পড়ছে সঙ্কট। সরকার বিদ্যুত সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রামে নতুন করে তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরি করছে। কিন্তু গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি সম্ভব হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এখন চট্টগ্রাম এলাকায় আর গ্যাস নেই, দেশের পূর্বাঞ্চল সিলেট এলাকার গ্যাস আশুগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রামে নেয়া হয়। সেখানে পাইপ লাইনের অপ্রতুলতায় সরবরাহ বাড়ানো যাচ্ছে না। আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আমাদের চিন্তায় অতীতে দূরদর্শিতার অভাব ছিল। সাময়িক প্রয়োজন মেটানোর জন্যই সকল প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে সঙ্কট হলে কী করে মোকাবেলা হবে তা ভাবা হয়নি। আমরা এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আড়াই থেকে তিন বছর সময় প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা কোন প্রকল্পের ‘টাইম ফ্রেম’ সুনির্দিষ্ট করি না। এখানে আসার পর আমিও দু’বছর ধরে শুনছি এলএনজি আসছে, এখনও শুনছি আসছে। তবে আমরা এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে দক্ষ মানব সম্পদের অভাব। আমরা চার বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। এসব প্রকল্প চালাতে অন্তত এক বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প পরিচালনা করেছে এমন অভিজ্ঞ মানুষের দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। সামগ্রিকভাবে দেশে বিদ্যুত জ্বালানি খাতে দক্ষ জনবলের অভাবের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমাদের ডেসকোতেই অর্ধেক প্রকৌশলী কৃষিবিদ। তিনি বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকত প্রকৌশলী সেখানে বিষয় উল্লেখ না থাকায় কৃষি প্রকৌশল বিষয়ে বিএসসি করে এসে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ারের পদে চাকরি করছেন। তবে এসব পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের আশু করণীয় বিষয়ে সেমিনারে সাবেক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, কুতুবদিয়াতে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন জোরদার করা যেতে পারে। এছাড়া ফেনীতে নাইকোর সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে সেখান থেকে চট্টগ্রামে সরবরাহ করা যেতে পারে। তিনি সরকারের বড় পরিকল্পনাগুলো দীর্ঘমেয়াদী উল্লেখ করে বলেন, অনেক দিন থেকে বলা হচ্ছে এসব প্রকল্প চলে আসবে কিন্তু কবে আসবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, যেসব দেশের নিজস্ব জ্বালানির ঘাটতি রয়েছে তারা মিশ্র জ্বালানি ব্যবহার করছে। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম তবে সম্প্রতি এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ড. সেলিম বলেন, অতীতের সরকারের জন্য আজকে চট্টগ্রামের জ্বালানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। মিয়ানমার তাদের গ্যাস আমাদের দেশে বিক্রি করতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু সরকারের ভুলের কারণে চীন মিয়ানমারের সব গ্যাস কিনে নিয়েছে। এতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে গেছি। সাবেক সিনিয়র সচিব নন্দী কুমার বিশ্বাস বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানেই শুধু চট্টগ্রামের উন্নয়ন নয় এটা গোটা দেশের উন্নয়ন। দেশের বন্দর এবং শিল্প নগরী চট্টগ্রামের প্রতি বাড়তি মনোযোগী হতে তিনি সরকারকে অনুরোধ করেন। ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম জার্নালিস্ট ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনা সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সাইফ ইসলাম দিলার। এতে পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব ড. কায়কাউস আহমদ, ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এ সময় সংগঠনের সদস্য ছাড়াও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
×