ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রতিষ্ঠায় ভূমি অধিগ্রহণ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু

মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত রেল যোগাযোগ হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১১ অক্টোবর ২০১৫

মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত রেল যোগাযোগ হবে

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ বর্তমান সরকার ট্রান্স-এশিয়ান রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নতুন চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছে। এ রেলপথ প্রতিষ্ঠা হবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার হয়ে সুদূর চীন পর্যন্ত। সিঙ্গেল লাইনের পরিবর্তে চট্টগ্রাম থেকে ব্রডগেজসহ ডুয়েল লাইন হয়ে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পর্যন্ত এ রেললাইন প্রতিষ্ঠা হবে। এর ওপারেই মিয়ানমার। মাঝপথে নাফ নদী। চওড়ার দিক দিয়ে যা অপেক্ষাকৃত ছোট। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের রেল যোগাযোগের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হবে একটি রেলব্রিজ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত কড়া পদক্ষেপের জের হিসেবে বছরের পর বছর ঝুলে ধাকা ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইনের বিস্তৃতি ঘটানোর প্রকল্পটি অবশেষে আলোর মুখ দেখেছে বলে জানিয়েছেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মোঃ মকবুল আহমদ। তিনি জানান, ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হিসেবে এই রেলপথ প্রতিষ্ঠার কাজ বারে বারে থমকে যায়। ফলে যতই দিন অতিবাহিত হয়েছে ততই এর প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি ঘটেছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। ফলে চট্টগ্রাম-দোহাজারি-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত প্রায় দুই দশক আগের প্রস্তাবিত রেলপথ প্রতিষ্ঠার প্রকল্পটি নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশের ন্যায় এ রেলপথ মিটার গেজ সিঙ্গেল লাইনের পরিবর্তে ব্রডগেজসহ ডুয়েল লাইনে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি পর্যন্ত সিঙ্গেল রেললাইন বিদ্যমান। দোহাজারি থেকে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে উখিয়ার বালুখালি পর্যন্ত এ রেললাইনের বিস্তৃতি ঘটানোর পরিকল্পনা বহু আগে নেয়া হলেও অতীতের সরকারগুলোর অদূরদর্শিতার কারণে তা বারে বোরে হোঁচট খেয়ে থমকে গেছে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী এ রেললাইন যাবে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ওপর দিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের শেষ পর্যন্ত। ঘুমধুম এলাকার এ শেষ অংশটি উখিয়া উপজেলার বালুখালির সঙ্গে লাগোয়া। এ পয়েন্টের বিপরীতে রয়েছে মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়া। মাঝপথে নাফ নদী। নাফনদীর মালিকানা মধ্যবর্তী স্থান থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের। টেকনাফ থেকে উখিয়া পর্যন্ত নাফ নদীর এ অংশ আকৃতিতে ছোট। সূত্র জানায়, ঘুমধুম পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইনের হবে শেষ পয়েন্ট। এর পরে মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়া থেকে সুদূর চীন পর্যন্ত ট্রান্স-এশিয়ান রেললাইন প্রতিষ্ঠার মহাপরিকল্পনা রয়েছে। মিয়ানমার হয়ে এ রেল যোগাযোগ চীন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা হলে রেলপথে এ তিন দেশসহ আগ্রহী বিভিন্ন দেশের পর্যটকসহ ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। পূর্বাঞ্চলীয় রেলের জিএম আরও জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পর্যটন নগর কক্সবাজার চলে আসবে পুরো রেল নেটওয়ার্কের আওতায়। এতে কক্সবাজার নগরীর শিল্পসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও আসবে আমূল পরিবর্তন। রেলের অন্যান্য কয়েকটি সূত্রে জানানো হয়, ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্পটি আলোর পথ দেখায় এটি আমাদের জন্য বড় ধরনের সুসংবাদ। সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ধুমধুম পর্যন্ত রেললাইনের বিস্তৃতি ঘটানোর বহু তথ্য ও গল্প ইতোপূর্বে এদেশের মানুষ শুনেছে। ভূমি অধিগ্রহণের তৎপরতাও চলেছে। দীর্ঘদিন আগের এসব তৎপরতা মানুষ একপর্যায়ে ভুলেও গেছে। কিন্তু গেল বছর থেকে বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে ব্যাপকভাবে তৎপর হওয়ার পর তা দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন চলছে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রণয়ন কাজ। সূত্র জানায়, মিটারগেজ সিঙ্গেল লাইনের পরিবর্তে ব্রডগেজ ডুয়েল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিলম্ব হলে এ ব্যয় বেড়ে যেতে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে সারাদেশে সব রেলপথ ব্রডগেজ ডুয়েল লাইনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। এ সিদ্ধান্তের মধ্যে দোহাজারি থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ প্রতিষ্ঠার কাজও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, এরই মধ্যে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে ৩১২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে আরও ৬০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রেল সূত্র জানায়, আগামী বছরের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে এবং তা ঠিকঠাক মতো এগিয়ে গেলে ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ সম্পন্ন হবে বলে তারা আশাবাদী। প্রসঙ্গত, শুরুর দিকে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার কোটি টাকা। বিলম্ব হওয়ার কারণে এখন তা দ্বিগুণেরও বেশিতে উন্নীত হয়েছে। এ প্রকল্পে সরকার পক্ষে প্রদান করা হবে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা। অপরদিকে, দাতাসংস্থাসমূহ থেকে আসবে প্রকল্প ব্যয়ের অবশিষ্ট অর্থ। চীন সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের ঘোষণা রয়েছে আগে থেকেই। তবে তা নতুন করে সিদ্ধান্তের আওতায় আনা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কয়েক দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ফলে সময় যত গড়িয়েছে ব্যয়ও তত বেড়েছে। সূত্র মতে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি, দোহাজারি থেকে রামু, রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত এ রেলপথের দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাক মোঃ মকবুল আহমদ জনকণ্ঠকে জানান, এ পদে যোগ দেয়ার পর থেকে তিনি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সকল বাধা অতিক্রমের জন্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৎপর রয়েছেন।
×