ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা প্রসঙ্গে বলেছেন অসি গ্রেট ডিন জোনস

লজ্জা থেকে রক্ষা পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১১ অক্টোবর ২০১৫

লজ্জা থেকে রক্ষা পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যখন নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসতে রাজি হলো না অস্ট্রেলিয়া, তখনই সবার মুখে মুখে একটি কথা শোনা গেল, ‘ভয় পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।’ কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমীদের এমন কথায় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা আবেগ খুঁজে বেরিয়েছেন। এখন এক অস্ট্রেলিয়ানই এমন কথা বলছেন। তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গ্রেট ক্রিকেটার ডিন জোনস। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫২টি টেস্ট ও ১৬৪টি ওয়ানডে খেলা এ ক্রিকেটার বলছেন, ‘বাংলাদেশ সফরে না এসে লজ্জা এড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া!’ শুক্রবার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে লেখা এক কলামে তিনি বিস্ফোরণই ঘটিয়েছেন। লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে না এসে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দল রীতিমতো লজ্জা এড়িয়েছে।’ তিনি তাঁর কলামে আরও বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ সফরে গেলেই অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হতো। বাংলাদেশ সম্প্রতি সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছে। উপমহাদেশে অস্ট্রেলীয় দলের পারফরম্যান্সের ইতিহাস বিবেচনা করেই আমি মনে করি অনভিজ্ঞ দল নিয়ে বাংলাদেশে গেলে বিব্রতই হতে হতো অস্ট্রেলিয়াকে।’ তাঁর মতে, ‘ঘোষিত অস্ট্রেলীয় দলটির মিডল অর্ডারে সমস্যা আছে। টপ অর্ডারে ডেভিড ওয়ার্নার আর ক্রিস রজার্সের থাকার কথা ছিল না। স্টিভেন স্মিথই মিডল অর্ডারে একমাত্র নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। শন মার্শের উপমহাদেশে টেস্ট সেঞ্চুরি থাকলেও সে যথেষ্ট অধারাবাহিক। বাংলাদেশের উইকেটে এই দল অবশ্যই বিপদে পড়ত। স্টার্কের গোড়ালিতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। উপমহাদেশে লিয়নের বোলিং গড় ৫০ এর কাছাকাছি। এ্যান্ড্রু ফেকেটের সামর্থ্য পরীক্ষিত নয়। আর স্টেফান ও’কিফ ও এ্যাস্টন অ্যাগার তো দলেই থিতু নয়।’ ডিন জোনসের আগে ইয়ান চ্যাপেল অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়ার পরও কেন অস্ট্রেলিয়া দল এল না? ব্যাপারটাকে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করেছেন ইয়ান চ্যাপেল। স্পষ্টভাষী হিসেবে পরিচিত সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক চ্যাপেল ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সোজা-সাপটাই বলে দিয়েছেন, ‘বুঝতে পারছি নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারের উপদেশ উপেক্ষা করা কঠিন। কিন্তু আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই, একই পরিস্থিতি ভারত সফরে হলে কী হতো? আমার মনে হয় সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটা একটু অন্য রকম হতে পারত। বাংলাদেশকে যেমন খুব সহজেই না করে দেয়া গেল, ভারতের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়ত এত সহজ হতো না।’ চ্যাপেল মনে করেন, ব্যাপারটা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার একক সিদ্ধান্ত না হয়ে সমন্বিত কিছু হলে পরিণতিটা অন্য কিছু হতে পারত, ‘ব্যাপারটা যদি আইসিসির হাতে থাকত বা স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন একটা কমিটির হাতে থাকত, সে ক্ষেত্রে বোধহয় আরেকটু ভাবনার অবকাশ ছিল। একেক বোর্ড এ ব্যাপারটা একেকভাবে দেখবে। সব দেশ থেকে তথ্য নিয়ে একটা কমিটি ব্যাপারটা দেখভাল করতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটা বোর্ডের হাতে বিষয়টা থাকে না।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দাবি করেছিল বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি আসেনি। তারপরও বাংলাদেশ সরকার অস্ট্রেলিয়া দলকে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সমান নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সফর স্থগিতই করে দেয়। যেদিন সফর নিশ্চিতভাবে স্থগিত করা হয় পরদিনই সিডনিতে নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ সদর দফতরের কাছে একটা সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। চ্যাপেল সেটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়াতেও কিছুদিন আগে একটা সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। পুরো বিশ্বেই এমন ঘটনা ঘটছে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কথাই ধরুন না, অস্ট্রেলিয়া তো শ্রীলঙ্কায় যেতেই চায়নি। এমনকি রাতে যাতে থাকতে না হয়, সে জন্য সকালে গিয়ে বিকেলে চলে আসারও একটা প্রস্তাব উঠেছিল। তারপরও অস্ট্রেলিয়া সেবার রাজি হয়নি।’ এ মুহূর্তে ভারত সফর করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজ শুরুর দিন পাঁচেক আগেই মুম্বাই বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। চ্যাপেল সেদিকেও ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘ভারতকে না বলার আগে ওরা (অস্ট্রেলিয়া) অনেকবার ভাববে। ধরুন, এটা জাতীয় দলের খেলা না হয়ে আইপিএল হলে কী হতো? তখন তো সিদ্ধান্তটা খেলোয়াড়দের নিজেদের হাতে থাকত। সে ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হতো সেটাও দেখার বিষয়।’ বাংলাদেশ সফর স্থগিত করায় অস্ট্রেলিয়া থেকেই এখন আওয়াজ উঠছে। যে আওয়াজে থাকছে, বাংলাদেশে এসে খেললে অস্ট্রেলিয়া হারের লজ্জায় পড়তে পারত। সফরে না এসে সেই লজ্জা এড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
×