ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক দশকে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৮২ শতাংশে উন্নীত হবে

বাংলাদেশের প্রশংসায় বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১১ অক্টোবর ২০১৫

বাংলাদেশের প্রশংসায় বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মন্দার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে ধরে রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক সূচকে উন্নতির কারণে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী এখন অন্য চোখে দেখছে। শুক্রবার পেরুর রাজধানী লিমায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় সংস্থার প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, নারীদের জন্য বিনিয়োগ করা উচিত, যা যে কোন দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর কৌশলগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশের মতো কয়েকটি দেশ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করছে। তারা যদি এই ধারা অব্যাহত রাখে তাহলে আগামী দশকে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৩৪ থেকে ৮২ শতাংশে উন্নীত হবে, যা তাদের জিডিপিতে ১ দশমিক ৮ শতাংশ যোগ করবে। লিমা কনভেনশন সেন্টারে বিশ্বব্যাংকের ১৮৮টি সদস্য দেশের অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর, উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাসহ প্রায় দশ হাজার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বাংলাদেশের এই প্রশংসা করেন বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থার প্রধান। এ সময় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, এর আগে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের প্রধানরা কোন দেশকে নিয়ে এ ধরনের প্রশংসাসূচক কথা বলেননি। এটা আমাদের জন্য গর্বের। এত লোকের মধ্যে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন, অর্থমন্ত্রী হিসেবে সত্যিই ভাল লাগছে। তবে এখানে একটি কথা বলতে চাই, আমরা আমাদের নারীদের উন্নয়নে যা কিছু করেছি তার সবই নিজেদের বুদ্ধিতে করেছি। নিজের টাকায় করেছি। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পে প্রায় ৪০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন, যার ৮০ শতাংশেরই বেশি নারীশ্রমিক। আর এ খাত থেকে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয় এসেছে, যা বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ৮২ শতাংশ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে বেশ কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন। আজ রবিবার শেষ হবে এ সম্মেলন। অনুষ্ঠান শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, পদ্মা সেতুর রেশ কাটিয়ে বিশ্বব্যাংক এবং সেই সঙ্গে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন খুবই ভাল। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের এখন কোন সমস্যা নেই। খুবই ভাল সম্পর্ক। আইএমএফের সঙ্গে সম্পর্কও ভাল। ২০০৮ ও ২০০৯ সালের বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুহিত বলেন, আমরা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছি, মন্দার মধ্যেও একটি দেশের অর্থনীতির চাকাকে কীভাবে সচল রাখতে হয়। কীভাবে ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায়। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে চলে গেছি। কিছুদিন পরই তা একেবারে পাকাপাকি হয়ে যাবে। তারা আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে নেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। দেশে সামাজিক সূচকে উন্নতির চিত্র তুলে ধরে মুহিত বলেন, আমরা জানি মানব উন্নয়নে যে খরচ হয় সেটা করতে গেলে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে অর্থাৎ ডমেস্টিক রিসোর্স মবিলাইজেশন করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২৭ বছর আগে আমি যখন অর্থমন্ত্রী ছিলাম তখন ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় এলাম তখনও ছিল সেই ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। গত কয়েক বছরে সেটাকে আমরা ১০ শতাংশের উপরে নিয়ে গেছি। অর্থনীতির আকার বাড়ার পরিসংখ্যান হিসেবে ২০০৯ সালে এডিপির আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে তা এবার ১ লাখ কোটি টাকা এবং বাজেটের আকার ৮৯ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার তথ্য দেন তিনি। গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতার উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন গ্রামে অভাব নেই। ভিক্ষুক খুঁজে পাওয়া যায় না। শিক্ষা খাতে আমরা প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। তার সুফল আমরা এখন পাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। এটা আমাদের একটা বড় সাফল্য। অনেক উন্নত দেশও এটা করতে পারেনি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার লড়াইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমরা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছি।
×