ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতচালিত পাম্পের বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ান ॥ মতিয়া

কৃষকবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পরামর্শ দিলেন কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১২ অক্টোবর ২০১৫

কৃষকবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পরামর্শ দিলেন কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, কৃষকের ব্যবহার উপযোগী নয় এমন কোন প্রযুক্তি উদ্ভাবন দেশে টিকবে না তাই কৃষি প্রযুক্তি হতে হবে কৃষিবান্ধব। কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুতচালিত পাম্পের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সৌরচালিত মেশিনারির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে যারা কৃষিযন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছেন আগামী বাজেটে তাদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ প্রদর্শনের চেষ্টা করা হবে। কৃষিতে আরও বেশি বেশি প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। যন্ত্রপাতির ব্যবহারে দেশ এগিয়ে চলছে, যন্ত্রের মান নিয়ন্ত্রণে টেস্টিং ল্যাবের বিষয়টি সামনে এসেছে। সবাই দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দেশের জন্যে চিন্তা করছে, কৃষির জন্যে চিন্তা করছে। কাজ অনেক হচ্ছে, কিন্তু আলাদা আলাদা। উদ্ভাবন ও চিন্তা শক্তি দিয়ে নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি আবিষ্কার করছেন, সেগুলো অবশ্যই কৃষকবান্ধব হতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে ব্যক্তি শ্যালো মেশিন আবিষ্কার করেছিলেন তিনি কিন্তু ভাবেননি এটা দিয়ে এত কিছু হবে। রবিবার ফার্মগেটের বিএআরসি সম্মেলন কক্ষে ‘দেশীয় উপযোগী কৃষিযন্ত্র উদ্ভাবন, প্রস্তুতকরণ ও স্থানীয় উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প- দ্বিতীয় পর্যায়ের আয়োজনে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কৃষিমন্ত্রী বলেন, পানি সাশ্রয়ী কৃষি গড়ে তোলা বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি লক্ষ্য। খাল-বিল, নদী-নালা থাকা সত্ত্বেও এতো গভীর থেকে পানি তোলার কোন অর্থ নেই। আবার ওই পানিতে আর্সেনিক আছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা এটা একটা ফন্দি করে অর্থ আদায়ের চক্র। নদী-নালা, খাল-বিল উদ্ধার করতে অন্যদিকে জলাধারের পানির ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। হিমালয় থেকে পানি এসে তা বঙ্গোপসাগরে চলে যায়, তার কতটুকু আমরা কৃষির জন্যে ব্যবহার করছি তা ভেবে দেখা উচিত। তিনি আরও বলেন, কৃষিক্ষেত্রে আমাদের নানা চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেই খাদ্য রফতানি করতে পারছি, ভূমিকম্পের সময় নেপালকে সাহায্য পাঠাতে পেরেছি। জমি কমা সত্ত্বেও উৎপাদন বাড়ছে আল্লাহর বিশেষ রহমতে। ক্ষমতা হচ্ছে মানুষকে সেবা দেয়ার ক্ষমতা উপভোগের বিষয় নয়। ক্ষমতা ফ্যাশন শোতে যাওয়ার জন্যও নয়! মতিয়া চৌধুরী বলেন, কৃষিজাত পণ্য নৌপথে পরিবহন করলে সবচেয়ে কম খরচ হয়। আমরা নিজেরা গলাটিপে আমাদের নৌপথ ধ্বংস করেছি। বর্তমান সরকার দখল হয়ে যাওয়া সকল নদ-নদী উদ্ধারে বিশেষ নজর দিচ্ছে। কৃষিযন্ত্রপাতির মান নিয়ন্ত্রণে চালু হতে যাওয়া টেস্টিং ল্যাবের উদ্যোগটিকে তিনি প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেন। এ সময় বিগত জোট সরকারের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, একতরফা নীতির কারণে বিএনপির সময়ে বহুভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ওইসব নীতির কারণে কৃষকই শুধু বঞ্চিত হয়নি, বেসরকারী খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসরকারী খাতে প্রতিযোগিতার জায়গাটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমরা তা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প পরিচালক শেখ মোঃ নাজিম উদ্দিন। প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে ১০০ কৃষিযন্ত্রের উদ্ভাবন ঘটেছে। মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে যন্ত্রের ব্যবহার ৯০ শতাংশ। ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ শিল্পে বগুড়ায় ১ হাজার কোটি টাকার মার্কেট রয়েছে, যেখানে সক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিযোগিতামূলক বাজার বিরাজমান। বীজ বিপণন প্রাচীন পদ্ধতি হলেও নতুন করে এর প্রচলন আবারও শুরু হয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রেও বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে গেছে। যান্ত্রিকীকরণ সম্পর্কে আশু করণীয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রবন্ধ পাঠকালে নাজিম উদ্দিন আরও বলেন, উপযোগী লাগসই, নিখুঁত ও প্রতিযোগিতামূলক ব্যয়ে যন্ত্র উদ্ভাবনে গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে আমদানিকৃত যন্ত্রের অংশ বিশেষ উন্নয়ন করা যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের সফলতম কৃষিযন্ত্র হচ্ছে থ্রেসার বা ধান মাড়াই যন্ত্র। কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ, বিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
×