ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

বিএনপি নেতা সালামতসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে ২৩ নবেম্বরের মধ্যে ফরমাল চার্জের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১২ অক্টোবর ২০১৫

বিএনপি নেতা সালামতসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে ২৩ নবেম্বরের মধ্যে ফরমাল চার্জের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কক্সবাজারের বিএনপি নেতা সালামত উল্লাহ খানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ২৩ নবেম্বরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নানের সঙ্গে তার আইনজীবীর সাক্ষাতের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এর আগে একবার দেখা করার কারণে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য রযেছেন বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহ্্রাওয়ার্দী। প্রসিকিউশন পক্ষ মহেশখালীর ১৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিলের জন্য ৬০ দিনের সময়ের আবেদন করেন। এর পর ট্রাইব্যুনাল ২৩ নবেম্বরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে অপর এক আসামি রশিদ মিয়াকে জামিন দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে নতুন এক আসামি মৌলভী রমিজ হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তার বিরুদ্ধে ’৭১-এ সংঘটিত হত্যা-গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান, প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। তবে মৌলভী রমিজ হাসানকে এই মামলায় ১৯ জনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করেননি প্রসিকিউটর। অপরদিকে আসামিপক্ষে সালামত উল্লাহ খান ও মোঃ নুরুল ইসলামসহ চারজনের পক্ষে এ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ও অপর আসামি রশিদের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট মোঃ আনোয়ার হোসাইন। এর আগে ৮ অক্টোবর তদন্ত চূড়ান্ত করেছেন তদন্ত সংস্থা। পরে ওই দিনই তাদের বিরুদ্ধে প্রশস্ত করা প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করা হয়। এখন তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তর ও দেশান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী ১৩টি অভিযোগ রয়েছে। মামলায় মোট আসামি ২০ জন। এদের একজন মারা যাওয়ায় এখন মোট আসামি ১৯ জন। সালামত উল্লাহ খান ছাড়া মামলার অন্যা আসামিরা হলেন মৌলভী জকরিয়া শিকদার, মোঃ রশিদ মিয়া বিএ, অলি আহমদ, মোঃ জালাল উদ্দিন, মৌলভী নূরুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাবুল, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান, মোলভী আমজাদ আলী, মৌলভী আব্দুল মজিদ, বাদশা মিয়া, ওসমান গনি, আব্দুল শুক্কুর, মৌলভী সামসুদ্দোহা, মোঃ জাকারিয়া, মোঃ জিন্নাহ ওরফে জিন্নাত আলী, মৌলভী জালাল ও আব্দুল আজিজ। এদের মধ্যে সালামত উল্লাহ খানসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে মোঃ রশিদ মিয়া বিএকে জামিন দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ১৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পরে সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন সালামত উল্লাহ খান, মো. রশিদ মিয়া বিএ, মৌলভী নূরুল ইসলাম, বাদশা মিয়া, মৌলভী ওসমান গনি, মৌলভী শামসুদ্দোহা, মোঃ জিন্নাত আলী। তদের মধ্যে মৌলভী সামসুদ্দোহা (৮২) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৪ সালের ১২ মে থেকে চলতি বছরের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের অপরাধের তদন্ত শেষ করেন। তদন্তের তাদের বিরুদ্ধে মূল এক শ’ ১১ পৃষ্ঠার সঙ্গে প্রতিবেদনে ৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দী, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচী এবং ঘটনাস্থলের স্থিরচিত্রসহ সব নথিপত্র রয়েছে প্রতিবেদনে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে মোট ঘটনা ১৩টি। এর মধ্যে হত্যার ৯৪টি, নারী নির্যাতন অসংখ্য এবং লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ ব্যাপক। মামলায় মোট এক শ’ ২৬ সাক্ষী রয়েছে। আইনজীবীর আবেদন খারিজ ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নানের সঙ্গে তার আইনজীবীর দেখার করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। কারণ এর আগে আরেক বার আসামির সঙ্গে তার আইনজীবীর সাক্ষাত হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছে। এম এ হান্নান ও তার ছেলে সাজ্জাদসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর মুন্সীপাড়া এলাকার শহীদজায়া রহিমা খাতুন মামলায় অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহায়তার লক্ষ্যে এম এ হান্নান ময়মনসিংহ জেলা শান্তি কমিটি গঠন করে এর সাধারণ সম্পাদক হন। ফখরুজ্জামান ও গোলাম রব্বানি আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্য হিসেবে হান্নানের সহযোগী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা শহরের নতুন বাজারে অবস্থিত এম এ হান্নানের নিজ বাসভবন, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো টর্চার সেলের দায়িত্বে থেকে মুক্তিকামী সাধারণ নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করে লাশ ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ফেলে রাখেন।
×