ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী হত্যার ডামাডোলে পেট্রোলবোমা মামলা ধামাচাপা পড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১২ অক্টোবর ২০১৫

বিদেশী হত্যার ডামাডোলে পেট্রোলবোমা মামলা ধামাচাপা পড়ছে

শংকর কুমার দে ॥ দুই বিদেশী হত্যাকা-ের ঘটনায় নিরাপত্তা জোরদার করার ডামাডোলে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসে হতাহতের মামলাগুলো ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার, গোয়েন্দা নজরদারি, চেকপোস্ট, তল্লাশি অভিযান ইত্যাদির মধ্যে ব্যস্ত আছে র‌্যাব, পুলিশ, সিআইডি, এসবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়ে হতাহত করার আসামিদের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বিগত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা, বিভাগীয় ট্রাইব্যুনালে বিচার করাসহ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু দুই বিদেশী হত্যাকা-ের ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলো বিদেশীদের নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যস্ত থাকার ফাঁকে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসীরা আবারও প্রকাশ্যে আসার সুযোগ নিচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংস ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে ৭০৪টি। এর মধ্যে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়া হয়েছে মাত্র ১৩৭টি মামলার। নির্বাচনকালীন সহিংসতায় খুনের মামলা হয়েছে ১৪টি। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ৪৩৬ জন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্যান্য সহিংসতায় সারাদেশে দায়ের করা মামলার আসামি লক্ষাধিকের বেশি। এসব আসামি আর গ্রেফতার হচ্ছে না, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অনেক মামলার তদন্ত চলে গেছে হিমাগারে, বিচারের কাঠগড়ায়ও দাঁড় করানোর বিষয়টি থমকে গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, গত ৫ জাতীয় সংসদ জানুয়ারি নির্বাচন, মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘিরে সহিংসতা ও হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় দায়ের করা অধিকাংশ মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। এই অবস্থায় দুই বিদেশী হত্যাকা-ের পরবর্তী ঘটনাবলীতে তদন্তের গতি ঢিমেতালে হয়ে পড়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত সারাদেশে নিহত হয়েছেন ১৪৬ জন। সহিংসতায় প্রাণ হারান ১৮ পুলিশ সদস্য। আহত হয়েছেন কয়েক শ’। আহতদের অনেকেই এখনও চিকিৎসাধীন, আবার কেউ কেউ চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপিসহ সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকে বলা হয়েছিল, এসব সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এমনকি সাত বিভাগে ট্রাইবুন্যাল গঠন করে এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে বিচার করা হবে। এসব ঘোষণা এখন কাজীর গরু কেতাবে থাকার মতোই বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন দেখা নেই। দুই বিদেশী হত্যাকা-ের ঘটনায় তদন্ত, আসামি গ্রেফতারসহ সব কিছুই এখন ওলটপালট হয়ে পড়েছে। পুলিশের রেকর্ড করা মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপি-জামায়াত। আগুন দেয়া ও ভাংচুর করা হয় কয়েক শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কয়েক জায়গায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা করা হয়। এর পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের কর্মী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। সরকারী সম্পদ ধ্বংস, গাছ কাটা, অগ্নিসংযোগ করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গায় জামায়াত-শিবির কুপিয়ে হত্যা করে চার পুলিশ সদস্যকে। ওই দিন সুন্দরগঞ্জ সদরে সহিংসতায় নিহত হন আরও চারজন। এসব ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা হয়। মার্চ মাসে বগুড়া জেলাজুড়ে তা-ব চালায় জামায়াত-শিবির। জেলা সদরের পাঁচটি পুলিশ ফঁাঁড়ি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাড়ি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাড়ি এবং নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ওই সব ঘটনায় আটটি থানায় ৫৪টি মামলা করা হয়। নির্বাচনের পর দেশের ১৪টি স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় ১৮টি মামলা হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২৫ জেলায় বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু দুই বিদেশী হত্যাকা-ের ঘটনাই নয়, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গোৎসবসহ সমসাময়িক ঘটনাবলীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
×