ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশুদের বেড়ে ওঠা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ অক্টোবর ২০১৫

শিশুদের বেড়ে ওঠা

শিশুদের লালন-পালন, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, পড়াশোনা, আদর-যতœ, খেলাধুলা তথা সবকিছু নিয়েই থাকে মা-বাবার মধ্যে এক নিদারুণ ভাবনা। এই ভাবনাটি প্রগাঢ় হয় যখন শিশুটি মায়ের কোল ছেড়ে হামাগুড়ির বয়স পেরিয়ে ছোটাছুটির পর্যায়ে এসে পড়ে। তখন শিশুদের মধ্যে একটা হুল্লোড়, চঞ্চলতা পরিগ্রহ লাভ করে। এই সময়টাতে মা-বাবাকে ভীষণ কেয়ারফুল হতে হয়। যখন স্কুলে ভর্তি হয় শিশুটি তখন পা রাখে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। নতুন একটা পর্যায় চলে আসে শিশুদের মাঝে। ধীরে ধীরে শিশুরা তখন নিজেদের পছন্দ, ভালোলাগা- না লাগাটা অল্প অল্প বুঝতে শেখে। ওই সময়টাতে অভিভাবককে অনেক সতর্কতার সঙ্গে শিশুদের সামলাতে হয়। খেলাধুলার প্রবণতাও তখন শিশুদের মধ্যে প্রবলভাবে জেগে ওঠে। ফলে পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের চেয়ে খেলাধুলার প্রতি একটা আগ্রহ তৈরি হয়। দুরন্তপনার প্রবাল্য শিশুদের তখন খুবই চঞ্চল করে তোলে। শিশুদের এই প্রহরটাকে মা-বাবার তখন খুব হিসাব করে মানিয়ে নেয়ার রেওয়াজটা সর্বজনবিদিত। সুন্দর-স্বাভাবিক-পরিচর্যা শিশুদেরকে রাখে ভীষণ সতেজ মা-বাবাকে এ বিষয়েও মনোনিবেশ দেয়াটা প্রয়োজন। শিশুর বেড়ে ওঠার বয়সে বিশেষ করে স্কুল গোয়িং শিশুরা ভীষণ অভিমানী হয়। তাই তাদেরকে ম্যানেজ করতে হয় খুব সন্তর্পণে। এই বয়সের শিশুদের আবদারের মাত্রাটাও বেড়ে যায় বহুগুণ। সব মিলিয়ে শৈশবের এই সময়টা চাঞ্চল্যে ঘেরা থাকে শহর এবং গ্রাম- দুই প্রেক্ষাপটেই শৈশবকালটা হয় দারুণ মুখর। খেলাধুলাতে মগ্ন হয়ে ওঠা এই শৈশবে খেলার ধরনটা হয় ভিন্ন ভিন্ন। শহরে যখন এই বয়সের শিশুরা টিভি চ্যানেলে টম এ্যান্ড জেরি, ডোরেমন, মিকি মাউস, গেমস প্রোগ্রাম নিয়ে মেতে ওঠে। আর গ্রামের শিশুরা তখন পুকুর কিংবা নদীতে ঝাঁপাঝাঁপি, দৌড়-ছুট বর-কনে, রান্নাবাড়া, ঘুড়ি উড়ানোসহ নানা খেলায় নিমগ্ন হয়ে পড়ে। তবে সবকিছুই হয় পড়াশোনার ফাঁকে। শহরের মা-বাবা যখন তার শিশুকে নিয়ে বিকেল লাগিয়ে ঘুরতে বের হয়। গ্রামের শিশুরা তখন মাঠ-প্রান্তরে ছোটাছুটিতে ব্যস্ত। সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা পড়তে বসা। শৈশবের চিত্রটা শহর এবং গ্রামে ভিন্ন হলেও- এই সময়েই শিশুদের মানসিক গঠন তৈরি হয়। তাই প্রাণবন্ত পরিবেশটা শৈশবে বেশ দরকার। যাতে করে একটি শিশু প্রাকৃতিক নিয়মে সুন্দর পরিচ্ছন্ন পারিপার্শ্বিকতায় বেড়ে উঠতে পারে। মা-বাবার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ শিশুদের শৈশবে একটা অপরিহার্য বিষয়। এরা কী ধরনের ড্রেস পরতে ভালবাসে সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে মাকে। তবে এক্ষেত্রে ভিন্নতার একটা বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে ছেলে শিশু কিংবা মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে মা-বাবাকে আলাদাভাবে কেয়ার করতে হয়। সব থেকে জরুরী ব্যাপার হলো- শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখা। শৈশবের সময়টাতে বাড়ন্ত শিশুরা যদি পরিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে তাহলে এদের গ্রোথের দিকটা থাকে স্বাভাবিক। তাই পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের দিকে এদেরকে আকৃষ্ট করতে হবে। পরিহার করতে হবে বাইরের কেমিক্যাল জাতীয় যে কোন খাবার। সম্প্রতি ফ্রুটসে ফরমালিনের অতিমাত্রার ব্যবহারের ফলে ফ্রুটস খাওয়াটাও হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যের জন্য অসম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ। মা-বাবাকে এদিকটায় অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। তাছাড়া শিশুদের শৈশবকালটা ভীষণ স্পর্শকাতর একটা সময়। এ সময়ে অল্পতেই শিশুরা ঠা-া, সর্দি, জ্বর জাতীয় অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই তাদেরকে এ জাতীয় অসুখ-বিসুখ থেকে নিরাপদ রাখতে মায়ের ভূমিকা এক্ষেত্রে শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। শৈশবকালটা সাধারণত বছর দশেকের গ-িতে থাকে পরিবৃত্ত তারপর এ বয়েস অতিক্রম হয়ে গেলে এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় এবং এদের মধ্যে একরকম প্রাকৃতিকভাবেই প্রাণবন্ত ভাবটা চলে আসে। সব মিলিয়ে শৈশবের এই শিশুতোষ প্রহরে মা-বাবাকে শিশুদের প্রতি হতে হবে নিবিড় মনোযোগী। মানসিক বিকাশ, ভাবনার পরিচ্ছন্ন আবহ এই সময়েই একটি শিশু প্রবলভাবে গ্রহণ করে। তাই ভবিষ্যতের সুন্দর পথ রচনার সোপানগুলো এ সময়ে যতটা শিশু উপযোগী হবে, এদের জন্য সেটা ততটাই ভাল। শিশুদের লেখাপড়ার বাইরে টিভি, কম্পিউটারের পাশাপাশি প্রকৃতির সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেয়াটা অত্যন্ত জরুরী। নাগরিক শিশুদেরকে গ্রাম, গাছ-পালা, পাখি, ফুল, নদী, পুকুর, মাঠসহ গ্রামীণ জীবনবোধ এবং সংস্কৃতি এবং গ্রামীণ শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেয়াটা প্রয়োজন শহর-নগর সংস্কৃতি, বাস, ট্রেন, কার, পার্কসহ নাগরিক বিনোদন মাধ্যমের সঙ্গে। তাহলেই সকল শ্রেণীর শিশুদের মধ্যে জীবনের পারম্পর্য আবেশ সৃষ্টি হবে। সেই শিশুকে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সহজ হবে। ছবি : রফিকুল আউয়াল মডেল : রাহি ও হৃদি
×