ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুখ তুমি কি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১২ অক্টোবর ২০১৫

সুখ তুমি কি

সুখ তুমি আমেরিকার বোস্টনে, না কানাডার টরোন্টোতে, নাকি টেক্সাসের ডালাসে, কোথায় তুমি থাক? নাকি, আমার জন্মভূমি পদ্মার ওপারে, আঁকাবাঁকা সবুজের বুক চিরে মেঠোপথ বেয়ে নদীর ঝিরঝির বাতাসের মাঝে? তুমি কি অস্ট্রেলিয়ার ছিমছাম নিঃস্তব্ধ, পরিচ্ছন্ন এডেইলেডে, নাকি সিডনির নিয়মতান্ত্রিক সুন্দর শহরে। সুখ, তুমি কতটুকু, কত বড়, কোথায় থাক? টরেন্টোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসের কোঠায় বসে পাব নাকি জন্মভূমির আনাচেকানাচে কাজ করতে করতে তোমায় খুঁজব? তুমি কি পদ্মার পাড়ে লাল সবুজের মাঝে? সেখানে কি তোমায় পাব! সুখ! তুমি কেন শুধু একটি ক্যামেরার মাঝে আবদ্ধ থাক, ক্যামেরা হারালে তোমার ছন্দ হারিয়ে যায়! কেন? সুখ, তুমি কি বাবা-মাকে সশ্রদ্ধ বিনয়ে সেবা করার মাঝে, নাকি স্ত্রী-সন্তানের সেবার ছলে বাবাÑমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে? সুখ, তুমি দুটি শব্দ কিন্তু অনেক নিষ্ঠুর। যেনতেনভাবে অনেক টাকা উপার্জনের মাঝেই লুকিয়ে আছো? নাকি, উপার্জন করতে না পেরে অন্যের অ-সুখ (দোষ ত্রুটি) খোঁজার মাঝেই থাক। সিডনির বন্ধুকে পেয়ে যেমন আনন্দিত তেমনই ছোটবেলার তথাকথিত ব্যর্থ বন্ধুকে কাছে পেয়ে আরো উদ্বেলিত। সুখ আর ভোগ-তোমরা কি এখন দুই ভাই! সুখ, আসলে তোমার কি কোন অস্তিত্ব আছে? তুমি নিজেই তো এখন একটি কৃত্রিম শব্দ। তাইলে সুখের কি কোন অধ্যায়ই থাকবে না? অবশ্যই থাকবে। ঐ যে নীল-আকাশ, যার নীলিমায় মন-প্রাণ আনন্দ ও সুখে ভরে ওঠে। আবার মেঘ এসে নীল আকাশকে অন্ধকারে ঢেকে দেয়। জীবন হলো এমনই। সুখের সাথে দুঃখ মেশানো যেমন জন্মের সাথে মৃত্যু। জন্মালে মরতে হবে, তেমন সুখের পরে দুঃখ অথবা দুঃখের পরেই সুখ, থাকবেই। এটাই তো হলো এ বিচিত্র ইহলৌকিক জীবনের আলাদা আলাদা অধ্যায়। তবে দুঃখকে দুঃখ না ভেবে কষ্টকে সুখের পাতায় যোগ করাই তো উত্তম। পৃথিবীতে কি কি উপাদান বা কাজ, চিন্তা, মানুষকে আনন্দ দেয়? যেমন মানুষ ভাল খেয়ে আনন্দ পায়। ভাল ঘর বা নীড় পেয়ে, বিলাসিতা পেয়ে আনন্দ পায়। আবার অন্যকে দাবিয়ে রেখে ভিন্ন রকম আনন্দ পায়। আরেক প্রকার সুখ বা আনন্দ তা হলো ত্যাগের আনন্দ, ভালবাসার আনন্দ। নির্মল আনন্দ যা আমাদের চারপাশের প্রকৃতি থেকে মানুষ পায় এটাকে উপভোগ করার জন্য ভাল খাবার, বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, নিজেকে প্রকাশের প্রয়োজন নেই। এর জন্য শুধু প্রয়োজন নিজের মনের জানালাকে খুলে রাখা। চাঁদ নিয়ে কত সাহিত্য, কত কবিতা আরো যে কতই না কল্পনা। এ কল্পনাকেই সবাই আমরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অনুভব করি। যতটুকু আমার মনে হয়, খুব কমই হবে এমনও কেউ, যার জীবনে কোন না কোন রাত বা মুহূর্ত বা মধুময় লগন আসে নি, চাঁদ দেখে, নিজে একা একা বা প্রিয়তমা বান্ধবী বা প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে জোসনার আলো দেখে আনন্দিত হয়নি। পুলকিত হয়ে মনের সুখ পায়নি। তা সে যাই হোক- হেমন্তের সোনালি ফসলের উপর গুঁড়ি গুঁড়ি শিশিরে পূর্ণিমার আলো পড়ে তা দেখে কমপক্ষে কোন মানুষ অবাক বিস্ময়ে না তাকিয়ে পারবে না! মানুষের জীবনে ঐ লগনকে কে না ভাববে এ যেন সৃষ্টিকর্তা হৃদয়কে পবিত্র ও সুন্দর করার জন্যই সাজিয়েছেন। প্রকৃতি মানুষের জন্য সবই তো বিলিয়ে দিয়ে সবাইকে সীমাহীন সুখের পরশে পবিত্র করার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে। এ পবিত্রতা কিভাবে ছড়ালো? আজ চোরেরও কেন চুরির প্রয়োজন হলো না! এ যে কি ভাবনায় ছিন্নকারীরা হৃদয়ে প্রেমের অনুভূতি নিয়ে ছিনতাই করা থেকে বিরত! তাহলে কি ওরা ও প্রেম ভালবাসা আদরে কাতর! শাসনের চেয়ে আদরে বেশি নিয়ন্ত্রিত? তাই তো! মানুষের দুষ্ট ইচ্ছাশক্তিগুলো কেবল নির্মল প্রেম-ভালবাসা, স্নেহ-মায়া মমতার কাছে, তার জন্য কিছু ত্যাগের কাছে কাতর হয়ে উঠে। নিজের ভিতরে মনুষ্যত্বের স্পন্দন অনুভব করে। তখন ভোগ ও নৃশংসতার চেয়ে ত্যাগের মধ্যে ভিন্ন ধাঁচের সুখ বেশি পেতে থাকে। এটাই হলো মনুষ্যত্বের শক্তি যা সব খারাপ কাজগুলো থেকে মানুষকে বিরত রাখতে পারে। চাঁদ তার ঝলমলে আলোর ছোয়াতে তো শুধু ধনী আর ব্রাহ্মণ, জমিদার আর শিক্ষিত, সুদর্শন আর সুন্দরী ললনাদেরকেই প্রেমময় ও পবিত্র করে তুলে না। চাঁদের নির্মল মমতাময়ী ভালবাসার আলোতে নিজেকে সবাই সিক্ত করে নেয়। ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির, শিক্ষিত-কমশিক্ষিত, যুবক-বৃদ্ধ, কোন ভেদাভেদ রাখে না। পথিকের মনে হয়, চাঁদ তো পৃথিবীর চারদিকে এক আকর্ষণে ঘুরছে আর তা কি? তা হলো পৃথিবী নামে যে গ্রহ তার পৃষ্ঠে বসবাসকারী মানবজাতিকে ভালবাসা আর আদরের আকর্ষণ। এজন্যই ত্যাগের মহিমাতে তার এ ধরায় আবির্ভাব। চাঁদের কাছে মানুষে মানুষে কোন বৈষম্য নেই, কোন পার্থক্য নেই। সবার কাছেই সমান ভাবে নিজের আলো ছড়িয়ে যায়। ¯িœগ্ধ কোমল প্রেমময় মমতাময়ী মধুময় যে আলো চাঁদ ছড়িয়ে দেয় এর আবেশে যেন সবাই নিজের নিজের মনের কালিমা দূর করে নেয়। হিংসা, আত্ম-অহংবোধ, অপরকে দাবিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি ও প্রভাব বিস্তারের মানসিকতাগুলো দূর করে পরোপকারী, বিনয়ী, আর অন্যের অধিকার ও প্রয়োজনগুলোকে অনুভবের মাঝে আত্মতৃপ্তি খোঁজে। এর দ্বারা মানুষের নিজের কোন দুর্বলতা নয় বরং মনুষ্যত্বের শক্তির বহির্প্রকাশ ঘটবে। এ অতীব অসাধারণ শক্তি, এর জন্যই মানুষ ¯্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। অ-মনুষ্যত্ব হলো পশু-সুলভ শক্তি। যার মূল মানুষকে পৃথিবীতে দানব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। মনুষ্যত্বের শক্তিতে- মানুষে মানুষে, ধর্মে-বর্ণে, ধনী-গরিবে, শক্তিশালী-দুর্বলের সব বিভেদ ভুলে সকলেরই জীবনে সুখ ও আনন্দে ভরে ওঠে। সমাজ রাষ্ট্র আর পৃথিবীতে সাম্যের বাণীর আলোড়ন হতে থাকবে। মোঃ জগলুল কবির ছবি : আজিম এলাহি মডেল : মোস্তফা সামি ও প্রিয়াঙ্কা
×