ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কিশোরগঞ্জের ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠনের অভিযোগ গঠন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৩ অক্টোবর ২০১৫

কিশোরগঞ্জের ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠনের অভিযোগ গঠন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে দুই সহোদর এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন, ক্যাপ্টেন (অব) নাসির উদ্দিনসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুণ্ঠন, নির্যাতনের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। ৪ নবেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর ৫ রাজাকারকে তদন্ত সংস্থার সেফহোমে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে দুই সহোদরসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। আাসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। আসামি এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন- পলাতক সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মোঃ নাসিরউদ্দিন আহমেদ, গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম; সঙ্গে ছিলেন রেজিয়া সুলতানা চমন। অপরদিকে আসামি পাঁচজনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান। এ সময় গেফতারকৃত আসামি এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ৪ অক্টোবর আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করে আদালত। এর আগে গত ১৩ মে পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমালচার্জ) আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুণ্ঠন, নির্যাতনসহ সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। আসামিরা কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগুপ বিল, পীরাতন বিল ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে প্রসিকিউশনের পক্ষে ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়। সাত অভিযোগ অভিযোগ-১ : ১৯৭১ সালের ১২ নবেম্বর দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর ও আয়লা গ্রামের মোট আটজনকে হত্যা ও একজনকে আহত করা। অভিযোগ-২ : ১৩ নভেম্বর আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেনকে হত্যা। অভিযোগ-৩ : একই উপজেলার মোঃ আব্দুল গফুরকে অপহরণ করে ২৬ সেপ্টেম্বর খুদির জঙ্গল ব্রিজে নিয়ে হত্যা। অভিযোগ-৪ : ২৩ আগস্ট করিমগঞ্জ উপজেলা ডাকবাংলোতে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে আতকাপাড়া গ্রামে মোঃ ফজলুর রহমান মাস্টারকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা। অভিযোগ-৫ : ৭ সেপ্টেম্বর রামনগর গ্রামের পরেশ চন্দ্র সরকারকে হত্যা। অভিযোগ-৬ : ২৫ আগস্ট পূর্ব নবাইদ কালিপুর গ্রামে আবু বক্কর সিদ্দিক ও রূপালীকে অপহরণ করে নির্যাতন ও হত্যা। অভিযোগ-৭ : ১৫ সেপ্টেম্বর আতকাপাড়া গ্রামে আক্রমণ করে ২০-২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ। জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর ৫ রাজাকারকে তদন্ত সংস্থার সেফহোমে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করে। ১৫ অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে একজন করে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে তদন্ত সংস্থা। প্রসিকিউশন পক্ষে আবেদন করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। ৫ আসামি হলেন- ইসাহাক শিকদার, আব্দুল গণি হাওলাদার, আব্দুল আওয়াল ওরফে মৌলভী আওয়াল, আব্দুস সাত্তার প্যাদা ও সুলাইমান মৃধা। প্র্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ ৬ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, যা মামলার (আইও) প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। তবে তারা অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা ও ১৭ জনকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এখনও ৮ জন বীরাঙ্গনা জীবিত আছেন।
×