ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার খেলে ক্যান্সার ও চর্মরোগের ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৪ অক্টোবর ২০১৫

পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার খেলে ক্যান্সার ও চর্মরোগের ঝুঁকি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পলিথিনের ব্যবহার আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার গ্রহণ করলে ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করা হলে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা মাছ ও মাংস দ্রুত পচনে সহায়তা করে। পিভিসি এবং অন্যান্য প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা ৭শ’ সে. তাপমাত্রার নিচে পোড়ালে ডাইঅক্সিন জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয় যা জন্মগত ত্রুটি, চর্মরোগ, ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগের জন্য দায়ী। ওভেনপ্রুফ প্লাস্টিক কনটেনার খাবার গরম করলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাবারে ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, সীসা মিশে যায়। যার ফলে মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। পলিথিন থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ত্বকের বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়, এমনকি ডায়রিয়া ও আমাশয় ছড়াতে পারে এ ব্যাকটেরিয়া থেকে। মঙ্গলবার পলিথিন নিষিদ্ধের আইন কার্যকর করার দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তারা এসব কথা বলেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিসহ কয়েকটি পরিবেশ সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামন্যে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে তারা বলেন, দেশে পলিথিন ও পলিথিনজাত দ্রব্যসামগ্রীর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনানুসারে সব ধরনের পলিথিন শপিং ব্যাগ বা এ জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি অন্য কোন সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও কার্যকর তৎপরতা এবং মনিটরিং না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। একই সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত অনেকে বেড়ে গেছে আইনে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ৪০ লাখের বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া হয়। এর দ্বারা ড্রেন, নালা, খাল, ডোবা ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। পরিত্যক্ত পলিথিন ব্যাগ অতিরিক্ত দূষণকারী কীটনাশক ও শিল্পবর্জ্য শোষণ করে। অপচনশীল বলে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি এবং অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়, উপকারী ব্যাকটেরিয়াদের বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। বছরের পর বছর ধরে স্থায়ী, ছোট ছোট টুকরায় ভেঙ্গে যায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিক উপাদান ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কখনও সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে যায় না। তিনি বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। পাটের ব্যবহার বাড়বে। মাঠ পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাটের ব্যাগ আমেরিকায় রফতানির উদ্যোগ নেয়া হলে রফতানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষক পাট চাষে উৎসাহিত হবে এবং পাটের ন্যায্য দাম পাবে। বাংলাদেশ সোনালি আঁশ পাটের ঐতিহ্য ফিরে পাবে। অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় এক হাজার নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির কারখানা রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। মিরপুর, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, কামরাঙ্গীরচর ও টঙ্গীতে ছোট-বড় বেশকিছু কারখানা রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। এছাড়া চট্টগ্রামসহ জেলা শহরগুলোতে গড়ে উঠেছে পলিথিন কারখানা। পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে আরেকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। ‘জরুরী রফতানি কাজে নিয়োজিত’ লেখা ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। প্যাকেজিংয়ের ছাড়পত্র নিয়ে পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। তারা বলেন, পলিথিন ব্যবহারের কারণে জনজীবন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পাটের কদর কমে যাচ্ছে। ফলে পাট চাষও উল্লেখযোগ হারে কমছে। বন্ধ হচ্ছে পাট দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের কারখানা। বেকার হচ্ছে কুটির শিল্পের মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। সারাবিশ্বে পাটের চাহিদা বাড়লেও অবহেলা ও সচেনতার অভাবে সোনালি আঁশ পাট আজ বিলুপ্তির পথে। দেশে এ শিল্পকে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে এবং জনগণকে সচেতন হতে হবে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে আরও উল্লেখ করা হয় সরকার পরিবেশের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০২ সালে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের ওপর আইন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ আইন দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে। আইন প্রণীত হওয়ায় এবং তা বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে বর্তমানে আইনটি কার্যকর হচ্ছে না।
×