ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান ত্রিদেশীয় সিরিজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৪ অক্টোবর ২০১৫

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান ত্রিদেশীয় সিরিজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ডিসেম্বরে কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজ নেই বাংলাদেশের। পাকিস্তানে গিয়ে দুই টেস্ট, পাঁচ ওয়ানডে খেলার যে প্রস্তাবিত সিরিজ রয়েছে, নিরাপত্তার কারণে সেটিও খেলবে না ভারত। তার মানে, পাকিস্তান ও ভারতেরও ডিসেম্বরে ফাঁকা সময় রয়েছে। আর তাই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছে। দুবাইয়ে সোমবার বোর্ড সভাপতিদের নিয়ে শুরু হওয়া আইসিসি সভা মঙ্গলবারই শেষ হয়েছে। এ সভার ফাঁকেই পাকিস্তানকে এমন প্রস্তাব দিয়েছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। এমন একটি খবর প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের এআরওয়াই নিউজ। জানিয়েছে, দুবাইতে আইসিসি বৈঠক চলাকালে এক ফাঁকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খানের সঙ্গে বিসিসিআই সচিব অনুরাগ ঠাকুর সাক্ষাত করেছেন। সাক্ষাতেই পিসিবি চেয়ারম্যানকে ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজনের প্রস্তাব দেন অনুরাগ। তৃতীয় দল হিসেবে বাংলাদেশকে নেয়ার কথাও বলেন বিসিসিআই সচিব। তবে শাহরিয়ার খান প্রস্তাবিত সিরিজটি ছাড়া আর কোন আলোচনাই করতে চাননি বলেই জানা গেছে। অনুরাগ ঠাকুর শেষ পর্যন্ত ত্রিদেশীয় সিরিজের দরজা খোলা বলেই আপাতত সেই সাক্ষাত শেষ করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ভারতের ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তানে গিয়ে সিরিজ খেলতে চাইছে না। এমনকি নিরপেক্ষ ভেন্যু আরব আমিরাতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে না ভারত, সেই ইঙ্গিতও স্পষ্ট। এ জন্য একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজনের প্রস্তাব রেখেছে বিসিসিআই। তবে ভেন্যু নিয়ে কোন কথা হয়নি। প্রস্তাবিত ত্রিদেশীয় সিরিজের বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অবশ্য এখনও কিছুই জানে না। আইসিসি সভায় যোগ দিতে বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এখন দুবাইয়ে আছেন। তার সঙ্গে বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনও আছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বিসিবি সভাপতি বাংলাদেশে ফিরবেন। নাজমুল হাসান পাপন ফিরলেই এ বিষয়ে নিশ্চিত জানা যাবে। বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসই এমনটি জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘এ নিয়ে আমিও শুনছি। কিন্তু কিছুই জানি না। আইসিসি সভা শেষে বিসিবি সভাপতি ফিরলে সব জানা যাবে।’ তবে দুবাই থেকে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, ‘আমি এমন কিছু শুনিনি।’ বিসিবির কাছে যে এখনও এ নিয়ে প্রস্তাব আসেনি, তা বোঝাই যাচ্ছে। এ প্রস্তাব এখনই আসার কথাও না। বাংলাদেশের খেলার বিষয়ে বিসিবির কাছে প্রস্তাব আসতে হলে যে আগে পিসিবিকে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার জন্য রাজি হতে হবে। তারা এখনও এ নিয়ে কিছুই জানায়নি। পিসিবি রাজি হলেই না এ ত্রিদেশীয় সিরিজ হবে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে না আসায় এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সূচী ফাঁকা আছে বাংলাদেশের। তবে নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। সিরিজটি ২০ নবেম্বর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল-টি২০) পর্দা ওঠার আগেই শেষ হবে। ডিসেম্বরের ২০ তারিখে শেষ হবে। এরপর জানুয়ারিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ রয়েছে। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষদিকে ১০দিন ফাঁকা সময় রয়েছে বাংলাদেশের। ভারত এখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলতে ব্যস্ত রয়েছে। দুই দলের মধ্যকার সিরিজ খেলা শেষ হবে ৭ ডিসেম্বর। এরপর জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে আর ভারতের কোন সিরিজ নেই। আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচও নেই। ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। কিন্তু পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরে সন্ত্রাসী হামলার ইস্যুতে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের অবস্থান এবং দু’দেশের রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশের মধ্যে সিরিজটি আর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নিরাপত্তার কারণে সিরিজটি ভারত খেলবে না। পাকিস্তান এখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলছে। সিরিজটি নবেম্বরেই শেষ হয়ে যাবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত সিরিজ খেলবে না। আর তাই জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সূচীতে কোন খেলা নেই। যা বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান-এই তিন দলই ডিসেম্বরের শেষদিকে একটি সিরিজ হলে অনায়াসেই খেলতে পারবে। আর তাই বিসিসিআই ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তানকে। এখন শুধু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সম্মতি দেয়া বাকি। যদি পিসিবি রাজি হয়ে যায়, তাহলেই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানকে নিয়ে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ হতে পারে। ভারতকে সিরিজ খেলতে রাজি করানোর অনেক চেষ্টাই করেছে পাকিস্তান। কিন্তু কোন কিছুতেই ভারত খেলতে রাজি নয়। এমন মুহূর্তে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের জাতীয় নিরাপত্তা পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ জানিয়ে দেন, দু’দেশের মধ্যকার বর্তমান সম্পর্কের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজনের আদর্শ সময় এখনও হয়নি।’ এমন মন্তব্যে ভেস্তেই যায় ভারত-পাকিস্তান সিরিজ। এমনই যখন অবস্থা, তখন পাকিস্তানের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদের সহ্যের সীমাও অতিক্রম করে। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও যেন ক্ষেপে যান। ‘বুমবুম’ আফ্রিদি তো বিরক্তই হয়ে ওঠেন। বলেই দিয়েছেন, ‘সিরিজের জন্য ভারতীয় বোর্ডের পেছনে ঘোরাঘুরি বাদ দেয়া উচিত পিসিবির।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, আমরা কেন এখনও ভারতের পেছন পেছন ঘুরছি! আমরা তো ইতোমধ্যে তাদের (ভারতীয় দল) আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারপরও যদি তারা খেলতে না চায় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। বিশ্বে ওদের চেয়েও বড় বড় দল রয়েছে। তাদের সঙ্গে খেলতে পারলেই আমরা খুশি।’ এমন অবস্থায় বিসিসিআই’ও যেন বুঝতে পারছে দু’দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে ক্রমাগত তিক্ততা বেড়েই চলেছে। ক্রিকেটাররাও ক্ষেপে যাচ্ছেন। সেই তিক্ততা যদি খানিক কমানো যায়, এ জন্যই ভিন্ন পথে হাঁটুতে শুরু করেছে ভারত। পিসিবির কাছে প্রস্তাব রেখেছে ডিসেম্বরে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার। যেখানে ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে বাংলাদেশও।
×