ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ নুরুজ্জামান

কলঙ্কমুক্তি- ফেরার অপেক্ষায় তারা...

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৫

কলঙ্কমুক্তি- ফেরার অপেক্ষায় তারা...

আবার আলোচনায় তিন পাকিস্তানী ক্রিকেটার সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমির। গত ১ সেপ্টেম্বর তিন জনই আইসিসির নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পান। এরই মধ্যে ঘরোয়া ক্রিকেটে বল হাতে ঝড় তুলছেন তরুণ আমির। অন্য দু’জন আসন্ন মৌসুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন স্থানীয় নাম করা ক্লাব ওয়াপদার সঙ্গে। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে ফের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরছেন বহুল আলোচিত সেই স্পট ফিক্সিংয়ে জড়ানো তিন পাকি তারকা। বয়স কম হওয়ায় আমির কিছুদিন আগেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার অনুমতি পান। তাঁকে নিয়ে আলোচনাটাও বেশি। মুলতানে ঘরোয়া ক্রিকেটের এক ম্যাচে (নন-ফাস্ট ক্লাস) ইনিংসে ৭ উইকেট নির্বাসন কাটিয়ে ফেরা ২৩ বছর বয়সী আলোচিত এই পেসার। সুইং, কাটার, বাউন্সের পসরা সাজিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল করে ছাড়েন প্রতিভাবান বাঁহাতি। আমিরকে জাতীয় দলে ফেরানোর আগে বর্তমানে পুনর্বাসনে (রিহ্যাবিশন) রেখেছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। মাস দেড়েক আগে নির্বাসন ওঠার পর এটি ছিল আমিরের দ্বিতীয় লঙ্গার-ভার্সন ম্যাচ। স্থানীয় সাউদার্ন গ্যাস কর্পোরেশনের হয়ে মাঠে নেমে শক্তিধর পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের বিপক্ষে ৬১ রান দিয়ে ইনিংসে ৭ উইকেট শিকার করেন। ম্যাচে তুলে নেন ১০ উইকেট! দুটি ম্যাচে আমিরের ঝুলিতে ওঠে ১৭ উইকেট। যেন আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ফেরা। বল হাতে আগুনের গোলা ছোটানো বহুল আলোচিত-সমালোচিত তারকা আমির বলেন, ‘বোলিংটা ভীষণ উপভোগ করছি। নিজের উন্নতি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। দিনের পর দিন আরও বেশি করে নিজেকে ফিরে পাচ্ছি। তাড়াহুড়ো নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে শানিয়ে নিয়ে তবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে চান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখনই জাতীয় দলে ফেরা আমার লক্ষ্য নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে আগে পুরোপুরি ছন্দ ফিরে পেতে চাই। তারপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে ভাবব।’ আমির আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে, এটা আমার জীবনের অত্যন্ত সুখের খবর। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনটাকে আরও ভালভাবে সাজাতে চাই।’ আইসিসি কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর প্রথম লঙ্গার ভার্সন হলেও, এর আগে মার্চে স্বল্পদৈর্ঘের (টি২০) তে বল হাতে চমক দেখিয়েছিলেন। ফয়সালাবাদের এক সুপার এইট টি২০তে ম্যাচে রাওয়ালপিন্ডি রামসের হয়ে প্রথম বলেই সাজ্জাদ আলিকে পরিষ্কার বোল্ড করে দিয়েছিলেন। নিজের তৃতীয় ওভারে আরও ১টি। ২.১ ওভার বল করে ১৫ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। এ্যাবোটাবাদ ফ্যালকনের বিপক্ষে ৬ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছিল আমিরের রামস। ২০০৯ সালে পাকিস্তান জাতীয় দলের হাওয়ে ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেক। দূর্দান্ত বোলিং করে আগমনেই বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগিয়েছিলেন। সঙ্গে টেল-এন্ডে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য অনেকেই তার মাঝে কিংবদন্তির ছায়া দেখতেন। কি করতে কী হয়ে গেল, ২০১০-এ ইংল্যান্ড সফরে তৎকালীন অধিনায়ক সালমান বাট ও অপর পেসার মোহাম্মদ আসিফের সঙ্গে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়েন! আমিরের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। অপরাধের সময় বয়স কম (১৭ বছর) হওয়ায় আমিরকে পরিচর্যা করে পুনরায় জাতীয় দলে দেখতে চান সাবেক গতি তারকা শোয়েব আকতার। অন্যদিকে বর্তমান টি২০ অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি এর বিপক্ষে, তার যুক্তি, আমিরদের ফিরিয়ে আনলে ড্রেসিং রুমে ‘বাজে’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে! অন্যদিকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় দলে ডাক পেয়েছেন অপর দুই কলঙ্কিত তারকা সালমান বাট আর মোহাম্মদ আসিফও। এক সময়ের চ্যাম্পিয়ন ও সমৃদ্ধ ‘ওয়াটার এ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ওয়াপদা)’ দলটির চেয়ারম্যান জাফর মাহমুদ এ খবর জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাট ও আসিফের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওরা খেলার জন্য প্রস্তুত। তাই আমি আমার ম্যানেজমেন্টকে ওদের সঙ্গে চুক্তি করতে বলেছি।’ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর বর্তমানে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের আগস্টে পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সফরে লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার দায়ে বাট, আসিফ ও আমিরকে বিভিন্ন মেয়াদে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। ওই বছরের ০২ সেপ্টেম্বর জারি করা আদেশে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা পান তরুণ বোলার মোহাম্মদ আমির। আসিফকে সাত বছর ও তৎকালীন পাকিস্তানের টেস্ট অধিনায়ক বাটকে দশ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। পরবর্তীতে বাট ও আসিফের সাজার মেয়াদও কমিয়ে পাঁচ বছরে আনা হয়। বয়স কম হওয়ায় এবাং পাকিস্তান বোর্ডের (পিসিবি) প্রচেষ্টায় চলতি বছর জানুয়ারিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরতে আইসিসির অনুমতি পান আমির। এবার ফেরার অপেক্ষায় বাট ও আসিফ। বাট অবশ্য নিজেকে খেলার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে ফিট রেখেছি স্থানীয় ক্রিকেট ম্যাচ খেলে এবং রোজ নেট প্র্যাকটিস করে। এই বড় মুহূর্তের জন্য আমি তৈরি।’ ঘরোয়া ক্রিকেটের পর কি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফেরা হবে? এমন প্রশ্নে ২০০৩-২০১০ পর্যন্ত ৩৩ টেস্ট ও ৭৮ ওয়ানডে খেলা ব্যাটসম্যান বলেন, ‘কেন নয়? আমার বয়স এখন ৩০। ফর্ম ও ফিটনেস দিয়ে নির্বাচকদের সন্তুষ্ট করতে পারলে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারব।’ একই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে আবারও ক্ষমা চান তিনি। এর সঙ্গে বাট যোগ করেন, ‘আমি আক্ষেপ করি ও ক্ষমা চাই যা কিছু ঘটেছে তার জন্য। তবে আমি শিক্ষা পেয়েছি। এখন ভাল মানুষ হওয়ার সুযোগ চাই। আশা করছি পাকিস্তানের মানুষ ও ভক্তরা আমাকে ইতিবাচকভাবে নেবেন।’ বাট যখন এই কথা বলছেন তখন আসিফও জানিয়েছেন ফেরার ইচ্ছের কথা। প্রতিভাবান এই পেসার বলেন, ‘আমি ভাল পারফর্ম করলে নির্বাচনের জন্য যোগ্য হয়ে উঠবো। সেরা খেলোয়াড়রা সবসময় তাদের দেশের হয়ে খেলার ও দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়।’ বাট-আসিফ স্বপ্ন দেখলেও এখনই জাতীয় দল নিয়ে ভাবছেন না বল হাতে ঝলক দেখানো আমির। ঘরোয়া ক্রিকেটে উত্তরোত্তর ভাল করাই তার প্রথম লক্ষ্য।
×