ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগে স্বাধীন কমিশন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৫ অক্টোবর ২০১৫

এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগে স্বাধীন কমিশন হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগে অবশেষে সরকারী কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) আদলে হচ্ছে পৃথক একটি স্বাধীন কমিশন। নিয়োগে ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে গঠিত এ কমিশনের নাম হবে বেসরকারী শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি)। বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন এ কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কমিশন হলে আগের মতো আর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে কমিশনই পরীক্ষার মাধ্যমে উপজেলাভিত্তিক শিক্ষক নির্বাচন করবে। এ কমিশন গঠিত হলে নিয়োগের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ বা গবর্নিং বডির কর্তৃত্ব থাকবে না। গবর্নিং বডি কেবল কমিশনের দেয়া মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেবে। আগামী এক মাস বা তার কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই এ কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ ছাড়াও শিক্ষক সংগঠনসহ শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল মহলেরই দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি পৃথক নিয়োগ কমিশন। যে কমিশন কেবল বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগ করবে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীনে একটি পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা বিভিন্ন বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে নিয়োগের একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকে পরিচালনা কমিটির হাতে। এতে নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। শিক্ষানীতির সুপারিশের পর ২০১১ সালে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি পৃথক শিক্ষা কর্মকমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে সে সময় সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষকদের জন্য একটি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়ায় দুই বছর ধরে ফাইল চালাচালি হলেও সফল হয়নি সরকার। সরকারী শিক্ষকদের আপত্তি ও বেসরকারী শিক্ষকদের বিষয়টি ভালভাবে স্পষ্ট না করায় জটিলতা দেখা দেয়। ওই সময় একটি খসড়া সচিব কমিটি পর্যন্তও গড়িয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উদ্যোগ পুরোপুরি ঝুলে যায়। তবে এবার শিক্ষানীতি অনুসারে বেসরকারী শিক্ষকদের জন্যই হচ্ছে কমিশন। নামও চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, মানসম্মত ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, স্বচ্ছতা আনয়ন তথা দেশের সার্বিক শিক্ষার উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে দেশের প্রতিটি শিক্ষানীতি ও রিপোর্টে আলাদা একটি শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে কমিশন হবে বর্তমান পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) থেকে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান। যেটি কেবল বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগের কাজ করবে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল মহলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এবার দ্রুত কাজ করতে চায় সরকার। দেশে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এমপি, নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকেন তাদের নেতারা পরিচালনা পর্ষদে চলে আসেন। শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া এতদিন তাদের হাত দিয়েই শেষ হতো, যা নিয়ে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’সহ বিভিন্ন অভিযোগ চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, অনেক সময় স্বচ্ছভাবে নিয়োগ হয় না, স্বজনপ্রীতি হয়, উপযুক্ত লোকও নিয়োগ পায় না। অনেক সময় আর্থিক লেনদেনও হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি পদের বিপরীতে বর্তমানের এনটিআরসিএ নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক যোগ্য প্রার্থী বেরিয়ে আসায় শিক্ষক নিয়োগে ‘স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের’ এই সুযোগ তৈরি হয়। এনটিএসসি গঠনের পরে বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও এনটিআরসিএ বিলুপ্ত করা হবে। তবে এনটিআরসিএ-এর অধীনে এর আগে যারা সনদ পেয়েছেন তারাও বেসরকারী শিক্ষক নির্বাচন কমিশনের মেধা তালিকায় থাকবেন। নতুন ব্যবস্থায় বছর শেষ হওয়ার তিন মাস আগে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কতজন শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে তা সংগ্রহ করা হবে। নির্দিষ্ট অঞ্চলের (উপজেলাভিত্তিক) লোককে ওই অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগ দেয়া হবে। কোন উপজেলার কোন বিভাগের জন্য যোগ্য শিক্ষক পাওয়া না গেলে নিয়োগ দেয়া হবে পাশের উপজেলা থেকে। পাশের উপজেলায়ও যোগ্য শিক্ষক পাওয়া না গেলে ওই জেলা থেকে শিক্ষক নেয়া হবে। আর জেলায়ও পাওয়া না গেলে ওই বিভাগে নির্বাচিতদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। কমিশনের অধীনে শিক্ষক বাছাইয়ের সময় মৌখিক পরীক্ষাও নেয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন ভাল মানুষ ভাল শিক্ষক নাও হতে পারেন। এজন্য বলার ভঙ্গি, বোঝানোর দক্ষতা দেখতে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। স্বাধীন কমিশনে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না। যারা নিরপেক্ষ, দক্ষ ও শিক্ষা বিষয়ে যাদের অবদান রয়েছে তাদের নিয়ে এই কমিশন গঠন করা হবে। বাংলাদেশে ৩০ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য কোয়ালিটি টিচার দরকার। তিনি জানান, কমিশন গঠনের বিষয়টি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিষয়টি এক মাসের মধ্যে শেষ করার প্রস্তুতি মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান জানান, স্বাধীন কমিশন গঠনের পরে এনটিআরসিএ-এর সনদের মেয়াদ থাকবে তিন বছর। এনটিআরসিএ’র অধীনে এ পর্যন্ত ১২টি পরীক্ষার মাধ্যমে মোট পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৩২৯ জন সনদ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৩ হাজার ৪২ শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। আর এনটিআরসিএ সনদপ্রাপ্তদের মধ্যে ‘এখনও কোন চাকরি পাননি’ এমন প্রার্থীর সংখ্যা তিন লাখের মতো বলে শিক্ষাসচিব জানান। শিক্ষাসচিব আরও বলেন, বছরের শেষভাগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে শিক্ষকের চাহিদা সম্পর্কে কমিশন অবহিত হবে। আর বছরের শুরুতে সে অনুপাতে কমিশন শিক্ষক বাছাই করবে। এতে করে চাহিদা আর নিয়োগের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকবে। শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করে অনির্দিষ্টকাল বসে থাকার সুযোগ থাকছে না। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করার পর তা তিন বছর কার্যকর থাকবে। তিন বছর পর তাকে আবার পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
×