ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পী প্রবাল চৌধুরীর ষষ্ঠ প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৫ অক্টোবর ২০১৫

শিল্পী প্রবাল চৌধুরীর ষষ্ঠ প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘এই জীবন তো একদিন চলতে চলতে থেমে যাবে’, ‘আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য, তোমারি প্রেমেরই জন্য’, ‘আমার সাজানো বাসর গেছে ভেঙে’, কুসুম খুঁজিনা কারো কাছে, সুরের সভায় আমি যেন অনাহত এক শিল্পী,’ ‘আমি মানুষের মতো বাঁচতে চেয়েছি এই কি আমার অপরাধ?’ এমনি অনেক শ্রোতানন্দিত গান গেয়ে যিনি শ্রোতাদের মনে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছিলেন, তিনি হলেন স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সঙ্গীতশিল্পী প্রবাল চৌধুরী। সত্যি সত্যি চলার মাঝে চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেলেন এই গুণী শিল্পী। গাইতে গাইতেই থেমে যায় তাঁর জীবন। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গীতিকার এম আনিস আহমদ বাচ্চুর কথা ও তার নিজের দেয়া সুরে ‘তোমার সুখের স্বর্গে চাই না তো আমি, একমুঠো বেদনা, আসুক না মেঘ’ গানটি গাইতে গিয়েই তাঁর কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায় ২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর। এরপর আরও দু’দিন নির্বাক থেকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। নন্দিত সঙ্গীতশিল্পী প্রবাল চৌধুরীর ষষ্ঠ প্রয়াণদিবস আগামীকাল শুক্রবার। প্রয়াত এ শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শিল্পীর জন্মস্থান চট্টগ্রামে বিশেষ এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। শিল্পীর বড় বোন স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের আরেক নন্দিত কণ্ঠশিল্পী কল্যাণী ঘোষ জানান, চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জের ১৬ নং দেওয়ানজী পুকুর পাড় প্রবাল চৌধুরীর নিজ বাসভবনে তাঁর পারলৌকিক ক্রিয়া ও শ্রদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া এদিন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বড় পরিসরে এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রবাল চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বিনাজুরি গ্রামে। তবে শৈশব থেকেই তিনি বেড়ে ওঠেন এবং জীবন কাটান চট্টগ্রাম শহরের সাংস্কৃতিক এলাকা রহমতগঞ্জের ১৬ নং দেওয়ানজী পুকুরপাড়স্থ নিজ বাস ভবনে। যাঁর যাদুকরী কণ্ঠ শুনে অনেকে মনে করতেন এপার বাংলার হেমন্ত মুখার্জী। আর যখন তিনি তার প্রিয়শিল্পী হেমন্তের কোন গান গাইতেন, তখন তো তাঁকে প্রবাল বলার কোন অবকাশই পাওয়া যেত না। মা লীলাবতী চৌধুরী ছিলেন তাঁর গানের প্রধান অনুপ্রেরণা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রবাল চৌধুরীর কণ্ঠে মোস্তাফিজুর রহমান গামার লেখা ‘ভেবো না গো তোমার ছেলেরা হারিয়ে গিয়েছে কবে’ গানটি মুক্তি সেনাদের যারপরনাই প্রেরণা যুগিয়েছে। ‘লোকে যদি মন্দ কয় সে তো নহে পরাজয়’, ‘ফুলের বাসর ভাঙলো যখন স্মৃতি কেন বেদনার বাসর সাজায়’ গানগুলো প্রবাল চৌধুরীকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগ থেকে যুগান্তর। শিল্পী প্রবাল চৌধুরীর গাওয়া ‘এই জীবন তো একদিন চলতে চলতে থেমে যাবে’ গানের কথার মতোই তার জীবনটা হঠাৎ থেমে গেছে। কিন্তু তাঁর মতো কৃতীমানদের কখনও মৃত্যু হয় না। তিনি বাঙালীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অনাদিকাল।
×