ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পুরী সিরিজ-য়ের শেষ কবিতা

সদ্য প্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি উৎপল কুমার বসুর কবিতা

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১৬ অক্টোবর ২০১৫

সদ্য প্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি উৎপল কুমার বসুর কবিতা

তারপর ঘাসের জঙ্গলে পড়ে আছে তোমার ব্যক্তিগত বসন্তদিনের চটি। এবং আকাশ আজ দেবতার ছেলেমেয়েদের নীল শার্ট পাজামার মতো বাস্তবিক। একা ময়ূর ঘুরছে খালি দোতলায়। ঐ ঘরে সজল থাকতো। সজলের বৌ আর মেয়েটি থাকত। ওরা ধানকল পার হয়ে চলে গেছে। এবার বসন্ত আসছে সম্ভাবনাহীন পাহাড়ে জঙ্গলে এবার বসন্ত আসছে প্রতিশ্রুতিহীন নদীর খাঁড়ির ভিতরে নেমে দু’জন মানুষ তামা ও অভ্র খুঁজছে। তোমার ব্যক্তিগত বসন্তদিনের চটি হারিয়েছ বাদামপাহাড়ে। আমার ব্যক্তিগত লিখনভঙ্গিমা আমি হারিয়েছি বাদামপাহাড়ে। সলমা-জরির কাজ ৭ বন্ধু, তোমার হাতের উপর হাত রাখলেই আমি টের পাই তোমার বাজারে অনেক দেনা, ছেলেটা উচ্ছন্নে গেছে, মেয়ে রাত করে বাড়ি ফেরে, আজ যা-বলার আছে তুমি আমাকেই বলো, স্ত্রীর মুখরতার কথা বলো, সহকর্মীদের শঠতার কথা বলো, রাতে ঘুম হয় না সেই কথা বলো, আর যদি কাঁদতেই হয় তবে এই কাঁধে মাথা রেখে কাঁদো, বন্ধু। ৮ রাশভারী জল কাশভারী তীর এই নদীটির ছিপ ও নৌকা হেথা কেড়ে নিলে বোয়ালে ও চিলে সে তবে এখন যাবে চলে কাশী? -নিরামিষাশী? নাকি নৌকার সন্ধানে যাবে -সকলের আগে? বৃথা উদ্যম- তাকে দিয়ে আর কিছু না-হবার এখানে থাকবে যতদিন হয় ক্ষীর নদী বয় যতদিন ছিপ ফিরে না আসছে জলে না ভাসছে সাধের নৌকা। টিকা স্নেহে উচাটন হয়ে থাকি। বুঝি ভোর হয়ে এলো। শেষ রাতে এখনি বিমান মাটিতে নামবে। কত দেশ পার হয়ে উড়ে আসছ- কত পাহাড়, সাগর- কত মানুষজনের ঘুমন্ত দেহের উপর দিয়ে ভেসে এলে- তারা কিছুই জানল না- শুনেছি আমরা মৃত্যুর পর নাকি ও-ভাবেই উড়ে যাই- সকলের অগোচরে, অপ্রত্যক্ষে- সবাইকে একভাবে ভালোবেসে অথবা না বেসে, সে-উড়ানে ভোর নেই, রাত্রি নেই। এইখানে সবকিছু অপেক্ষায় আছে। কহবতীর নাচ ১ একাধিকবার এই সৈকতে এসে বলেছি আমার মতো পুরুষকে তো কিছু কলঙ্কের ভাগ তুমি দিতে পারো। হয়নি, শোননি কেউ, শুধু বালিয়াড়ি ধসে পড়েছে সাগরজলে। স্তব্ধতা থেকে কোলাহলে আবার যাত্রা শুরু, পাপ থেকে পাপের স্খলনে। ঝাউবনে উড্ডীন পতাকাবিদ্রোহ থেকে রঞ্জনরশ্মির অনলে- চলেছি সকলে। এই মদ কীভাবে করব পান- বলে দাও। দাঁড়িয়ে জলের ধারে? ছিঁড়ে-আনা এই ফুলগুলি ঘুমন্ত খ্রিস্টগাছে ফুটেছিল- কীভাবে ভাসবে তারা মাতৃসমা জলে? ২ যে তমসা নদীর তীরে আমি আজ বসে আছি তার বালুকণাগুলি আমাকে জানাতে চাইছে আমি জল থেকে কতটা পৃথক- তার ঢেউগুলি আমাকে বোঝাতে চাইছে আমি গাছ নই, আর গাছের আড়ালে ঐ ধাঙড়বস্তির এক মদ্যপানরত যুবক আমাকে বলতে চাইছে আমি পক্ষীরাজ, মেঘ থেকে নামলাম, এইমাত্র, সাক্ষাৎ তারই চোখের সামনে- হবেও-বা। তাহলে বর্ষার আঁধার সকালে আমি ডানা গুঁজে বসে থাকি। রোদ উঠলে উড়ে যাব। মীন যুদ্ধ ৫ জেগে উঠব ফলের খামারে-আপেল, আঙুর ক্ষেতে। ডেকে ডেকে সকলকে প্রশ্ন করব কেন শুধু সত্যেরই জয় হবে, মিথ্যার নয়? এই দেশে ও-প্রশ্নের জবাব পাবো না। সে রকম মনে হচ্ছে। রাজ পুরুষের ছায়া লম্বা হয়ে দেয়ালে পড়েছে। ৬ খেলা ভালো লাগে যখন যা-নিয়ে খেলি তারই মোহে পড়ে যাই। কী গভীর সেই টান তা কি আমি বোঝাতে পারব? একদিন গান গাইতাম আর দূর দূর থেকে যারা উড়ে আসত তারা কত খুশি হত- বয়ে আনত ফুলের পরাগ আর জঙ্গলের মধু -খেলা ছিল- বিশ্বাস না যদি হয় জেনে নাও, জিজ্ঞেস করো, ঐ তো দেয়ালে ঝুলছে ওরা ফ্রেমে বাঁধা, পিন-য়ে গাঁথা, কাচের আড়ালে। ৭ ব্যবহৃত খাম। আমি তার পিঠের ওদিকে সামান্য কয়েক ছত্র লেখার মতো স্থান পেয়ে যাই- আঁকিবুকি কিছুটা টেনেছি, তবু ফাঁক থাকে, যত লিখি ততই শূন্যতা জন্মে, ভেসে ওঠে গ্রীষ্মের কোলিয়ারি- সখা-মরীচীকা, দুপুরের তাপে ঝলোমলো তৃষ্ণা ও তৃষিতের মাঝামাঝি এত সব লেখালেখি কেন টেনে আনো?
×