ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চলছে ॥ মার্কিন রিপোর্ট

ধর্মীয় চরমপন্থার কবলে বিশ্ব

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৭ অক্টোবর ২০১৫

ধর্মীয় চরমপন্থার কবলে বিশ্ব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার এক হতাশাব্যঞ্জক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং ইউরোপে ইহুদি-বিরোধী মনোভাবের উত্থানের নিন্দা করা হয়েছে। খবর এএফপির। পররাষ্ট্র দফতর ধর্মীয় বৈষম্য সম্পর্কিত বার্ষিক জরিপে বলেছে, অনেক সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে কঠোরতর চেষ্টা চালালেও স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) দলের মত অরাষ্ট্রীয় চরমপন্থীদের উত্থান ঘটছে। আর ধর্মীয় বৈষম্য কেবল ইরান ও চীনের মত ওয়াশিংটনের শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, সৌদি আরবের মত ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ক্ষেত্রে ‘শোচনীয়’ এবং ফ্রান্স ও জার্মানির মত পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। রিপোর্টটি প্রকাশ করার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, কোন দেশের জনগণকে যদি তাদের অন্তর্নিহিত বিশ্বাস পালন, ধারণ, সংশোধন ও প্রকাশ্যে ঘোষণা করার অধিকার দিতে অস্বীকার করে, তা হলে দেশটি এর সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে পারে না। তিনি বলেন, আমরা সরকারগুলোকে তাদের নাগরিকদের ধর্মীয় মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখাতে আরও উৎসাহ দেয়ার আশা করছি। ওই আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা রিপোর্ট-এর জরিপের আওতাভুক্ত দেশগুলোর প্রতি মার্কিন নীতিতে কোন প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে না, তবে এটি কূটনীতিক ও পরিবর্তনের জন্য লবিং করছে এমন আন্দোলনকারীদের জন্য তথ্যভা-ার হিসেবে কাজ করবে। কেরি এ মন্তব্য করেন। গত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার ১২ মাসের মধ্যে আইএসের মত জঙ্গী দলগুলো ইরাক ও সিরিয়াতে এবং বোকো হারাম, নাইজিরিয়া ও লেক শাদ বেসিনে সবচেয়ে নির্মম ধর্মীয় নির্যাতন চালায়। কেরি বলেন, তাদের হাতে বন্দীদেরকে ধর্মান্তরণ বা দাসত্ব বা মৃত্যুর মধ্যে কোন একটি বেছে নিতে দেয়া হয়। রিপোর্টের প্রণেতা রাষ্ট্রদূত ডেভিড স্যাপারস্টিন বলেন, সমগ্র জনসমস্টির ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে হত্যার জন্য বেছে নেয়া হয়। ভীতসন্ত্রস্ত কিশোরীদের ধর্মীয় ভিত্তিতে পৃথক করে দাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়। তিনি উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভাগ্য বিশেষভাবে শোচনীয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক ওয়াশিংটনের বিশেষ দূত। তিনি বলেন, উত্তর ইরাকের নিনাভা সমতল ভূমিতে ১৬০০ বছর ধরে এক খ্রিস্টান সম্প্রদায় ছিল, ১৬০০ বছর ধরে সেখানকার গির্জাগুলোতে ঘণ্টা বাজত। আজ সেগুলো নিস্তব্ধ। তিনি বলেন, জনগণ তাদের নিজ বসতিতে ফিরে গিয়ে তাদের বিবেকবোধ অনুযায়ী তাদের ধর্মীয় জীবনযাপনের অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না। গত বছরের রিপোর্টের মতো এ রিপোর্টেও ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপের অন্যত্র ইহুদি-বিরোধী প্রচারণা ও হামলা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এটি রোধ করতে চেষ্টা করেছিল বলে স্যাপারস্টিন স্বীকার করেন। ইউরোপীয় ইহুদিদের প্রতি বৈরিতাবোধের অন্যতম কারণ হিসেবে ইসরাইলের ফিলিস্তিনি ভূখ- দখলের বিরুদ্ধে প্রচার তৎপরতাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু ওয়াশিংটনের মতে এ বৈরিতার অনেকাংশই সীমা পেরিয়ে অন্ধ গোঁড়ামিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, কোন দেশের সরকারী নীতির সমালোচনা মেনে নেয়া যায়। এটি ভাবধারার অবাধ বিনিময়ের অংশ। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে কিছু গোষ্ঠী ইসরাইল মূলত এক অবৈধ রাষ্ট্রÑএর কোন ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার অধিকার নেই বলে যুক্তি দেখায়, সেক্ষেত্রেই প্রায়ই সীমা লঙ্ঘিত হয়। স্যাপারস্টিন ইহুদি রাষ্ট্রকে অবৈধ প্রতিপন্ন করার চেষ্টার নিন্দা করেন। তিনি বলেন, আমরা সাধারণত একে বর্ণবাদ বলে মনে করি। আমাদের মতে, যদি এটা সেই সীমা লঙ্ঘন করে, তা হলে এটি ইহুদি-বিরোধী তৎপরতায় পরিণত হয় এবং কেবল ইসরাইলের নীতি সম্পর্কিত বৈধ আলোচনা থাকে না।
×