ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর যানজট নিরসনে

সাধারণের রোডম্যাপ ॥ ৭৫ ভাগ যানজটের জন্য দায়ী ক্রসিং পয়েন্ট

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৭ অক্টোবর ২০১৫

সাধারণের রোডম্যাপ ॥ ৭৫ ভাগ  যানজটের জন্য দায়ী  ক্রসিং  পয়েন্ট

শর্মী চক্রবর্তী ॥ যানজট একটি জাতীয় সমস্যা। প্রতিদিন এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সবাইকে। এর ফলে প্রয়োজনীয় অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। এক গবেষণায় দেখা যায়, যানজটের কারণে বছরে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। এছাড়া বছরে কর্মঘণ্টা থেকে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। এ সমস্যা এতো ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, এর সমাধান করা বর্তমানে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সমাধান বের করলেও তা প্রয়োগেও রয়েছে অনেক বাধা। গবেষকরা এ নিয়ে অনেক কাজ করছেন। এ সমস্যা সমাধানে সরকার দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও এর কোন স্থায়ী সমাধান বের করতে পারছে না। এ সমস্যায় যারা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী তারা হলেন সবসময় যারা রাস্তায় চলাফেরা করেন। নিজেরা ভুক্তভোগী হয়ে যানজটের এ বেহাল অবস্থা দেখে এ সমস্যা সমাধানের চিন্তা করেছেন কয়েকজন সাধারণ মানুষ। যারা প্রতিনিয়তই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। যানজটের এই সমস্যায় পড়েই তারা এ থেকে উত্তরণের জন্য তৈরি করেছেন রোড ম্যাপ। তারা হলেন, সিএনজিচালক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতা। যানজট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাদের তৈরি ম্যাপে যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে বের হয়ে এসেছে তিন রাস্তা ও চার রাস্তার ক্রসিং পয়েন্টগুলোই যানজট সৃষ্টির প্রধান কারণ। ঢাকার রাস্তায় খুব ঘন ঘন ক্রসিং পয়েন্ট আছে এবং ট্রাফিক সিগনালের কারণে, এই সব ক্রসিং পয়েন্টগুলোতে, ক্রসিং পয়েন্টমুখী সবগুলো রাস্তায় গাড়ি জমে প্রবল যানজটের সৃষ্টি করে। যানজটের কারণে, ঢাকা শহরে গাড়ির গড় গতিবেগ মাত্র ১০Ñ১২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ঢাকা শহরের শতকরা ৭৫ ভাগ যানজটের জন্য মূলত এই ক্রসিং পয়েন্টগুলো। তাদের মতে, সিগন্যালবিহীন সড়ক হলেই যানজট কমানো সম্ভব হবে। মোটরযান মেকানিক ফাউন্ডেশনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পিয়ার মাহমুদ দিদার এই সমস্যা সমাধানে ম্যাপ তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের এ সমস্যা ও দেশের বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে স্বল্প বাজেটে স্বল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে, এই সমস্যার সমাধানে ২০০৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর সাপ্তহিক ‘২০০০’ এ প্রকাশিত সংখ্যায় “সিগন্যালবিহীন মডেল সড়ক” শিরোনামে চিত্রসহ তিনি তার ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। তিনি তার ম্যাপে উল্লেখ করেছেন তার ফর্মুলা ব্যবহার করলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরা-এয়ারপোর্টকে যানজটমুক্ত করা সম্ভব। তিনি বলেন, যানজট কেন সৃষ্টি হয় এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে বুঝা যায়, ৬০% যানজট সৃষ্টি হয় রাইট টার্ন (ডানে মোড়)-এর জন্য। বাকি ৪০% বিভিন্ন রকম অব্যবস্থাপনা, সিদ্ধান্তহীনতার কারণে। ঢাকার বিভিন্ন সড়কের গাড়ি চলাচলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই; একটি ব্যস্ত সড়কে পিক আওয়ারে প্রতি মিনিটে গড়ে ৪০টি গাড়ি, অফ পিক আওয়ারে গড়ে ২০টি গাড়ি অর্থাৎ মোট গড়ে ৩০টি গাড়ি চলছে। রাইট টার্ন নির্ধারিত সিগন্যাল এলাকায় গড়ে প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ ২০টি গাড়ি অতিক্রম করতে পারে; বাকি ১০টি গাড়ি জমতে জমতে এক সময় ওই এলাকায় বিশাল যানজট সৃষ্টি হয়। অথচ ডানে মোড় নেই এমন এলাকা, যথা কুড়িল বিশ্বরোড থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রবাহে প্রতি মিনিটে ৬০Ñ৮০টি পর্যন্ত গাড়ি চলে। কিন্তু এখানে কোন যানজট সৃষ্টি হয় না। একটি চৌরাস্তা এলাকায় গাড়ি ১৬ দিকে টার্ন করে। বর্তমান সিগন্যাল ব্যবস্থায় গাড়ি ৪ দিকে টার্ন করতে পারে এবং ১২ দিক বন্ধ থাকে। যে সমস্ত’ এলাকায় উড়াল সড়ক, ওভার পাস নির্মাণ হয়েছে সে এলাকা দিয়ে চলাচলরত গাড়ির প্রবাহ সিগন্যাল এলাকায় এসে বিশাল যানজট সৃষ্টি করে। যেমন- এয়ারপোর্ট, কুড়িল বিশ্বরোড, বনানী রেলক্রসিং ওভার পাস হয়ে গাড়ির দ্রুত যে প্রবাহ সৃষ্টি হয় সে প্রবাহ কাকলী সিগন্যালে এসে থমকে যাচ্ছে। মোট কথা উড়াল সড়ক বা ওভার পাস দিয়ে অতিক্রম করে আসা গাড়ির দ্রুত প্রবাহের সঙ্গে সিগন্যাল এলাকা সমন্বয় করতে পারছে না। আবার সমন্বয়ের প্রয়োজনে ঢাকার সব এলাকা বা সারা বাংলাদেশে উড়াল সড়ক নির্মাণও সম্ভব নয় যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, ঝুঁকিপূর্ণ, সময় সাপেক্ষ। তবে এলাকার গুরুত্ব অনুযায়ী এবং রেলক্রসিং এলাকায় ওভার পাস নির্মাণ জরুরী। তিনি তার ম্যাপে উল্লেখ করেছেন, যদি ইউ র্টান ও সিগনাল বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে ডানে মোড় বা চৌরাস্তা এলাকায় ১৬ দিকে গাড়ি এক সঙ্গে একই সময়ে সকল দিকে চলাচল করতে পারে। ম্যাপে উল্লেখ আছে ১নং সড়কের গাড়ি ২নং সড়কে, ২নং সড়কের গাড়ি ১নং সড়কে চলাচলের জন্য সরাসরি ব্যবস্থা আছে। ৪টি সড়কে গাড়ি বামে যাওয়ার জন্য বাম লেন ব্যবহার করে কোন রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া যেতে পারবে। ১নং সড়কের গাড়ি ৪নং সড়কে যাওয়ার জন্য ২নং সড়কের ইউটার্ন ঘুরে আসবে; অনুরূপভাবে ইউটার্ন ব্যবহার করে বিনা প্রতিবন্ধকতায় গাড়ি সকল দিকে যেতে পারবে। একটি সিগন্যাল এলাকায় ১৫Ñ২০ মিনিট অপেক্ষা করার চেয়ে ২ মিনিট ব্যয় করে ইউটার্ন এলাকা ঘুরে আসা গাড়ির জন্য অনেক সাশ্রয়ী। ইচ্ছা করলেই কেউ এ ব্যবস্থায় আইন অমান্য করতে পরবে না; এখানে সবাই আইন মানতে বাধ্য। সুতরাং পরীক্ষামূলকভাবে সরকার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা বিশ্বরোড, ফেনীর মহিপালের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ইউটার্ন পদ্ধতিটি বাস্তবায়ন করলে এক মাসের মধ্যেই সুফল পাবে। অথবা বনানী রেলক্রসিং ওভার পাস থেকে মহাখালী ফ্লাইওভার পর্যন্ত এলাকাটুকু সামান্য সংস্কারে ইউটার্ন পদ্ধতি চালু করে দেখা যেতে পারে। অথবা টঙ্গি থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকাটুকু ছোট ছোট প্যাকেজে কাজের নির্দেশনা দিয়ে, সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে পনেরো দিনের ভেতরে উক্ত সড়কের যানজট দূর হতে বাধ্য। একই পদ্ধতিতে সামান্য সংস্কার করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরা-এয়ারপোর্টকে যানজটমুক্ত করা সম্ভব। ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামও যানজট নিরসনে একটা ম্যাপ তৈরি করেছেন। সাধারণ মানুষ হিসেবে তিনিও প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য বের হন। কিন্তু তার দিনের বেশির ভাগ সময়ই চলে যায় যানজটে পড়ে। এতে করে তিনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাকলী সিগন্যালে উনার ৫৬ মিনিট সিগন্যালে বসে থাকারও অভিজ্ঞতা আছে বলে জানান তিনি। এসব দেখেই তার মাথায় পরিকল্পনা আসে কি করলে এই যানজট থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি পেতে পারেন। তিনি তার পরিকল্পনা উত্তরের মেয়রের হাতেও তুলে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, তিনি যে পরিকল্পনা তৈরি করেছেন সেটি যদি প্রয়োগ করা হয় তাহলে এই পরিকল্পানায় মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত যানজট দূর করা সম্ভব। এতে করে অনেক মানুষের জন্য ভাল হবে বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষ যারা গুলিস্তান থেকে উত্তরার দিকে যাবেন তাদের জন্য সুবিধা হবে। এটি করতে তেমন খরচও হবে না। তা স্বল্প আয়ের মধ্যে করা সম্ভব। যদি এই রাস্তায় যানজট কমানো হয় এক্ষেত্রে এই রাস্তার যতগুলো ইউর্টান আছে তুলে ফেলতে হবে। কারণ ইউর্টান নেয়ার জন্যই এই সড়কে সবচেয়ে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। যেমন কাকলী সিগন্যাল সেখানে ফার্মগেট থেকে যে গাড়ি গুলশানে যাবে তারা কাকলী সিগন্যালে এসে জমা হয় সেখান থেকে ডানে মোড় নেয়ার জন্য। এ কারণে এখানে অনেক যানজটের সৃষ্টি হয়। যদি এই গাড়িগুলো ডানে মোড় না নিয়ে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচে দিয়ে ঘুরে গুলশানে আসে তাহলে এই যানজটের সৃষ্টি হবে না। এতে করে সবার অনেক সময় বেঁচে যাবে শুধু একটু ঘুরতে হবে। শুধু কাকলী সিগনালেই নয় এভাবে যদি প্রতিটি সিগনালে ইউর্টান বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে রাজধানীতে যানজট কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এই যানজটের কারণে আমরা অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রতিদিন বহু কোটি টাকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই যানজটে বসে থেকে। তাই নিজে এই অবস্থার শিকার হয়েই এই পরিকল্পনা তৈরি করেছেন যানজট নিরসনের জন্য। তিনি বলেন, শুধু একটি রুটেই নয় এভাবে প্রত্যেক রাস্তার এমন ব্যবস্থা নিয়ে ইউর্টান বন্ধ করে দিলে রাজধানীতে যানজট সমাধান সম্ভব। সিএনজি চালক সিকান্দার আলী রাস্তাঘাটে চলতে চলতে এই যানজটে সমাধানে একটি ম্যাপ তৈরি করেন। তার মতে দোয়েল চত্বর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সিগনাল বন্ধ করে দিলে এবং চার রাস্তা ও তিন রাস্তা ক্রসিং বন্ধ করে দিলেই রাজধানীতে যানজট সমাধান সম্ভব। এক্ষেত্রে যে সমস্যাটা হবে তা হলো যারা চৌরাস্তায় বাঁয়ে ঘুরে যাবেন তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে কিছুটা রাস্তা ঘুরতে হবে। এতে একটু বেশি রাস্তা যেতে হলেও সময় বেঁচে যাবে। যেমন যারা এয়ারপোর্ট থেকে শাহাবাগ টিএসসিতে যেতে চান তাদেরকে রূপসী বাংলা থেকে বাঁয়ে গিয়ে ঘুরে শাহাবাগ আসতে হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রিপাড়ার ভিতর দিয়ে বাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে তাহলেই যানজট কমানো সম্ভব। তারা আরও মনে করেন, ঢাকা শহরের যানজট সমস্যার সমাধানে সরকারকে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেমন যে পরিবারের একটি বাইসাইকেল হলেই যথেষ্ট, সে পরিবারের ৪টা প্রাইভেট কার; একটা গাড়ি নিয়ে সাহেব মতিঝিলের অফিসে, একটি গাড়ি নিয়ে ম্যাডাম উত্তরার কোন এক পার্লারে, একটি গাড়ি নিয়ে ছেলে ধানম-ি, অন্য একটি গাড়ি নিয়ে মেয়ে গুলশানে; অর্থাৎ একটি পরিবারের ৪টি গাড়ি ৪ দিকে যানজট সৃষ্টি করছে। একটু হিসাব করলেই আমরা বুঝতে পারি, একটি বড় গাড়ির গড় আয়তন ৩০’ঢ৯’ মানে ২৭০ বর্গফুট; এই গাড়িতে শ্রমজীবী পেশাজীবী ৭০ জন যাত্রী গরমে-ঘামে সিদ্ধ হয়ে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে প্রতিদিন রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে সচল রাখছে। পক্ষান্তরে ছোট গাড়ির গড় আয়তন ১২’ঢ৬’ মানে ৭২ বর্গফুট; উক্ত পরিবারের ৪টি গাড়ি অর্থাৎ ৭২ঢ৪ মানে ২৮৮ বর্গফুট সড়ক ৪ জন দখল করে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদ গ্যাসের মূল্য কম বিধায় যেখানে হেঁটেই যাওয়া যায় সেখানে গাড়ি ব্যবহার করছে। কিন্তু তারা কখনও বুঝে না যে, জ্বালানি খরচ কম হওয়ায় কি পরিমাণ গাড়ির ইঞ্জিন, বডি লাইফ ও টায়ারসহ আরও অন্যান্য যন্ত্রপাতি তারা ক্ষয় করছে। তাদের এই অতিরিক্ত গাড়ি ব্যবহারের কারণে দেশের অর্থনীতিতে একটি বিশাল প্রভাব ফেলছে। কারণ গাড়ির সকল যন্ত্রপাতি আমদানিকৃত। এক্ষেত্রে সরকারের করণীয় একান্ত ব্যক্তিগত গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে অকটেন, পেট্রোল ব্যবহারে বাধ্য করা এবং এই সকল জ্বালানিতে ভূর্তকি না দেয়া। পিয়ার মাহমুদ দিদার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন ছাত্র-ছাত্রী আসা-যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করছে কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিজস্ব পরিবহন মানে স্কুল বাসের ব্যবস্থা করে এবং তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে দেয় তা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের যানজট সৃষ্টি হবে না। অথবা প্রতিটা এলাকার বিত্তবান অভিবাভকরা স্ব-স্ব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মান উন্নয়নসহ সকল প্রকার সার্বিক সহযোগিতা করলে এলাকাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নামে গুণে যেমন উন্নত হবে তেমনি এসএসসি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী হেঁটেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে পারবে। সড়ক পারাপারে জনগণকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে সড়কের মধ্যের আইল্যান্ডকে ৪ ফুট উঁচু করতে হবে। এতে অতিরিক্ত ফুটওভার ব্রিজের প্রয়োজন পড়বে। সরকার ইচ্ছা করলে রাষ্ট্রীয় ব্যয় ছাড়া বিভিন্ন বিলবোর্ড, বিজ্ঞাপন দাতাদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে পারে। ফুটওভার ব্রিজগুলো প্রশস্ত করে নির্মাণ করলে ফুটপাথের হকারদের পুনর্বাসন করা যাবে। যা থেকে সরকারের একটি রাজস্ব আয় হবে এবং সড়কের যানজট কমবে। এছাড়া আন্তঃজেলা রোডে চলাচলরত বাস সার্ভিসগুলোকে টার্মিনাল ব্যতীত কোথাও কাউন্টার স্থাপন করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় নিদের্শনা থাকতে হবে আমরা দেখতে পাই ১ কিলোমিটার দূরত্বের মাঝে একই পরিবহনের ১০Ñ১২টি কাউন্টার স্থাপিত। নগর পরিবহনের বাসগুলো স্টপেজ ছাড়া যেন যত্রতত্র থামাতে না পারে সেজন্য চালকদের সচেতনেতা বৃদ্ধিতে কর্মসূচী গ্রহণ করা আবশ্যক এবং বাসগুলো স্টপেজ এলাকায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাাকতে হয় সেজন্য প্রতিটি বাসের দুইটি দরজা বাধ্যতামূলক করা খুব প্রয়োজন। রাস্তায় যাতে সকল যাত্রী একই সময় বের না হয় সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সময় সকাল ৬টা থেকে, অফিস সময় সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা, মার্কেটের সময় ২টা থেকে রাত ১০টা করা যেতে পারে। এতে যানজট সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিদ্যুতেরও সাশ্রয় হবে। প্রস্তাবিত ব্যবস্থা ভিআইপিগণ সচারচর যাতায়াত করতে পারবে। তবে ভিভিআইপিগণের ক্ষেত্রে হেলিকপ্টার ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম এবং সমপোযোগী। এভাবে পরিকল্পনা নিলে রাজধানীতে যানজট দূর করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে ব্যয়ও কম হবে। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, রাজধানীকে যানজটমুক্ত করার জন্য অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে দীর্ঘ সময়ের কাজ। কারণ একটা জায়গায় কোন ব্যবস্থা নিতে হলে সেটা কতটুকু সে জায়গার জন্য কার্যকর সেটা ওইখানে গিয়ে গবেষণা করতে হবে। তারা যে ম্যাপ তৈরি করেছেন তা হলো পয়েন্ট অফ কলোইশন দূর করার জন্য। যেটা হলো চাররাস্তা বন্ধ করে দেয়া বা ইউর্টান বন্ধ করে দেয়া। সেক্ষেত্রে তারা যে অন্য পথ ব্যবহার করছেন সেখানে পয়েন্ট অফ কলোইশন সৃষ্টি হবে কিনা সে বিষয়টি দেখতে হবে। আমি এখনি বলছি না তাদের এই পরিকল্পনা অকার্যকর তবে এটি এখনও গবেষণার বিষয় তাদের এই পরিকল্পনার মাধ্যমে আরও গবেষণা করলে আমার মনে হয় একটি ভাল ফলাফল আসতে পারে। গবেষকরা আরও বলেন, সিগন্যাল বন্ধ করে দেয়া বা চৌরাস্তা বন্ধ করে দিলে সেক্ষেত্রে জায়গা বাড়িয়ে বাঁয়ে মোড় নিতে হবে। কিন্তু যেখানে একটি শহরের জন্য ২৫% রাস্তা দরকার সেখানে রাজধানীতে আছে ৮%। যে কারণে এই পরিকল্পনা করাটা কষ্টকর। অন্যদিকে প্রাইভেটকার কমানোর কথা বলা হয়েছে পরিকল্পনাতে এই বিষয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে। কারণ এক পরিবারে একটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করা অনেকেই মানবে না। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অনেক প্রভাব পড়বে। তবে বাইরের দেশে এ বিষয়ে আইন করা আছে যে একটি পরিবার একটি মাত্র গাড়ি ব্যবহার করতে পারবে। এটা আমাদের দেশে হলেও এর বাস্তবায়ন কতটা ফলপ্রসু হবে তা নিয়ে সন্দিহান।
×