ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উন্মুক্ত সংলাপে নীতি নির্ধারকদের কাছে প্রশ্ন ছোট্ট শিশু মণিদের

মায়ের পেটেই নিরাপদ নয় যে শিশু সে শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠবে কিভাবে

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

মায়ের পেটেই নিরাপদ নয় যে শিশু সে শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠবে কিভাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নেপোলিয়ান বলেছেন- আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেব। কিন্তু যে শিশু মায়ের পেটে নিরাপদ নয় সে কিভাবে শিক্ষিত জাতি হয়ে গড়ে উঠবে? এ প্রশ্নটি ছিল অপরাজেয় বাংলার এক ছোট্ট শিশু মণির। সে বলে- আমাদের দেশের মেয়েরা এভারেস্ট জয় করেছে। যদি কন্যাশিশু সুযোগ পায় তাহলে তারা এভারেস্টের চেয়ে আরও অনেক বেশি কিছু জয় করবে। শুধু মণি নয়, সুবিধাবঞ্চিত এবং রাজধানীর ভাল ভাল স্কুলে পড়াশোনা করছে এ ধরনের সুবিধাপ্রাপ্ত কন্যাশিশুও সুযোগ পায় নীতিনির্ধারকদের সরাসরি প্রশ্ন করার। ছোটদের করা কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেন নীতিনির্ধারকরা। শনিবার নীতিনির্ধারক এবং সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের শিশুদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাল্যবিবাহ ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক একটি উন্মুক্ত সংলাপ। শিশু অধিকার সপ্তাহ ও জাতীয় কন্যাশিশুু দিবস-২০১৫ উপলক্ষে সকালে এফডিসির ৮নং ফ্লোরে এ উন্মুক্ত সংলাপ হয়। উন্মুক্ত সংলাপটি যৌথভাবে আয়োজন করে জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরাম, উন্নয়ন সেবা সংগঠন, ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, ইসলামিক রিলিফ ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সংলাপে দলিত শিশু মুন্নি প্রশ্ন করে- আমাদের সব জায়গায় ঘরভাড়া দেয়া হয় না। আলাদা জায়গায় ঘরভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। আমরা ভাল স্কুলে পড়তে পারি না। সুলতানা আপা, বলতে পারেন- এ থেকে আমরা কিভাবে মুক্তি পাব? এ প্রশ্নের উত্তরে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, আমরা সত্যি খুব লজ্জিত। সংবিধানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কোন ধরনের বৈষম্য করা যাবে না বলে বলা আছে। তবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তোমরা অনেক কষ্ট ও বৈষম্যের মধ্য দিয়ে যাচ্ছ। সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। অচিরেই আমরা এখান থেকে বের হতে পারব। সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, কোন শিশু রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে না এবং না খেয়ে মরবে না- এটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ‘শিশু গড়বে সোনার দেশ, যদি সে পায় পরিবেশ।’ কোন শিশু অধিকারবঞ্চিত হবে না, সে ধরনের একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ শিশুদের সোনার দেশ দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখনও ৩৫ লাখ শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশকে উচ্চ ও মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে এবং এসডিজি’র লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হলে শিশুর প্রতি কোন বৈষম্য করা যাবে না। বিয়ের বয়স আঠারোই থাকছে, এতে কোন পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানান তিনি। সরকার বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে কঠোর আইন করতে যাচ্ছে। দেশে শিশুর সংখ্যা ৪৪ শতাংশের বেশি। শিশুর বিরুদ্ধে কেউ অন্যায় করলে বা অন্যায়ের ব্যাপারে প্রশ্রয় দিলে তাকে একচুলও ছাড় দেয়া হবে না। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শিশুদের মৌলিক অধিকারসমূহ যথা- শিক্ষা, পুষ্টি, খাদ্য ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে, কোনভাবেই তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তিনি শিশুর প্রতি সকল প্রকারের সহিংসতা বন্ধ করার এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সবকিছু মোকাবেলা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গুম, অপহরণ ও শিশু নির্যাতন ইত্যাদি সম্পর্কে গণমাধ্যম সূত্রে জানা মাত্রই আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। কারণ এগুলো রোধ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। তবে শিশুর প্রতি সকল সহিংসতা ও বঞ্চনা রোধ করা শুধু সরকারেরই দায়িত্ব নয়, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সুলতানা কামাল বলেন, আমরা এখনও শিশুর অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নই। অথচ সকল শিশুর নিরাপত্তা প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিশুদের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ন্যায় মৌলিক চাহিদাসমূহ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে এ দায়িত্ব সরকারের। সরকার শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে বাবা-মা তাদের কাজ করতে পাঠাবেন না। তারা আর রাস্তায় থাকবে না। তাই সকলের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সরকারকে যথাযথভাবে এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্মকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় শিশুদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তথাপি শিশু নির্যাতন বিষয়ক মামলাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি এর সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের কোন লোকও জড়িত থাকে তাহলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। অপরাধী যে প্রতিষ্ঠানেরই হোক না কেন, বা জনপ্রতিনিধিই হোক না কেন তার পরিচয় সে অপরাধী। তবে এক্ষেত্রে সমাজের অন্য সংগঠন এবং জনগণ না এগোলে পুলিশের পক্ষে একা কিছু করা সম্ভব নয়। শিশু নির্যাতন রোধে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা জেন্ডার ও শিশু অধিকার বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করছি। আমরা নারী ও শিশুবান্ধব ডেস্ক খুলেছি। সংলাপে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।
×