ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনায় প্রাধান্য পেল পদ্মা সেতু

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

আলোচনায় প্রাধান্য পেল পদ্মা সেতু

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, পদ্মা সেতু এলাকা থেকে ॥ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দোগাছিতে পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া-১ সভা কক্ষে ‘সচিব সভা’ হয়েছে। ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো শনিবার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশারফ হোসেন ভূইঞার সভাপতিত্বে দেশের সকল সচিব অর্থাৎ ৫৮ জন সচিব এতে অংশ নেন। সভায় আলোচনায় অংশ নেন ৪৩ সচিব। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এই সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে পদ্মা সেতু। সভা শেষে মিটিং রুমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশারফ হোসেন ভূইঞা সভার আলোচনা নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, সচিব সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলেও গুরুত্ব পেয়েছে পদ্মা সেতুর নানা বিষয়। এর মধ্যে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন পরবর্তী দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে এখন থেকেই গবেষণা শুরু করতে হবে। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে উন্নয়নের পরিকল্পনা নিতে হবে। বেসরকারী খাতে যে উন্নয়নের কাজ চলছে এগুলো বন্ধ করা যাবে না, তবে একটা সিস্টেমে নিয়ে আসতে হবে। সেতু মন্ত্রণালয় পদ্মা বহুমুখী সেতুটির বাস্তবায়ন করলেও এই প্রকল্প সব মন্ত্রণালয়ের, দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের প্রকল্প এটি। গর্বের প্রকল্প এটি। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সামগ্রিক অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে। সচিব সভায় সব মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকায় বিষয়গুলো কার্যকর হবে। সেতুর সঙ্গে রেলের সংযোগ এখন থেকেই শুরু করতে হবে। সেতু নির্মিত হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে। তাই নদী শাসন অতি গরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে নৌপরিবহন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া এলাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণসহ পরিকল্পিতভাবে এলাকার উন্নয়ন করতে হবে। সভায় আলোচনা হয়েছে- সেতুটির টোল আদায় হবে ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে। তবে যাতে গাড়ি চলন্ত অবস্থায় টোল আদায় হতে পারে সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই সেতুর কারণে পায়রা বন্দর ও মংলা বন্দরের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। তাই এই বন্দর দুটিকে উন্নত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, সব ধরনের নিরাপত্তা বজায় রেখে সেতুটির কাজ হচ্ছে। তাই সভায় আলোচনা হয়-বাংলাদেশে তো নয়ই বিশ্বে এ ধরনের মেগা প্রকল্প কম হয়েছে। তাই এর থেকে শিক্ষা গ্রহণেরও নানা বিষয় রয়েছে। এসব কারণেই এখানে সচিব সভা হয়েছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এই কাজের সঙ্গে যারা সম্পর্কিত আছেন তাদের এখানে এসে অভিজ্ঞতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। এখান থেকে শিক্ষা লাভের একটা সুযোগ তৈরি করা যায়। যেগুলো পরবর্তীতে এ ধরনের বড় প্রকল্পে কাজে লাগবে। সিঙ্গাপুর এবং হংকংয়ের ন্যায় শহর গড়ে তোলা এবং নদী শাসনের বালু সঠিক উপায়ে কাজে লাগানো প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সেতুর আশপাশের উন্নয়নে নান্দনিক পরিকল্পিত রূপ দেয়া হবে। তিনি বলেন, যমুনা সেতু যেমন নির্ধারিত সময়ের আগে সম্পন্ন হয়েছে, তাই পদ্মা সেতুও নির্ধারিত ২০১৮ সালের আগেই সম্পন্ন হতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করবে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেতু সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ডিসেম্বরের শেষের দিকে সেতুটির মূল পাইলের কাজ শুরু হবে। আর সেতুর প্রকল্প ব্যয় ডলার মূল্য এবং মালামালের মূল্যের ওপর নির্ভর করবে। ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পরবর্তীতে সচিব সভা হবে দেশের যে ক’টি মেগা প্রকল্প রয়েছে সেখানে। যাতে প্রকল্প কাজের গতি বৃদ্ধিসহ যথাযথ সমন্বয় সাধন হয়। কারণ সরেজমিন এসে পরিস্থিতি দেখতে পারলে অনেক কিছুই পরিষ্কার বোঝা যায়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ব্রিফিংয়ের শুরুতেই সাংবাদিকদের গঠনমূলক ইতিবাচক সংবাদের প্রশংসা করে বলেন, এতে উৎসাহ বাড়ে। আপনারা অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করলে আমরা যেমন শুধরিয়ে নিতে পারি, আবার পজেটিভ সংবাদ পরিবেশন করলে কাজের গতি বাড়ে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সভায় পদ্মা সেতু ছাড়াও প্রশাসনিকসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। সচিব সভায় নির্ধারিত কোন এজেন্ডা থাকে না। যে কোন বিষয়েই আলোচনা হতে পারে। তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে তা এখনই প্রকাশ করার প্রথা নেই। সচিব সচিব সভায় দেশের সব সচিবই অংশ নিয়েছেন। যেসব মন্ত্রণালয়ের সচিব আসতে পারেননি, তাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। যেমন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কমিটি রয়েছে। তেমনি সচিব কমিটিও রয়েছে। আর স্ব স্ব কমিটির বিভিন্ন বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পাশে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং শিক্ষা সচিব এন আই খান। সকাল পৌনে ১১টায় সচিব সভা শুরুর আগে পদ্মা সেতু নিয়ে একটি সভা হয় সকাল ১০টায়। এতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর খুঁটিনাটি বিষয় এবং কাজের অগ্রগতি নিয়ে সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করেন। আর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’ থেকে বিআরটিসি দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে করে তারা সভাস্থল দোগাছির সার্ভিস এরিয়ায় আসেন। এখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল ও পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকাদার। সভা এবং ব্রিয়িং শেষে সচিবরা আবার সেই বাসে করেই পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা মাওয়া চৌরাস্তা বরাবর পদ্মাপারে গিয়ে সরেজমিন নির্মাণাধীন কাজ পরিদর্শন করেন। সেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির প্রকল্প ব্যবস্থাপক লি জং ইয়াং সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের এবং উপ-পরিচালক (পুনর্বাসন) মোঃ হাসানুল মতিন উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা সেখান থেকে আবার পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাক্টশন ইয়ার্ড পরিদর্শনে যান। কাজের অগ্রগতির খোঁজখবর করে আবার ফিরে আসেন সার্ভিস এরিয়ায়-১। সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে ঢাকায় ফিরে যান। সচিবদের অতি সাধারণ ডাল-ভাত দিয়ে অ্যাপায়ন করা হয়। তবে সঙ্গে ছিল পদ্মার ইলিশ, ভাজি এবং পদ্মার আইর মাছ। বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী রসগোল্লা এবং দইও ছিল আপ্যায়নে। বেলা সাড়ে ৩টায় আবার সভাকক্ষে প্রবেশ করেন সচিবগণ। চা পানের পর বিকেল ৪টায় একই বাসে করে ঢাকায় অতিথি ভবন যমুনায় ফিরে যান।
×