ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টি নিরাপত্তায় বাড়ানো হচ্ছে ডাল ও তেল বীজ উৎপাদন

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

পুষ্টি নিরাপত্তায় বাড়ানো হচ্ছে ডাল ও তেল বীজ উৎপাদন

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন বাড়ানোর কৌশল নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১৬৮ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪৮ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের তহবিল থেকে ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে নতুন কলা-কৌশল গ্রহণ, দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ সুবিধা আধুনিকায়ন হবে। সেই সঙ্গে জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তা সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের সকল জেলার ১৪২টি উপজেলায় ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, রোগ প্রতিরোধ এবং মেধা ও কর্মশক্তির জন্য কেবল দানাদার খাদ্যই যথেষ্ট নয়। এজন্য নানারকম পুষ্টি উপাদান জোগায় এমন খাদ্য সামগ্রী গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেসব খাবার গ্রহণ করা হয় তার মধ্যে ডাল ও তেলবীজ জাতীয় খাবার আমিষ ও চর্বি জাতীয় পুষ্টির যোগান দেয়। নিত্য প্রয়োজনীয় এ খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ডাল ও তেল জাতীয় খাবার আমদানি করতে হয়। তারপরও দেশের জনগণের চাহিদার (দৈনিক প্রতিজন) ৪৫ গ্রামের বিপরীতে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ (১০-১৮ গ্রাম প্রতিজন) ডাল ও তেলবীজ গ্রহণ করছে। ফলে দেশের বিপুলসংখ্যক শিশু, কিশোর ও যুবক অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। তাদের শারীরিক বৃদ্ধি কম হচ্ছে, কর্মস্পৃহা হারিয়ে যাচ্ছে এবং মেধার সঠিক বিকাশ হচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে ভোজ্য তেল আমদানি কমানোর লক্ষ্যে ইতোপূর্বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ডাল ও তেলবীজ (২য় পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পটির আওতায় ১৪ হাজার ১৩৫ মেট্রিক টন বীজ সংগ্রহ, উৎপাদন ও বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা ও দেশে মানসম্পন্ন ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন এবং কৃষকদের কাছে সরবরাহের লক্ষ্যে বর্তমানে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ নামের এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএনএম সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য ডাল ও তেলে চাহিদা পূরণ এবং আমিষের ঘাটতি লাঘবের জন্য ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের ফলন গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রকল্প মেয়াদে ১৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মানসম্পন্ন ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে চাষী পর্যায়ে ব্যবহার করা সম্ভব হলে অতিরিক্ত দে লাখ মেট্রিক টন ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন এসব ফসলের আমদানি নির্ভরতা কমবে অন্যদিকে তেমন বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। সেই সঙ্গে আমিষের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১৪ মে প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ২০৭ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৬৮ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রকল্পটি আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, সাড়ে ১৬ হাজার মেট্রিক টন ডাল তেলবীজ উৎপাদন ও বিতরণের মাধ্যমে চাষী পর্যায়ে মানসম্মত বীজের ব্যবহার নিশ্চিত করা। দুটি ক্লিনার কাম গ্রেডার, একটি অটোমেটিক ওজন যন্ত্র, তিনটি জার্মিনেটর, একটি কালার সার্টার, তিনটি ময়েশ্চার মিটার, তিনটি রোটাভেটর, তিনটি কাল্টিভেটর, তিনটি ডিস্ক হ্যারো, পাঁচটি স্প্রেয়ার, দুটি ফর্ক লিফট, ৪০টি ফিউমিগেশন সিট, ১০০টি ত্রিপল ও এক হাজারটি ডানেজ ক্রয় করা হবে। তিনটি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন নির্মাণ। দুই হাজার ৫০০ জন চুক্তিবদ্ধ কৃষককে এবং ১০০ জন কর্মকর্তাকে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের ওপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। ৭২ হাজার ৭২০ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। চারটি দেড় হাজার বর্গমিটারের বীজ গুদাম ঘর, তিনটি ৩০০ বর্গমিটারের ট্রানজিট গুদামঘর ও ৮০০ বর্গমিটার সার্নিং ফ্লোর নির্মাণ করা হবে। ৫০০ বর্গমিটার গবেষণাগার, প্রশিক্ষণ ও ইন্সপেকশন রুম তৈরি করাসহ রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়াল, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেলের ও আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পন্ন করা হবে। যেসব উপজেলায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে সেগুলো হচ্ছেÑ ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা। ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী, ফরিদপুর সদর, মধুখালী, নগরকান্দা ও সদরপুর উপজেলা। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া ও শ্রীপুর। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদর। জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ, ইসলামপুর, জামালপুর সদর ও সরিষাবাড়ী। কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব ও পাকুন্দিয়া। মাদারীপুর জেলার কালকিনি ও মাদারীপুর সদর। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদর। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা ও ময়মনসিংহ সদর। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার। রাজবাড়ী সদর। শেরপুর জেলার নকলা ও শেরপুর সদর। টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল, দেলদুয়ার, ঘাটাইল, কালিহাতি, মধুপুর, নাগরপুর, সখিপুর ও টাঙ্গাইল সদর। নরসিংদী জেলার বেলাবো, মনোহরদী, রায়পুরা, শিবপুর ও নরসিংদী সদর। শরীয়তপুর জেলার জাজিরা, নারিয়া, ভেদরগঞ্জ, দামুদা, গুজারহাট ও শরীয়তপুর সদর। চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউরা, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নবীনগর, নাসিরনগর, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা। চাঁদপুর জেলার হাইমচর। চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া, মীরসরাই ও আনোয়ারা। কুমিল্লা জেলার চান্দিনা, মুরাদনগর ও দাউদকান্দি। কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও সোনাগাজী। লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর, লক্ষ্মীপুর সদর, রামগঞ্জ ও কমলগঞ্জ। নেয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ ও কবিরহাট উপজেলা। বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার আমতলী ও বামনা উপজেলা। বরিশাল জেলার হিজলা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। ভোলা সদর। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি ও ঝালকাঠি সদর। পটুয়াখালী জেলার দশমিনা ও পটুয়াখালী সদর উপজেলা। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা সদর, দামুরহুদা ও জীবন নগর। ঝিনাইদহ জেলার ঝিনাইদহ সদর, শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর। খুলনা জেলার বটিয়া ঘাটা ও ডুমুরিয়া। কুষ্টিয়া জেলার ভেরামারা। মেহেরপুর জেলার গাংনী, মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর। রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম। নওগাঁর মান্দা। নাটোরের বড়াইগ্রাম, লালপুর ও নাটোর সদর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর, নাচোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর। পাবনা জেলার আতাইকুলা, আটঘরিয়া, বেড়া, ঈশ্বরদী, পাবনা সদর, সাঁথিয়া ও সুজানগর। রাজশাহী জেলার বাঘা, চারঘাট, গোদাগাড়ী, পবা, পুঠিয়া, তানোর ও রাজপাড়া। সিরাজগঞ্জ সদর। রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার ফুলছরি ও সাঘাটা। কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, রৌমারী ও উলিপুর। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী, হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট সদর ও পাটগ্রাম। নীলফামারী সদর। পঞ্চগড় জেলার বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া। রংপুর জেলার বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, রংপুর সিটি কর্পোরেশন, মিঠাপুকুর, পীরগাছা ও পীরগঞ্জ। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ সদর উপজেলা।
×