ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শারদীয় উৎসবে কটিয়াদীতে বাদ্যযন্ত্রের হাট

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

শারদীয় উৎসবে কটিয়াদীতে বাদ্যযন্ত্রের হাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ১৭ অক্টোবর ॥ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে জেলার কটিয়াদী পুরনো বাজারে ৫শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকঢোলের হাট শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও শনিবার শুরু হয়ে আগামী সোমবার ভোরে এ হাট শেষ হবে। আয়োজকরা জানায়, এখানে ছাড়া দেশের কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট বসে না। তবে এ হাটে কোন কেনাবেচা হয় না। পূজাম-পে বাজনা বাজিয়ে আরতী দেয়া, দুর্গা মাকে খুশি করা আর দর্শক-ভক্তদের আকৃষ্ট করতেই যন্ত্রি বা ব্যান্ড পার্টি চুক্তিভিত্তিকভাবে এখান থেকে ভাড়া দেয়া-নেয়া হয়। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক দুর্গাপূজার আয়োজকরা এ হাটে এসে দরকষাকষি শেষে চুক্তিতে বাধ্য-যন্ত্রিদের নিয়ে যায়। পরে দুর্গোৎসবের শেষদিন প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত বাদ্য বাজিয়ে যন্ত্রিদের বিদায় দেয়। মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের ভাটি অঞ্চল, কুমিল্লার হাওড়াঞ্চল থেকে শত শত বাদ্যযন্ত্রি এ হাটে আসে। ঢাকঢোল, সানাই, বিভিন্ন ধরনের বাঁশি, কাঁসি, কত্তালসহ হাজার হাজার বাদ্যযন্ত্রের পসরায় হাট উপচে পড়ে। যন্ত্রিরা দলে দলে দফায় দফায় বাজায় বাদ্যযন্ত্র। বাজনার তালে তালে নাচ আর রংঢংয়ের অঙ্গভঙ্গিতে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকে। একটি ঢাক ১০ হাজার, ঢোল ৭-৮ হাজার, বাঁশি প্রকারভেদ ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার, ‘ব্যান্ড পার্টি’ ছোট ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং বড় ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া হয়। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজাম-পে বাজনা বাজিয়ে দর্শক-ভক্তদের আকৃষ্ট করে থাকেন। দুর্গাপূজা শুরুর দিন থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত টানা ৫ দিন তাদের বাজনা বাজাতে হয়। জনশ্রুতিতে আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায়ই সর্বপ্রথম তার রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ। আজও রাজার আমলে খনন করা কোটামন দীঘিটির মনোরম দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। পুজো উপলক্ষে রাজাপ্রাসাদ থেকে সুদূর বিক্রমপুরের পরগনার বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হয়। ঢাকঢোল বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য সে সময় নৌপথ ব্যবহার করা হতো। বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী-মঠখোলো সড়কের পাশে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পুজোর দুদিন আগে এসে পৌঁছাা। পরবর্তী সময়ে পার্শ্ববর্তী মসুয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা ধুমধামে পুজো শুরু হয়। সেই সঙ্গে চলে বিভিন্ন পুজোর বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। দিন দিন পুজোর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জমিদারদের মধ্যে ঢাকের হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
×