ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রশংসায় বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রশংসায় বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ

বিডিনিউজ ॥ অর্থনীতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্পকে বিস্ময়কর বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। তার বিবেচনায় উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর তালিকায় উপরের সারিতে থাকা বাংলাদেশ নিয়ে এ ধারণা ১০ বছর আগেও করা সম্ভব ছিল না। একজন বাঙালী হিসেবে বাংলাদেশের এ অর্জনে অভিনন্দন জানান তিনি। তবে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোন সুযোগ নেই মন্তব্য করে অর্থনীতির এই প্রথিতযশা অধ্যাপক চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে নীতি-নির্ধারকদের সদা জাগ্রত থাকার পরামর্শও দেন। গত ৭ অক্টোবর লাতিন আমেরিকান দেশ পেরুর রাজধানী লিমায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভা চলাকালে বিশ্বব্যাংক দফতরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও একটি বেসরকারী টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের অধীনে পিএইচডিধারী ডক্টর বসু। কৌশিক বসুর জন্ম ১৯৫২ সালে কলকাতায়। অর্থনীতি পড়েছেন দিল্লীর বিখ্যাত সেইন্ট স্টিফেনস কলেজ ও বিলেতের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে। নোবেল বিজয়ী প্রথম ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ‘সোশ্যাল চয়েস’ নিয়ে তারই অধীনে পিএইচডি করেছেন। জাতিসংঘের অধীন বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অর্থনীতির জন্য সুবিখ্যাত ভারত ও আমেরিকার স্কুলগুলোতে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা রয়েছে কৌশিক বসুর। অর্থনীতি নিয়ে অনেকগুলো গ্রন্থ রয়েছে তার, বিশ্বব্যাংকে যোগ দেয়ার আগে হিন্দুস্তান টাইমস ও বিবিসিতে নিয়মিত কলাম লিখতেন তিনি। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই অধ্যাপক ছুটি নিয়ে যোগ দেন মনমোহন সিংয়ের সরকারে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের পর প্রথম ভারতীয় হিসেবে যোগ দেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে। ডক্টর বসু বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ নিয়ে উচ্চাশার কথা শুনিয়েছেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ। সামষ্টিক অর্থনীতি তো বটেই সামাজিক খাত বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনে খুশি এই বাঙালী এক সময় বাংলাদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসেও কাজ করেছেন। ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন বলেও জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, এই অঞ্চলের অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ে গণবক্তৃতা করবেন তিনি। ১৫ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এই অনুষ্ঠান হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে নিয়ে এখন বেশ প্রশংসা করা হয়। বিশ্বমন্দার মধ্যেও বাংলোদেশে ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আপনার চোখে কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি? কৌশিক বসু ॥ ঠিকই বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির কঠিন অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব ভালভাবেই অগ্রসর হচ্ছে। অনেকেই এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সে আলোচনার বাইরেও আমি বলতে পারি যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অর্থাৎ ইকোনমিক গ্রোথ যে হারে হচ্ছে এখন পৃথিবীতে খুব একটা জায়গায় গ্রোথ সেভাবে হচ্ছে না। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আপনার বিবেচনায় সেটা কি সম্ভব? কৌসিক বসু ॥ দেখেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। গত বছরেও ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এবার ৭ শতাংশ বা তার কাছাকাছি হবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দিয়েছে। আমরাও (বিশ্বব্যাংক) করছি। আর আমি মনে করি, বাংলাদেশে সেটা অসম্ভব নয়। তুমি যদি এখন সারা পৃথিবীর একটা গ্রোথ চার্ট তৈরি কর তাহলে ইট উইল বি এ্যাট দ্য টপ এ্যান্ড। এবং একজন বাঙালী হিসেবে এটা বলতে পারি যে, ১০ বছর আগেও যদি ভাবা হতো যে এ রকম বাংলাদেশ এখানে আসতে পারে কি না মনে হতো যে, খুবই আনলাইকলি যে বাংলাদেশ এখানে এসে পৌঁছাবে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ সামাজিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। সে বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? কৌশিক বসু ॥ হ্যাঁ, এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। সোশ্যাল ইন্ডিকেটরস বলে আমরা যেটাকে বলি, এ্যাট বার্থ মানুষ কতটুকু লাইফ এক্সপেকটেন্সি, ইনফেন্ট মরটালিটি- এসব ইন্ডিকেটরে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। আর এসব ইন্ডিকেটরে উন্নতি হওয়ায় লং রানে ইফেক্টটা ইকোনমিক গ্রোথের ওপর পড়বে।
×