ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনইসিতে উঠছে সপ্তম পাঁচ পরিকল্পনা;###;সোয়া কোটি লোকের নতুন কর্মসংস্থান ;###;বাস্তবায়ন ব্যয় ৩২ লাখ কোটি টাকা

মধ্য আয়ের সিঁড়ি ॥ কাল চূড়ান্ত অনুমোদন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

মধ্য আয়ের সিঁড়ি ॥ কাল চূড়ান্ত অনুমোদন হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ মধ্য আয়ে উত্তরণের সিঁড়ি হিসেবে খ্যাত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন পাচ্ছে মঙ্গলবার। এর মধ্য দিয়ে আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত) আর্থিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে সরকার। তাছাড়া পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে এটি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৯ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান তৈরি এবং আয় বৈষম্য কমিয়ে আনা। এবারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গড়ে ৭.২ ভাগ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৬.২ ভাগ কমিয়ে বর্তমানের ২৪.৮ থেকে ১৮.৬ ভাগে নিয়ে আসা হবে। শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ৯.৬ ভাগ থেকে ১১.৯ ভাগে উন্নীত করা হবে। তিনি আরও বলেন, এবারের পরিকল্পনায় বাজেটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিকল্পনা দলিলকে তেরোটি খাতের আওতায় প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাজেট বরাদ্দের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হবে। একই সঙ্গে বাস্তবায়ন কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করাও সম্ভব হবে। সূত্র জানায়, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে জন্য ব্যয়ের লক্ষ্য চূড়ান্ত করা হয়েছে ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যা এযাবতকালের সর্বোচ্চ ব্যয়ের লক্ষ্য। মোট ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৩ লাখ ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আগামী ৫ বছরে মোট যে ব্যয়ের (বিনিয়োগ) লক্ষ্য ধরা হয়েছে তার মধ্যে সরকারী ব্যয় ৭ লাখ ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং বেসরকারী খাত (বৈদেশিকসহ) থেকে ২৪ লাখ ৬৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে শেষ হতে যাওয়া ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গত পাঁচ বছরে ব্যয়ের যা লক্ষ্য ছিল তার চেয়ে আগামী পাঁচ বছরে ব্যয় হবে দিগুণেরও বেশি। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া বিষয় বা দিক হলো ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং জনগণের আয়-বণ্টন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য হারে উন্নীত করা। এ পরিকল্পনায় অর্জিত প্রবৃদ্ধিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কৌশল এবং কর্মপন্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুশাসন নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমেই দেশকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ে এবং পরবর্তীতে উন্নত দেশে পরিণত করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিকল্পনাটির খসড়া তৈরি করেছি। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির সামনে এটি উপস্থাপন করা হয়। তারও আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তার সম্মতিতে এখন এনইসিতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মধ্য আয়ে উত্তরণের সিঁড়ি ॥ আগামী পাঁচ বছরে মধ্য আয়ের দেশে যেতে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হলো, বিনিয়োগকারীদের দ্বারা চিহ্নিত সীমাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, পাবলিক বিনিয়োগ ঘাটতি দূর করতে আধুনিকায়ন পরিকল্পনা তৈরি, বিদ্যুত ও জ্বালানির সঠিক মূল্য নির্ধারণ এবং ভর্তুকির পরিমাণ যুক্তিযুক্তকরণ, সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব পুনর্গঠন এবং গতিশীলতা আনয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ, পোশাক খাত থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অপোশাক রফতানি খাতের জন্য উদ্দীপক কাঠামোর উন্নতিকরণ, রফতানি সম্ভাবনাসহ কৃষি কৌশল পুনর্বিবেচনা করা, কৃষকদের ভাল প্রণোদনা প্রদানে মূল্য নীতি প্রণয়ন ও গ্রামীণ অবকাঠামোর ওপর বেশি জোর প্রদান করা, পশু ও মৎস্য ক্ষেত্রে মনোযোগ সৃষ্টি, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প খাতে প্রমাণভিত্তিক নিরূপণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের সাহায্যে সঠিক কৌশল নির্ধারণ করা এবং আইসিটি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট বিধিগত এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা ও এর সুনির্দিষ্ট সমাধানের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা। প্রধান লক্ষ্যসমূহ ॥ পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন শুরুর অর্থবছর ২০১৬তে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে ৭ শতাংশ, ২০১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৯ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরিকল্পনা শেষ ২০২০ অর্থবছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের টার্গেট রয়েছে। প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্য পূরণে শিল্প খাতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশল নেয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিল্প (মেনুফ্যাকচারিং) খাতে গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। সেবা খাতে গড় প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পাঁচ বছরে কৃষি খাতে গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে শিল্প, সেবা ও কৃষিÑ এই তিন খাত মিলে আগামী পাঁচ বছরে গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব ॥ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া বিষয়গুলো হচ্ছে কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠন, বিদ্যুত উন্নয়ন, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ, কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ, আইসিটি-স্বাস্থ্য-শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা রফতানিতে সুনির্দিষ্ট নীতিকৌশল প্রণয়ন, সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়ন এবং রফতানির গতিশীলতা আনতে পণ্যের বৈচিত্র্যায়ন। খাদ্য নিরাপত্তার কৌশল ॥ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী ৫ বছরে কৃষি উন্নয়নে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে খাদ্য শস্য, প্রাণি সম্পদ এবং মৎস্য খাত সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, লক্ষ্য বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের বিষয়টিও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, পরিকল্পনায় গবেষণা কাজে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবসম্মত। এর আগে মন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির এক-তৃতীয়াংশ আসে কৃষি খাত হতে। কৃষি সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। খাদ্যের কোন বিকল্প নেই।
×