ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছে বিএনপি ও তার ২০ দলীয় জোটের শরিক;###;শিবিরের ফেসবুকে নানা গালমন্দ

জামায়াতের কোপানলে বিএনপি নেতা লে. জে. মাহবুব

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

জামায়াতের কোপানলে বিএনপি নেতা লে. জে. মাহবুব

বিভাষ বাড়ৈ ॥ জামায়াতকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিএনপি নেতা লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমানের দেয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মতরিরোধে জড়িয়ে পড়েছে বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত। গণমাধ্যমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক এ সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন জামায়াত-শিবিরের নেতারা। লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমানকে সরকারের ‘এজেন্ট’ অভিহিত করে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে এর প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। এদিকে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলা হয়েছে শিবিরের ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লায়। যেখানে বিএনপি নেতাকে ধরে ‘রিমান্ডে’ নেয়ারও দাবি তোলা হয়েছে। জানা গেছে, শনিবার একটি জাতীয় পত্রিকায় দেশে জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা ও সরকারের নেয়া পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন সময়ে সত্য কথা বলে দলের ভেতরে তোপের মুখে পড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। সাক্ষতকারে বিএনপি নেতার কাছে প্রশ্ন ছিল, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে আপনি জাতীয় মতৈক্যের কথা বলেছেন। সেটি কি জামায়াতে ইসলামীর মতো দলকে জোটে রেখে সম্ভব? প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুর রহমান বলেছিলেন, জামায়াত নিয়ে তো একটি নেতিবাচক ধারণা আছে, নানা প্রশ্ন আছে। বিএনপি বলেছে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক আত্মিক নয়, কৌশলগত। বিএনপি গণতন্ত্র উদ্ধারে যে ২০ দলীয় জোট করেছে, জামায়াত তার একটি শরিক মাত্র। দুটি দলের রাজনৈতিক নীতি ও আদর্শ সম্পূর্ণ আলাদা। আরেকটি প্রশ্ন ছিল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে ব্রাকেটবন্দী না করার কথা বলেছেন। তাহলে আপনারা সেই ব্রাকেট থেকে বেরিয়ে আসছেন না কেন? এ প্রশ্নে মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা বেরিয়ে আসব; এটি সময়ের ব্যাপার। তবে আমাদের পাল্টা প্রশ্ন, সরকার যদি মনে করে জামায়াত জঙ্গী সংগঠন, তাহলে তাকে বেআইনী ঘোষণা করছে না কেন? সরকার সে রকম কিছু করলে আমরা এ ব্যাপারে সমর্থন করতেও পারি। জামায়াত নিয়ে বিএনপি নেতার এমন বক্তব্যের পরই ক্ষেপেছেন জামায়াত নেতারা। দলটির পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে লিখিত প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ক্ষোভের বিষয়টি জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে লন্ডনে থাকা দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের কাছেও। জামায়াত গণমাধ্যমেও বিএনপি নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে কঠোর ভাষায়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি জনাব হামিদুর রহমান আযাদ দলটির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান পত্রিকায় প্রদত্ত এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে আপত্তিকর বিরূপ মন্তব্য করেছেন। জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে যে ধরনের বিরূপ মন্তব্য করেছেন তা অন্যায়, অযৌক্তিক ও অপ্রত্যাশিত। জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে যে ভিত্তিহীন মিথ্যা মন্তব্য করেছেন তা ২০ দলীয় জোটের ঐক্যের পরিপন্থী এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী। জামায়াত নেতা বলেন, তার বক্তব্যের বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে জনগণের মধ্যে কোন নেতিবাচক ধারণা নেই। জনাব মাহবুবুর রহমানের মনে নানা প্রশ্ন থাকলেও জনগণের মনে কোন বিরূপ প্রশ্ন নেই। জামায়াত নেতা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে বলেছেন, জনাব মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য উস্কানিমূলক এবং ২০ দলীয় জোটের ঐক্যবিরোধী। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের এক নেতা হয়ে তিনি এ ধরনের স্ববিরোধী মন্তব্য করতে পারেন না। সরকারের এজেন্ট হিসেবে যারা ২০ দলীয় জোট ভাঙতে চায় তারাই এ ধরনের আত্মঘাতী বিরূপ মন্তব্য ছুড়ে দিতে পারেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে ২০ দলীয় জোটের ভেতরের থাকা সরকারের এজেন্টদের চিহ্নিত করারও দাবি জানানো হয়েছে বিএনপির কাছে।
×