ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

শারদীয় উৎসব হোক মঙ্গলের হোক শক্তির

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

শারদীয় উৎসব হোক মঙ্গলের হোক শক্তির

শারদ উৎসবে বাংলাদেশে আজকাল মূর্তি ভাঙ্গার খবর প্রায়ই চোখে পড়ে। প্রায়ই আমরা তার নমুনা দেখি। এ যেন গা সওয়া ব্যাপার। এটা বন্ধ হবে কিনা কেউ জানে না। ভাঙ্গে যারা তারাও আমাদের দেশের মানুষ। যদিও এরাই আমাদের সমাজের পরিচয় বা আইডেন্টিটি কিছু নয়। এরা উটকো। তবে এদের এই প্রবণতা বা অপকর্মের সঙ্গে অনেক নীরব মানুষের ইন্ধন আছে। সেটাই ভয়ের। আমার অনেক সুহৃদ আমাকে প্রায় উপদেশ দেন এগুলো নিয়ে যেন কথা না বলি। এতে নাকি সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়। কী অদ্ভুত যুক্তি! ভাঙ্গা দেবদেবী মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে থাকলে ভারসাম্য ঠিক থাকে আর তা নিয়ে কথা বললে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। আসলে ধর্মের নামে উন্মাদনা আর জঙ্গিত্বই যেন কিছু লোকের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রকৃতির সঙ্গে তা যায় না। তাই এরা চেষ্টা করলেও কামিয়াব হতে পারে না। কামিয়াব হওয়ার আগেই মানুষ আনন্দে উৎসবে একাকার হয়ে জানিয়ে দেয় তারা এগুলোর তোয়াক্কা করে না। এবারও তাই হবে। আনন্দময় শারদ উৎসবে আমরা সেদিকে না তাকিয়ে বরং ভাবব একদিন হয়ত এর প্রতিকার হবে। অনেকেই মনে করেন শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সংখ্যালঘু নামে পরিচিতজনেরা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকেন। তাদের ভয়ের পরিমাণ থাকে কম। প্রমোশন পোস্টিং এমনকি অস্তিত্বের প্রশ্নেও তারা স্বস্তি পায় না কিন্তু বরাবরের মতো এবারও আওয়ামী লীগের ভেতরে ঘাপটি মারা ষড়যন্ত্র আর সাম্প্রদায়িক শক্তি ছাড় দেয়নি। তাদের সঙ্গে যোগসূত্রে বাধা বিএনপি জামায়াতের আস্ফালনে এখনও অপকর্মের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। আর সরকারের বড় কর্তারা কাজের বদল কথা আর অদৃশ্য শক্তির দোহাই দিয়ে পার পেতে সচেষ্ট। অদৃশ্যে বিশ্বাসী জাতির মতো রাজনীতিও দেখি অদৃশ্যেই বেশি আস্থাশীল। খালেদা জিয়া এখন দেশে নেই। বিএনপি অর্ধমৃত। তাদের দু’চারজন সেকেন্ড ক্লাস নেতা ছাড়া বাকিরা ‘আউট অব সিন’। মামলা-হামলা-স্বার্থের ভয়ে সামনে আসেন না; মুখও খোলেন না। যে দু-চারজন নড়াচড়া করেন তারাও রুটিনমাফিক একগাদা তারযন্ত্র আর সাংবাদিকের সামনে তোতার মতো বুলি আউড়ে যান। কেউ কেউ কাগজ দেখে পাঠ করেন। মাঠে-ঘাটে-রাস্তায় বিএনপির অস্তিত্ব নেই। আন্দোলনের নামে মারামারি, হানাহানি আর সন্ত্রাসের পর তারা বুঝে নিয়েছে, সে পথে কাজ হবে না। অন্যদিকে, জামায়াতের ছায়াসঙ্গী হওয়ার মাসুলও চুকাতে হচ্ছে তাদের। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি বিএনপির জন্য নতুন। অনেক নাটকের পর খালেদা জিয়া এখন বড় পুত্র তারেকের কাছে লন্ডনে। সেখানে তিনি কী করছেন, আদৌ কোন ছক কাটছেন কিনা সব কিছু অস্পষ্ট আর ধোঁয়াশা। কিন্তু এর মধ্যেই দেশে খুন-খারাবির ঘটনা বেড়ে গেছে। এবারের টার্গেট বিদেশীরা। এটা বুঝতে খুব বেশি মেধার দরকার পড়ে না যে, কেন তারা টার্গেট পাল্টেছে। দেশে যখন ভিত্তি নড়বড়ে আর জনগণকে সঙ্গে নেয়া যাচ্ছে না তখন তো মুরব্বিই ভরসা। এই টার্গেটের শিকার ব্লগাররা, শিকার পীরবাদীরা শিকার সংখ্যালঘুরা। সরকারের কাজ কি তবে? সব বিষয়ে আমরা কেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইব? এই যে পুজোর ছুটি সেটাও তাঁর কাছে গিয়ে তবে ঠিক হলো। কারা এসব গ-গোল বাধায়? কারা নড়বড়ে করে তোলে আস্থা আর বিশ্বাসের জায়গা? আমরা বঙ্গবন্ধুর আমলেও এমনসব কা- দেখেছিলাম। তখন নবীন রাষ্ট্র নবীন সরকার বলে হয়ত সামাল দেয়া যায়নি। কিন্তু এখন? এখন কেন শুদ্ধি অভিযান চলবে না? কেন দলে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদ আর দালালদের চিহ্নিত করা যাবে না? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যদি সত্যি সাম্প্রদায়িক হতো তবে পাকিস্তানের হিন্দুদের মতো আমাদের অবস্থা হতো ভয়াবহ সেটা তো নয়। মহাআনন্দে মহাউৎসবে পুজোর ধুমধামকে কেবল ষড়যন্ত্রের কারণে বিতর্কের শিকার হতে দেয়া কি কাজের কাজ? যদি ধরে নেই বিএনপি-জামায়াতই করছে তবে তার বিচার আর শাস্তির ব্যবস্থা হোক। জনগণ দেখুক কিভাবে তা হচ্ছে। যদি নিজেদের ভেতরে থাকে বীজ তবে তাকে নির্মূল করার ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। শারদ উৎসবের মূলমন্ত্র হচ্ছে ভালবাসা। দেবীর আরাধনা মানেই শক্তির উদ্বোধন। প্রবাসে বাংলাদেশীরা যদি কেবল ধর্মীয় পরিচয়ে পুজোর আয়োজন করত তবে ভিন্ন ভিন্ন পুজো আয়োজনের প্রয়োজন পড়ত না। সব নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের পরিচয়। কোন না কোনভাবে বলা আছে এটি বাংলাদেশী পুজো। যার মানে দেশ সমাজ আর পরিচয় ধর্মকে আলাদা কিছু করে তোলেনি। যে কারণে ভারতীয় বাঙালীর পুজো আর আমাদের পুজোর আয়োজন পৃথক। এ সব মিলিয়েই আমরা। আমাদের এই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অস্তিত্ব মুছে বিএনপি-জামায়াত বা আওয়ামী লীগ কারও সাধ্য নেই। আমাদের ঐক্যের বড় জায়গাটা সংস্কৃতি ভালবাসার আপ্যায়ন আর আচরণগত। ফলে শেষ অবধি শত্রুরা দেবীর হাতে অসুর নিধনের মতো বধ হবেই। যা কিছু ঝামেলা তার পেছনে আছে রাজনীতি। রাজনীতির এই লীলা বন্ধ করতে হলে বিচার আর শাস্তির ন্যায্যতা ও প্রয়োগ দেখাতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি অনেক কিছু পারেন এটাও পারবেন। এতেই শারদ উৎসব হবে আনন্দময় ও প্রাণবন্ত। হবে নির্বিঘœ আর কল্যাণময়।
×