ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণশুনানীতে শত শত যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

গণশুনানীতে শত শত যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন রাজধানীর শত-শত যাত্রী। তারা বেশিরভাগ বাসে সরকার নির্ধারীত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ্যে সরকারের কাছে জোড় দাবি জানিয়েছেন। রাজধানীর গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত গণশুনানিতে নগরবাসী বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ, পরামর্শ সহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। তারা বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় প্রত্যেক যাত্রীর এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত মাসে ভাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। শুনানিতে অংশ নিয়ে বিশিষ্ট লেখক ও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ আবুল মাকসুদ বলেন, যে সরকারের ভাড়া বাড়ানোর এখতিয়ার আছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে সে সরকারকেই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায় স্বীকার করে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এতে অনিয়ম জেকে বসে নৈরাজ্য বেড়ে যাবে। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সকল মহলের মতামত উপেক্ষা করে সরকার কোন প্রকার গণশুনানী না করে একতরফাভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে দাবি করে তিনি আরো বলেন সরকার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির অবৈধ আবদার রক্ষায় বিআরটিএ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ আশপাশের জেলায় চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের ভাড়া যাত্রী প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু মালিকরা চিরাচরিত কায়দায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নির্ধারণ করে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, যাত্রীদের জিম্মি করে অধিকার আদায়ের অপকৌশল বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। গণপরিবহনের সংকট নিরসনের পাশাপাশি যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রতিদিনই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কেন্দ্রিক যানবাহনগুলোতে পরিবহণ শ্রমিকদের সাথে যাত্রীর তর্ক বিতর্ক এমনকি হাতা-হাতি, মারামারির ঘটনাও ঘটছে। গণশুনানীতে অংশগ্রহণকারী যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, এসব যানবাহনে যাত্রী সেবার লেশ মাত্র নেই। নৈরাজ্যকর ভাড়া পরিস্থিতিতে সাধারণের মতামত গ্রহণের জন্য রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির” উদ্যোগে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানী অনুষ্ঠানে শুনানী গ্রহণ করেন, কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি ড. গোলাম রহমান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ। ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকার ঢাকা-চট্টগ্রামের সাড়ে পাঁচ হাজার বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধি করলেও বাস্তবতায় সারাদেশে প্রায় ৬০ হাজার বাস-মিনিবাসে ১ লক্ষ ২০ হাজার হিউম্যান হলারে, সাড়ে ৪ লক্ষ সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় ১০ লক্ষ নসিমন-করিমন, ১৬ লক্ষ প্যাডেলচালিত রিক্সায় এ ভাড়া বেড়ে গেছে। অনতিবিলম্বে এটি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিলে দেশের নিম্ন আয়ের যাত্রী সাধারণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। শুনানীকালে যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ঢাকা শহরে ৪০ ভাগ যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে মর্মে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এছাড়াও দূরপাপ্লার বিআরটিসি বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে বিআরটিসির চেয়ারম্যানকে শোকচ করেছে। এতে প্রমাণ হয়েছে যানবাহনে কিভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে। সরকার যেহেতু দায় স্বীকার করেছে সেহেতু সরকারকেই এই নৈরাজ্য অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
×