ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদপুরের প্রাচীন দুর্গোৎসব

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২০ অক্টোবর ২০১৫

ফরিদপুরের প্রাচীন দুর্গোৎসব

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ ছায়াঘেরা একটি গ্রাম গোহাইলবাড়ী। এই গ্রামের করবাড়ি দুর্গাপূজা এ অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো হিসেবে পরিচিত। গোহাইলবাড়ী গ্রামটির অতীত বেশ সমৃদ্ধ তিনটি বনেদী পরিবারের বসবাসের কারণে। তবে ১৯৪৭-এর দেশ ভাগ ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর দুটি বনেদী পরিবার দেশান্তরিত হলে অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসে গ্রামটি। অনেক কিছুই হারিয়ে যায়, তবে টিকে থাকে করবাড়ি পারিবারিক দুর্গাপূজা। জানা যায়, পার্বতীচরণ কুন্ডু, রঘুনাথ কর ও হীরালাল কর্মকার এই তিনটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের উত্তরসূরিরা পাল্লা দিয়ে শুরু করে দুর্গোৎসব। তবে প্রথমে এ অঞ্চলে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন কুন্ডু পরিবার। এরপর এ প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় কর ও কর্মকার পরিবার। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগের পর কুন্ডু পরিবারের সদস্যরা ভারতে চলে গেলে তাদের পারিবারিক পূজা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কর্মকারদের পূজাও বন্ধ হয়ে যায়। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে আজও অব্যাহত রয়েছে কর পরিবারের পারিবারিক পূজা। কত পুরনো করবাড়ির এ দুর্গাপূজা এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারেন না। সবাই একবাক্যে বলেন, ‘বহু পুরনো’। কেউ বলেন শের শাহের সময়কাল থেকে শুরু হয়েছে এ পূজা। আবার কারও অভিমত অধুনা মাগুরার মোহাম্মদপুর এলাকার রাজা সীতারাম রায়ের রাজত্বের সময় থেকে শুরু হয় এ পূজা। তবে নিছক জনশ্রুতি ছাড়া এ সব বক্তব্যের সমর্থনে কোন দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাড়ে চার একর জমির ওপর করবাড়ি স্থাপিত। এই বাড়িতে বর্তমানে পূজা হয় একটি দোচালা টিনের ঘর বিশিষ্ট পারিবারিক ম-পে। তাদের বসবাসের জন্য রয়েছে আরও কয়েকটি টিনের ঘর। বর্তমানে এ পূজার আয়োজন করেন পবিত্র কর, প্রদীপ করসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। প্রদীপ কর জানান, আমরা সাত প্রজন্ম ধরে পারিবারিক উদ্যোগে এ পূজা করছি। দুর্গাপূজার পাশাপাশি শ্যামা, মনসা ও সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতার আগে মন্দির, নাটমন্দিরসহ বড় বড় ঘর ছিল। সে ঘরগুলোর দেয়াল ছিল মাটির এবং উপরে টিনের ছাউনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়াসহ যাবতীয় সম্পত্তি লুট হয়ে যায়। এজন্য বর্তমান মন্দিরের দিকে তাকালে প্রাচীন বা বনেদী কোন ছাপ দেখা যায় না। তবে বংশের ঐতিহ্য অনুযায়ী পূজার আগে সোনার মোহর দিয়ে দুর্গা মায়ের সিঁথিতে সিঁদুর পরানো হয়। এ ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। পূজা উপলক্ষে প্রতিমা নির্মাণ করছেন পাশের লঙ্কারচর প্রামের প্রভঞ্জন কুমার সরকার। এ পূজার আয়োজনের সূচনালগ্ন হতে তারা বংশানুক্রমে পূজার জন্য প্রতিমা নির্মাণ করে আসছে। গোহাইলবাড়ী কর পরিবারের পারিবারিক পূজা এ এলাকার সবচেয়ে প্রচীন। প্রতিবছরই পূজার দিনগুলোতে এই ম-পকে কেন্দ্র করেই উৎসবে উদ্বেল হয়ে ওঠে এলাকাবাসী।
×