ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের হাতে আইন

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ অক্টোবর ২০১৫

নিজের হাতে আইন

বাংলাদেশে ধর্ম যার যার এবং রাষ্ট্র সকলের এ বিশ্বাসকে ধারণ করে সবাই সমান অধিকার ভোগ করে আসছে। সংবিধানে সকল ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের জন্য সমান অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। তেমনি সকল মত ও মুক্তচিন্তার মানুষের সহাবস্থানেরও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একশ্রেণীর লোক দেশের ঐতিহ্য, সম্প্রীতির ইতিহাস আর ধর্মনিরপেক্ষতার কাঠামোকে নষ্ট করতে চায়। শুধু তাই নয়, মুক্তমনা মানুষদের হত্যা করতেও কেউ কেউ দ্বিধা করছে না। ক্রমেই যেন একটা অসহিষ্ণু সমাজ হয়ে যাচ্ছে, যেখানে অন্যের মত সহ্য করা হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রে। মুক্তচিন্তা বা ভিন্নমতকে প্রকাশ্যে বাধা দেয়া হচ্ছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ছিল মুক্তচিন্তা। মুক্তচিন্তার মানুষের পক্ষে সব সময় কথা বলে আসছেন দেশের সুধীজন। সম্প্রতি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, ‘আমাদের ধর্মান্ধতায় থাকলে হবে না, এই দেশ সকলের জন্য। সকলের কথা শুনতে হবে। এখানে সকলেই যার যার ধর্ম পালন করতে পারবে। এমনকি যিনি ধর্ম মানেন না, দেশটি তারও। সৃষ্টিকর্তা তাকেও খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন- সে কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।’ তার এই বক্তব্য সময়োপযোগী এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন তাদের অধিকারের বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। ধর্মকে বিকৃত করে মুক্তবুদ্ধির মানুষকে নির্যাতন এবং হত্যার যে প্রবণতা সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটি সচেতন নাগরিকরা কখনও সমর্থন করে না। আসলে বাংলাদেশে ভিন্নমত প্রকাশের ও মুক্তচিন্তার জায়গা ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে যেন। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে যারাই ভিন্নমত প্রকাশ করছেন, তাদেরই কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তাদের কেবল হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে না, হত্যাও করা হচ্ছে। একের পর এক নৃশংস হত্যাকা- ঘটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে ঘাতক চক্র। কখনও ঘরের ভেতর ঢুকে গলা কেটে হত্যা করছে, কখনও বা প্রকাশ্যে জনসম্মুখে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যার দায়ও স্বীকার করছে। তার পরেও ধরা পড়ছে না ঘাতক চক্র। বিভিন্ন সময় হত্যার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ইউনুস, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, মওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী এবং মুক্তচিন্তার লেখক অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ, নিলয় চট্টোপাধ্যায়। এই বিপজ্জনক প্রবণতা কোন স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের জন্য কাম্য নয়। মত থাকলে ভিন্নমত থাকবেই। ওই মতকে গ্রহণ কিংবা বর্জন করা ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব ব্যাপার। দেখতে হবে ভিন্নমত দেশ ও জনগণের জন্য হুমকি কিনা। অহেতুক কোন মতকে দমন করা সমীচীন হতে পারে না। সমাজে সব মতের মানুষেরই বাস করার অধিকার আছে- এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আইনের প্রতি সকলকেই শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আইন যেন কেউ অন্যায়ভাবে নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, সাধারণ মানুষেরও প্রত্যাশা এটাই।
×