ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গুলশান-বারিধারা লেক

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ অক্টোবর ২০১৫

গুলশান-বারিধারা লেক

রাজধানী ঢাকা যে ক্রমেই মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে, এ বিষয়ে বোধ করি দ্বিমতের অবকাশ নেই। জনসংখ্যাধিক্য এর একটি অন্যতম কারণ হলেও স্থানীয় সরকার তথা নগরপিতাদের ঔদাসীন্য এবং দায়িত্ব পালনে অবহেলাও অবশ্য এর জন্য দায়ী বহুলাংশে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ঢাকার একটি আদি সমস্যা। রাজধানী হিসেবে ঢাকার ইতিহাস কম-বেশি চার শ’ বছরের পুরনো হলেও সত্যি বলতে কি এটি কখনই একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। ক্ষমতার রদবদল এবং পালাবদলে বিভিন্ন সরকারের আমলে নিত্য-নতুন পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বটে। তবে এসবের অধিকাংশই যে অসফল এবং শেষ পর্যন্ত জনস্বার্থ ও নগর উন্নয়নে তেমন সুফল বয়ে আনেনি তা প্রমাণিত হয়েছে বার বার। উদাহরণত, গুলশান-বারিধারা লেকের কথা বলা যায়। অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত কূটনীতিকপাড়া হিসেবে গড়ে তোলা হয় গুলশানকে। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, গুলশানের সেই আভিজাত্য ও কৌলীন্য শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যায়নি। নিরিবিলি ও আবাসিক অঞ্চল হিসেবে এলাকাটি তার সুনাম হারিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে গুলশান একটি বহুতলবিশিষ্ট সুপারমল, সুপারমার্কেট ও ফ্ল্যাটবাড়িবিশিষ্ট ঘিঞ্জি এলাকা। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতো অসহনীয় যানজট, জলজট ও জনজটে প্রায় নিত্য পীড়িত গুলশানবাসীও। সেক্ষেত্রে গুলশান-বারিধারা লেকের দুরবস্থা সহজেই অনুমেয়। ভূমিদস্যু ও আগ্রাসীদের অপতৎপরতায় এক সময়ের সুশোভিত লেকের অনেকাংশ জবরদখল হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। জলাশয় বলতে বাদবাকি যেটুকু আছে সেটুকু প্রতিনিয়ত দূষণে জর্জরিত, মুমূর্ষু, পুঁতিগন্ধময়। মৎস্যকুলেরও বেঁচে থাকা দায়। বিভিন্ন প্রজাতির মশককুলের প্রায় অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। গুলশানের অধিকাংশ পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশিত হয়ে থাকে এই লেকে। ফলে দূষণ ও দুর্গন্ধে গুলশানবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। লেকের পানির ভয়াবহ দূষণে প্রায়ই মাছ মরে ভেসে ওঠার খবরটিও পুরনো। এ অবস্থায় লেকের দূষণ ও দুর্গন্ধ রোধে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে ঢাকা ওয়াসা। গত বছরের মাঝামাঝি প্রকল্পটি শেষ হলেও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। গুলশান-বারিধারা লেকে দূষণ ও দুর্গন্ধের মাত্রা কমেনি, বরং বেড়েছে। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়াসার পক্ষ থেকে অবশ্য সাফাই হিসেবে বলা হয়েছে, তারা কিছু পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশনের নালা বন্ধ করলেও ইতোমধ্যে নতুন কিছু নালা খোলা হয়েছে। ফলে এই অবস্থা। তবে এই চাপানউতোর কথা চালাচালির মধ্যেও যে দুর্নীতি ও অনিয়মের গন্ধ লুকায়িত এমন কথা অস্বীকার করা যাবে কি। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের নবনির্বাচিত মেয়রদ্বয়ের দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় ছ’মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। নির্বাচনের আগে তারা ঢাকাবাসীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নানা ভাল কথা বলেছেন। পরিবেশ ও জলাশয় সুরক্ষাসহ গ্রীন ঢাকার কথাও শোনা গেছে। এখন নগরবাসী সেসব বহুশ্রুত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চায়। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী গুলশান-বারিধারা লেক অবৈধ দখলমুক্ত ও নাব্য রাখার কথা বলেছেন যে কোন মূল্যে। মহানগরীর সুপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষা সর্বোপরি জলাশয়, লেক ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতা নিয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। মেয়রদ্বয় সেক্ষেত্রে নগরবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা ও চেতনা উপলব্ধি করে অধিকতর সক্রিয় হবেন বলে প্রত্যাশা।
×