ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাউশির সামনে ১ নবেম্বর অবস্থান কর্মসূচীর ঘোষণা শিক্ষকদের

কর্মবিরতিতে ফের অচল সরকারী কলেজসহ সংশ্লিষ্ট দফতর

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২০ অক্টোবর ২০১৫

কর্মবিরতিতে ফের অচল সরকারী কলেজসহ সংশ্লিষ্ট দফতর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেতন স্কেলে বৈষম্য সৃষ্টি এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে আবার অচল হলো সারাদেশের সরকারী কলেজসহ সংশ্লিষ্ট দফতর। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে টানা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সোমবার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারী কলেজ, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা। পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি ৩০৫ সরকারী কলেজের অধিকাংশতেই। দাবি আদায়ে শিক্ষকরা আগামী ১ নবেম্বর রাজধানীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এর আগে একই দাবিতে গত এক মাসে কয়েক দফা কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। এরপর গত ৭ অক্টোবর শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সাক্ষাত করে বেতন স্কেলে বৈষম্যের অভিযোগ এনে সংকট নিরসনের দাবি জানান। সোমবারের কর্মসূচি থেকেও শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আলাদা বেতন স্কেল নয়, বর্তমান বেতন কাঠামোতেই সকল স্তরে বেতন বৈষম্য নিরসন করতে হবে। এটা শিক্ষকদের মর্যাদার প্রশ্ন। বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ ছাড়া আন্দোলন থেকে সরে আসার কোন পথ নেই। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সমস্যা তুলে ধরে শিক্ষকরা বলেন, আলাদা বেতন স্কেল নয়, বর্তমান বেতন কাঠামোতেই সকল স্তরে বেতন বৈষ্যম্য নিরসন চান দেশের সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। অবিলম্বে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল পুনর্বহাল করে বৈষম্য নিরসন ছাড়া শিক্ষকদের অসন্তোষ কমবে না। শিক্ষক নেতারা দাবি পূরণে শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, বর্তমান সরকার সম্প্রতি ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করেছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। পে-স্কেলের অনেক ইতিবাচক দিক আছে। কিন্তু র্শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিকে বিবেচনায় না এনে অধ্যাপক পদের বেতন স্কেল ও গ্রেড অবনমন করা হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকসহ র্শিক্ষা ক্যাডারের সকল স্তরের বেতন বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার সদস্য এটি উপভোগ করতে পারছেন না। শিক্ষকরা তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে বলেছেন, এখনও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড হতে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপকরা পঞ্চম গ্রেড হতে চতুর্থ গ্রেডে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান, যা বৈষম্যমূলক। ৫০ শতাংশ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। এ বৈষম্য নিরসনের দীর্ঘদিনের চেষ্টা, ১৯৮৪ সালের এনাম কমিশন, ১৯৮৭ সালের সচিব কমিটির সুপারিশ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের চাকরি ও বেতন কমিশনের কাছে আবেদন সত্ত্বেও অধ্যাপকদের বেতন গ্রেড চতুর্থ গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়নি। উল্টো সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বন্ধ করে দেয়ায় শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেড হতে অবসরে যাবেন। অন্যদিকে পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় শিক্ষা ক্যাডারের অনেকেই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল না থাকায় এখন সহযোগী অধ্যাপকদের পঞ্চম গ্রেড হতে অবসরে যেতে হবে। প্রাপ্য মর্যাদায় উন্নীত না করে স্কেল ও পদ অবনমনে শিক্ষকরা মর্মাহত। শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, পদ ও স্কেল অবনমনের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেডে নির্দিষ্ট করে, শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন অধিদফতর ও শিক্ষা প্রকল্পের তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম গ্রেডে অন্য ক্যাডার হতে পদায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারী কলেজে বুধবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন শিক্ষকরা। বেতন বৈষম্য নিরসন ও মর্যাদা ফিরে পাবার দাবিতে ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, চ্ট্টগ্রাম, ঢট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির শিক্ষকরা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ব্যানারে কর্মসূচী পালন করেন তারা। এ সময় তারা ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বৈষম্য নিরসনের দাবি অগ্রাহ্য করে অধ্যাপকদের ও সহযোগী অধ্যাপকদের বেতন স্কেল অবনমনের প্রতিবাদ এবং সিলেকশন গ্রেড-টাইম স্কেল পুনর্বহাল ও স্কেল আপগ্রেডের দাবি জানান। শিক্ষক অসন্তোষে ক্ষুব্ধ প্রায় বিসিএস ক্যাডারের ১৫ হাজার শিক্ষক কর্মকর্তা। দেশের সকল সরকারী কলেজ ছাড়াও শিক্ষকরা, সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ (টিটি) কলেজ, গবর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট, শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রকল্পে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলছিলেন, ২৭০ সরকারী কলেজ, তিনটি আলিয়া মাদ্রাসা, ১৪ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ও ১৬ কমার্শিয়াল কলেজে এ কর্মবিরতি চলেছে শান্তিপূর্ণভাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে কলেজের অধ্যাপকরা (সর্বোচ্চ পদ) চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। সিলেকশন গ্রেড থাকায় এতদিন আংশিক অধ্যাপক গ্রেড-৩ এ যেতে পারতেন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়ায় এখন এই পথ বন্ধ হয়ে গেল। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গ্রেড-৫ থেকে পদোন্নতি পেয়ে সরাসরি গ্রেড-৩ এ উন্নীত হন। অথচ শিক্ষকদের বেলায় গ্রেড-৫ থেকে পদোন্নতি হওয়ার পর গ্রেড-৪ এ উন্নীত করা হয়। এই বৈষম্য নিরসনেরও দাবি করে আসছেন তাঁরা। কিন্তু সেটা নিরসন না করে উল্টো সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় শিক্ষকরা আরও বৈষম্যের শিকার হবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ২৭২ সরকারী কলেজ, ১৪ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি), ১৬ সরকারী কমার্শিয়াল কলেজ ও চারটি সরকারী মাদ্রাসা-ই-আলিয়া রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ আছে ১৫ হাজার ২৪৬টি। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ ৬৩৪, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ৪০৩, সহকারী অধ্যাপক চার হাজার ২১৪ ও প্রভাষকের পদ সাত হাজার ৯৯৫। ইউজিসি অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটির অভিষেক ॥ ইউজিসি অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান হলো সোমবার। ইউজিসি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ মোহাব্বত খান, অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম, অধ্যাপক ড. মোঃ আখতার হোসেন, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা ও অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম।
×